ভিডিও

নাটোরের চার যুবক লিবিয়ায় জিম্মি মুক্তিপণ দাবি ৪০ লাখ টাকা

প্রকাশিত: জুন ০৭, ২০২৪, ০৭:৫৫ বিকাল
আপডেট: জুন ০৮, ২০২৪, ০১:০১ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি : নাটোরের গুরুদাসপুরের চার প্রবাসী যুবককে লিবিয়ায় জিম্মি করে পরিবারের কাছে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে। প্রায় দুই বছর যাবৎ লিবিয়ায় বিভিন্ন কাজে শ্রমিক হিসেবে নিয়োজিত ছিল ওই চার যুবক। গত ছয়দিন যাবৎ মুক্তিপণের দাবিতে জিম্মি যুবকদের পরিবারের কাছে শারীরিক নির্যাতনের ভিডিও পাঠাচ্ছে অপহরণকারীরা। জিম্মি থাকা ওই চার যুবকের বাড়ি গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের বিয়াঘাট চরপাড়া গ্রামে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে প্রবাসী চার যুবকের পরিবার।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুই বছর আগে বিয়াঘাট চরপাড়া গ্রামের মো. শাজাহান প্রাং এর ছেলে মো. সোহান প্রাং (২০), মো. তয়জাল শেখের ছেলে মো. সাগর হোসেন (২৪), মৃত শুকুর আলীর ছেলে নাজিম আলী (৩২) ও ইনামুল ইসলামের ছেলে মো. বিদ্যুৎ হোসেন (২৬) লিবিয়ায় কাজের জন্য যায়। সকলেরই পরিবার জমি বন্ধক, গরু বিক্রি ও ঋণ করে সন্তানদের বিদেশে পাঠিয়েছিল। দুই বছরে প্রতি মাসে ১৫-২০ হাজার করে কাজের প্রায় ২ লাখ টাকা পাঠিয়েছে। অভাবের সংসারেও হতদরিদ্র পরিবারগুলো প্রবাসী সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল। প্রবাস থেকে উপার্জিত টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনবে ভেবেই ঋণ করে হলেও ছেলেদের বিদেশে পাঠিয়েছিল স্ব স্ব পরিবার।

গত ২ জুন লিবিয়া থেকে ওই চার প্রবাসীর পরিবারের ‘ইমু’ নম্বরে মোবাইল ফোনে কল আসে। রিসিভ করতেই বলা হয় চার যুবককে তারা অপহরণ করেছে। যারা অপহরণ করেছে তারাও বাংলাভাষী। তবে তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।  ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ না দেওয়া হলে তাদেরকে মেরে ফেলা হবে। এমন খবরে পরিবারের সদস্যরা স্তব্ধ হয়ে যান। তারপর থেকেই ‘ইমু’ নম্বরে জিম্মি যুবকদের শারীরিক নির্যাতনের ভিডিও পাঠানো হয়। টাকা দিতে না পারলে নির্যাতনের মাত্রা প্রতিদিন বাড়তে থাকবে বলেও জানায় অপহরণকারীরা।

কথা হয় লিবিয়ায় জিম্মি প্রবাসী যুবক সোহানের বাবা শাজাহান প্রাং এর সাথে। তিনি জানান, গত রোববার তার মোবাইল ফোনের ‘ইমু’ নম্বরে লিবিয়া থেকে কল আসে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার ছেলে সোহান বলছিলো,‘মা বাঁচাও, বাবা বাঁচাও, আমাকে অপহরণ করে নিয়ে আসছে কারা যেন, বলতেছে ১০ লাখ টাকা দিতে হবে, না দিলে মেরে ফেলবে, এবারের মত আমাকে বাঁচিয়ে আমার জীবন ভিক্ষা দাও মা’। তারপর ছেলে সোহানকে একটি রুমের মধ্যে বেঁধে রেখে মারধরের ভিডিও পাঠায়। দুই বছর পূর্বে জমি বন্ধক ও ঋণ করে প্রায় ৪ লাখ টাকা খরচ করে লিবিয়াতে পাঠিয়েছেন ছেলেকে। দুই বছরে প্রতি মাসে ১৫-২০ হাজার করে প্রায় ২ লাখ টাকা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ঋণ পরিশাধ করতে পারেননি তারা। এখন আবার ছেলেকে জিম্মি করে মুক্তিপণ চাচ্ছে ১০ লাখ টাকা। তাদের ঘরবাড়ি-ভিটে মাটি বিক্রি করলেও এত টাকা হবে না। এখন ছেলেকে কিভাবে উদ্ধার করবেন। তিনি সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন তার ছেলেকে উদ্ধার করার জন্য।’

জিম্মি থাকা আরেক যুবক নাজিমের স্ত্রী নাদিরা বেগম জানান,‘এখনও বৃষ্টি হলে ঘরের চালা দিয়ে পানি পড়ে। সংসারে সচ্ছলতা ফিরিে আনার জন্য অনেক আশা নিয়ে স্বামীকে ঋণ করে ৪-৫ লাখ টাকা খরচ করে প্রবাসে পাঠিয়েছেন। এখন সকল আশা সকল স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে। স্বামীকে অপহরণকারীদের কাছ থেকে উদ্ধার করতে হলে দিতে হবে ১০ লাখ টাকা। বাড়িতে ঠিকমত চাল থাকে না। অনেক সময় না খেয়ে থাকতে হয়। কিভাবে ১০ লাখ টাকা দিয়ে স্বামীকে তিনি ও তার পরিবার উদ্ধার করবেন। তার কোলে একটি শিশু সন্তান রয়েছে। আরো এক সন্তানের বয়স ১২ বছর। বৃদ্ধ শাশুড়িকে ও সন্তানদের নিয়ে স্বামীর এমন বিপদ মূহুর্তে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। স্বামীকে উদ্ধারের জন্য তিনি ও তার পরিবার সকলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।’
জিম্মি প্রবাসী যুবক সাগরের মা ছকেরা বেগম বলেন,‘তিনি বিধবা। স্বামী মারা গেছে অনেক আগেই। সরকারি টিআর কাবিটা প্রকল্পের নারী শ্রমিক হিসেবে কাজ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তিনিও নিজের জমানো শেষ সম্বল ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন দুই বছর আগে। ঋণ এখনও পরিশোধ করতে পারেননি তিনি ও তার ছেলে। এখন আবার ছেলেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করছে ১০ লাখ টাকা। সরকার কিছু না করতে পারলে তার কিডনি বিক্রি করে হলেও ছেলেকে উদ্ধার করতে চান।’

বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান সুজা জানান, লিবিয়ায় তার গ্রামের চার যুবককে অপহরণ করা হয়েছে বলে তিনি প্রতিবেশীদের কাছে শুনেছেন। তবে জিম্মি থাকা প্রবাসী যুবকদের পরিবারের লোকজন মনে করেছে জনপ্রতিনিধি, পুলিশ,সাংবাদিকদের বিষয়টি জানালে তাদের সন্তানদের ক্ষতি হবে। এ কারণে হয়তো তারা জানায়নি। তবে তিনি নিজে থেকেই দ্রুত তাদেরকে সরকারের সহযোগিতা নেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।’

এদিকে এখন পর্যন্ত লিবিয়ায় জিম্মি থাকা ওই চার যুবক থানা পুলিশসহ কাউকেই অপহরণ ও মুক্তিপণের বিষয়টি জানায়নি। এ বিষয়ে গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. উজ্জল হোসেন জানান, এ সংক্রান্ত কোন ঘটনা তাকে কেউ এখন পর্যন্ত জানায়নি। তবে ওই পরিবারগুলোর দ্রুত সরকারের উর্ধ্বতন অফিসে যোগাযোগ করা উচিত।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS