ভিডিও

প্রত্যয় স্কিম বাতিল না হলে ঢাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিতের হুঁশিয়ারি

প্রকাশিত: মে ২৬, ২০২৪, ০৭:২৯ বিকাল
আপডেট: মে ২৬, ২০২৪, ০৭:২৯ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্তকে বৈষম্যমূলক বলে মনে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতি। সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিম আগামী ১ জুলাইয়ের মধ্যে বাতিল করা না হলে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম স্থগিতের হুঁশিয়ারির ঘোষণা দিয়েছেন তারা। এছাড়া ধাপে ধাপে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবেন শিক্ষকরা।

রবিবার (২৬ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক মানববন্ধনে এ ঘোষণা দেন ঢাবি শিক্ষক সমিতির নেতারা।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘শিক্ষকরা আত্মপরিচয়, আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচে। সেখানে যখন সমস্যা হয়, তখন আমাদের প্রতিবাদ করতে হয়। প্রত্যয় স্কিমের বিরুদ্ধে ১০৬১ জন শিক্ষক স্বাক্ষর করেছেন। তারাকেও এ ধরনের বৈষম্যমূলক স্কিম গ্রহণ করবেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি আজ মানববন্ধন করছে। দাবি না মানা হলে পর্যায়ক্রমে আমরা আন্দোলন করবে। কর্মবিরতিসহ আরও কঠোর আন্দোলন করা হবে।’

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জিনাত হুদা বলেন, ‘কেউ যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে বিশ্ববিদ্যায়কে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাহলে কারা সেই শক্তি সেটি ক্ষতিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে বলে মনে করে ঢাবি শিক্ষক সমিতি। সব শিক্ষক আজ সংগ্রামে আছে, বাঁচা-মরার লড়াইয়ে আছে।’

কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, ‘আগামীকালের মধ্যে আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে আগামী ২৮ মে সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ২ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করবো। এরপরও দাবি না মানা হলে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে সব শিক্ষকের ম্যান্ডেড নিয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। ৩ জুনের মধ্যে সমস্যা সমাধান না হলে ৪ জুন আবারও সবার নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে অর্ধবেলা কর্মবিরতি পালন করবে ঢাবির শিক্ষকরা। তবে এ সব কর্মসূচিতে পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত থাকবে না। যেহেতু জুন মাসে বাজেট হবে আমরা অপেক্ষা করবো এবং দেখবো এই স্কিমটি বাতিল করা হয় কিনা। প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহার করা না হলে ১ জুলাই থেকে ঢাবির সব ক্লাস বন্ধ হবে, পরীক্ষা স্থগিত হবে, কোনও ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চলবে না।’

টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা হয়েছিল একটি ভালো উদ্দেশ্যে। যারা পেনশনের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না, তাদের পেনশনের ব্যবস্থা করার জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু হঠাৎ আমরা দেখলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ গবেষণা সংস্থাগুলোকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর কারণটা কী? প্রত্যয় স্কিমের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আজ রাজপথে নেমেছে। তাদের রাজপথে নামিয়ে আনাই কি প্রত্যয় স্কিমের উদ্দেশ্য?’

তিনি বলেন, ‘ঢাবি শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদরা একটি সমীক্ষা করেছেন, সেখানে দেখানো হয়েছে প্রত্যয় স্কিম কীভাবে শিক্ষকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। বলা হচ্ছে, ২০২৪ সালের ১ জুলাইয়ের পরে যাদের নিয়োগ হবে তাদের জন্য এটি কার্যকর হবে। কিন্তু তারা হয়তো জানেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা প্রমশন হচ্ছে নতুন নিয়োগ। স্কিমটি এখন পর্যন্ত যে অবস্থায় আছে সে ক্ষেত্রে প্রতি নিয়োগেই এই স্কিম বাস্তবায়িত হবে। অর্থাৎ লেকচারার থেকে সহকারী, সহকারী থেকে সহযোগী, সহযোগী থেকে অধ্যাপক প্রতিটি আলাদা নিয়োগেই এই স্কিম বাস্তবায়িত হবে। আমাদের অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, এই নীতি বাস্তবায়িত হলে ঢাবিসহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আর্থিকভাবে বঞ্চিত হবেন।’

সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আগের চারটি স্কিমের সঙ্গে প্রত্যয় স্কিম নামে একটি প্যাকেজ চালু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে সব ধরনের স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ২০২৪ সালের ১ জুলাই পরবর্তী সময়ে যোগ দেওয়া কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত হবেন। সার্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপনকে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তার আওতামুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য সুপার গ্রেড কার্যকর এবং স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবি জানিয়েছে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দের এই সংগঠন।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন– শিক্ষক সমিতির কার্যকরী পরিষদের সদস্য অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এম ওহিদুজ্জামান, টেলিভিশন ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিউল আলম ভূঁইয়া, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফা কাউসার, শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মামুন, শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. মিজানুর রহমান, সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী, জসীমউদ্দিন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহীন খান, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ আব্দুর রহিম প্রমুখ।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS