ভিডিও

ঘূর্ণিঝড় আতঙ্কে হাতিয়ার লাখো মানুষ, প্রস্তুত ৪৬৬ আশ্রয়কেন্দ্র

প্রকাশিত: মে ২৫, ২০২৪, ০৭:৩৩ বিকাল
আপডেট: মে ২৫, ২০২৪, ০৯:৩৮ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ ক্রমেই উপকূলের দিকে আসছে। নিম্নচাপটি যেকোনো সময় ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে নোয়াখালীর হাতিয়া উপকূলে আঘাত হানার কথা বলা হচ্ছে। সেইসঙ্গে প্রাণহানিও ঘটতে পারে। এই খবরে দুশ্চিন্তায় আছেন উপকূলের লাখো মানুষ। 

তবে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সম্ভাব্য এই ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় নোয়াখালীর পাঁচ উপকূলীয় উপজেলায় ৪৬৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি উপকূলে দুর্যোগকবলিতদের সহযোগিতার জন্য রেড ক্রিসেন্ট ও সিপিপির আট হাজার ৯১০ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেইসঙ্গে জরুরি সহায়তার জন্য ১৬ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা, ৩১৯ মেট্রিক টন চাল, ৬৬৩ প্যাকেট শিশুখাদ্য ও আট হাজার ২২০ কেজি গোখাদ্য মজুত আছে। 

শনিবার (২৫ মে) দুপুর সাড়ে ১২টায় নোয়াখালী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কনফারেন্স কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভায় এসব তথ্য জানান ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদ হাসান খান।

জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জাহিদ আহসান খান, সিপিডির কর্মকর্তা রুহুল আমিন, জেলা রেড ক্রিসেন্টের সহকারী পরিচালক নুরুল করিমসহ সব দফতরের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৮৯০ সালের দিকে মেঘনা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছিল হাতিয়ার বহু জনপদ। পরবর্তী সময়ে তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি ভূমি ফিরিয়ে দিয়েছে মেঘনা। বর্তমানে মেঘনার চারপাশে অন্তত ৩০টি চর জেগে উঠেছে। এসব চরে হাজার হাজার একর জমি এখন দৃশ্যমান। যেখানে লক্ষাধিক মানুষজন বসবাস করেন। ইতোমধ্যে বসতি গড়ে উঠেছে চরঘাসিয়া, ঢালচর ও চরআতউরসহ কয়েকটি চরে।

চর মোহাম্মদ আলী, দমারচর, চরজোনাক, চরগাঙ্গুরিয়া, চর নুরুল ইসলাম, চর প্রিয়া ও চরওছখালিসহ কয়েকটি চরে ধান চাষের পাশাপাশি রয়েছে গরু, মহিষ ও ভেড়ার পাল। প্রাকৃতিক দুর্যোগে চরগুলো কয়েক ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেলে নৌকা ও গাছে অবস্থান নিয়ে মানুষ রক্ষা পেলেও প্রাণহানি হয় পশুগুলোর। জোয়ারে প্লাবিত হওয়ায় একাধিকবার ধান চাষ করলেও ফলন মিলে একবার। নতুন জেগে উঠা এসব চরের একটিতেও নেই কোনও বেড়িবাঁধ। ফলে দুর্যোগের নাম শুনলেই আতঙ্কে থাকেন চরের মানুষ।আতঙ্কের কথা জানিয়ে চরঘাসিয়ার বাসিন্দা ফখরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুর্যোগ এলে আমরা আতঙ্কে থাকি। চোখে ঘুম আসে না। নদীর দিকে তাকিয়ে থাকি, মনে অজানা ভয় থাকে। চরের চারপাশে কোনও বাঁধ নেই। স্বাভাবিক জোয়ারেই চরে পানি উঠে, সেখানে ঘূর্ণিঝড় এলে সব ডুবে প্লাবিত হবে।’

বন বিভাগের তথ্যমতে, নতুন করে জেগে ওঠা চরগুলোর মধ্যে চরঘাসিয়ার আয়তন পাঁচ হাজার এক একর, ঢালচর চার হাজার, চরআতউর পাঁচ হাজার ৬৮৩, চর মোহাম্মদ আলী এক হাজার ১৭১, দমারচর ছয় হাজার ৩৬০, চর আয়েশা পাঁচ হাজার ২১৩, চরগাঙ্গুরিয়া ১০ হাজার দুই, চর নুরল ইসলাম ১০ হাজার তিন, চর প্রিয়া দুই হাজার ৯৯৯, চর ওছখালি সাত হাজার দুই, চর ইউনুস তিন হাজার ৭০০, নতুন চর ইউনুস ৭০০, চরকমলা ১৩ হাজার ৩৩৯, চর ওসমান পাঁচ হাজার ৫০০, চরমুয়িদ তিন হাজার ৩০০, চর কবিরা দুই হাজার, চরকালাম আট হাজার ৭৮৫, খাজার চর চার হাজার ৫০০, চর রৌশন চার হাজার ৫০০ এবং চর জোহান পাঁচ হাজার ৭০০ একর। এর মধ্যে প্রায় সবগুলো চরের ৪৫ হাজার একর জমি উদ্যানের আওতায় আনা হয়েছে। নতুন জেগে উঠা চরগুলোতে ধাপে ধাপে বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।’

দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানালেন জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘নতুন এসব চর অনেকটা দুর্গম। তবু বিশেষ ব্যবস্থায় এসব চরের বিষয়ে আমরা খোঁজখবর রাখছি। সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।’

আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপটি শুক্রবার মধ্যরাতে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি শনিবার যেকোনো সময় ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এর নাম হবে ‘রেমাল’। নামটি ওমানের দেওয়া, এর অর্থ ‘বালু’। গভীর নিন্মচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে সেটি ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে’ পরিণত হতে পারে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে রাতে আঘাত হানতে পারে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS