ভিডিও

নীলফামারীর সড়কেই চলছে ধান মাড়াইসহ শুকানোর কাজ

প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২৪, ০৬:২০ বিকাল
আপডেট: জুন ১১, ২০২৪, ০৬:২০ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

নীলফামারী প্রতিনিধি : চাতালে পরিণত হয়ে পড়েছে নীলফামারীর সড়ক-মহাসড়কগুলো। দেখে বোঝার উপায় নেই কোনটি সড়ক আর কোনটি চাতাল কিংবা খলান। সড়ক-মহাসড়ক দখল করে মেশিন বসিয়ে ধান মাড়াইসহ ধান-খড়,বিচালী শুকানোর কাজ করছেন কৃষক।

জেলার ছয় উপজেলার প্রত্যেকটি সড়ক-মহাসড়ক এখন কৃষককের ধান,খড় আর বিচালীর দখলে। এমন অবস্থায় প্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা। তবে ক্ষেতে বা বাড়ির আশপাশে খলান না থাকায় কষ্ট করে আবাদ করা ফসল সড়ক-মহাসড়কে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাটাই-মাড়াইসহ শুকাতে বাধ্য হচ্ছেন বলে দাবি কৃষকদের।

অপরদিকে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা দ্রুত উদ্যোগী না হলে এসব সড়কে দুর্ঘটনাসহ প্রাণহানির ঘটনা বাড়বে বলে দাবি করেন যানবাহন চালকরা। এদিকে সড়ক-মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখাতে বিশেষ উদ্যোগের কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন।

নীলফামারী জেলার গ্রামীণ রাস্তা থেকে শুরু করে সড়ক-মহাসড়ক-আঞ্চলিক মহাসড়কে ফসল মাড়াই থেকে শুকানো আর বিচালী স্তুপ করে রাখার দৃশ্যটা দেখা মিলে প্রতিটি শস্য মৌসুমে। সড়কগুলো দখল করে খলান কিংবা চাতালে পরিণত করে ধান মারাই থেকে শুরু করে ধান ও খড় শুকাতে ব্যস্ত কৃষককেরা। শুধু বোরো আর আমন মৌসুমেই নয় এসব সড়ক কৃষকদের দখলে থাকে ভুট্টা,গম ও পাট মৌসুমেও।

জেলার ব্যস্ততম নীলফামারী-সৈয়দপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক, নীলফামারী-ডোমার আঞ্চলিক মহাসড়, নীলফামারী-ডিমলা, জলঢাকা-কিশোরগঞ্জ সড়কসহ ছয় উপজেলার গ্রামীণ পাকা সড়ক থেকে কাঁচা সড়ক পর্যন্ত কৃষকদের এমন কর্মযজ্ঞ চলে প্রতিটি শস্য মৌসুমজুড়ে। আইন অনুযায়ী সড়ককে ফসল,খড় বা বিচালীসহ অন্য কোন পণ্য শুকানো নিষেধ থাকলেও তা মানছেন না কৃষককেরা।

সড়কগুলোর ওপর ধান, গম, ভুট্টা মাড়াইসহ ধান,গম,ভুট্টা ও খড় শুকানো এবং বিচালী স্তুপ করে রাখায় এসব সড়কে ঘটছে প্রায়ই সড়ক দুর্ঘটনা। গত সোমবার সকাল থেকে সরেজমিনে জেলার ব্যস্ততম নীলফামারী-সৈয়দপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক, নীলফামারী-ডোমার আঞ্চলিক মহাসড়,ডোমার-চিলাহাটি সড়ক, ডোমার-ডিমলা সড়ক, নীলফামারী-ডিমলা, জলঢাকা-কিশোরগঞ্জ সড়কে চলাচল করে ছোট-বড়,ভারী,মাঝাড়ি ও হালকা যানবাহনসহ সাধারণ মানুষ।

এসব সড়কে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বোরো ধান মাড়াই থেকে শুরু করে ধান ও খড় শুকানোর কাজ করছেন কৃষক-কৃষানীরা। ২৩ কিলোমিটারের নীলফামারী-ডোমার আঞ্চলিক মহাসড়ক দখল করে সড়কের ওপর কৃষক-কৃষানীরা ধান মাড়াই করছেন, কেউ বা ধান ও খড় শুকাচ্ছেন, আবার কেউ বা ধান-খড় উল্টিয়ে দিচ্ছেন।

কেউ কেউ আবার সড়কের দুই ধারে বিচালী স্তুপের কাজ করছেন। শুকাতে দেওয়া ধানের ওপর দিয়ে যাতে যানবাহন যেতে না পারে সেই জন্য ইট, বাঁশ বা কাঠের টুকরো দিয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে সড়ক। সড়কের দুই পাশে ধান ও খড় শুকানোয় সংকুচিত হয়ে পড়েছে সড়কটি।

এতে ওই সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে যানবাহনগুলোকে। একই অবস্থা ২৩ কিলোমিটারের নীলফামারী-সৈয়দপুর অঞ্চলিক মহাসড়ক, ২২ কিলোমিটারের নীলফামারী-জলঢাকা, ২৩ কিলোমটিারের নীলফামারী-সৈয়দপুর সড়ক এমনকি জেলার ছয় উপজেলার অন্যান্য সড়কগুলো।

সকাল থেকে ডোমার বামুনিয়া এলাকায় ডোমার-ডিমলা সড়কের ওপর মেশিন বসিয়ে ধান মাড়াই করছেলিন ওই এলাকার কৃষক আফসার আলী (৫২)। এসময় তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন,‘ প্রায় ৭০ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছি।

ইতোমধ্যে সব ধান কাটা হয়েছে। এতোগুলো ধান শুকাবো কোথায়?  ক্ষেতসহ বসতবাড়ির আশপাশে কোথাও ধান শুকানোর খলান (বড় আকারের উঠান) নেই। ধান মাড়াই করে শুকাতে না পারলে সব নষ্ট হয়ে যাবে। খলান না থাকায় সড়কের ওপর ধান মাড়াইসহ শুকাতে হচ্ছে। যদি খলান থাকতো তহলে কি আর সড়কে শুকাতাম!

ওই সড়কে দিয়ে অটোরিকশায় যাত্রী নিয়ে ডোমার শহরে আসছিলেন চালক মশিউর রহমান (৪০) বলেন, সড়কে ধান,ভুট্টা, গম এবং খড় শুকানো হচ্ছে। এতে করে সড়কে চরম ঝুঁকি নিয়ে আমাদের চলাচল করতে হচ্ছে। চলন্ত গাড়ি থামতে ব্রেক চাপলে ধান আর খড়ে স্লিপ করে দুর্ঘটনায় পড়তে হচ্ছে।

এদিকে সড়কে ধান-খড় শুকানোর কারণে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে এবং ছোট খাটো দুর্ঘটনা ঘটছে বলে স্বীকার করেন জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ। তিনি বলেন, কৃষি বিভাগকে স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে কৃষকদের সচেতন করতে অনুরাধ করা হচ্ছে যাতে সড়কে ধান-খড় বা এসব কৃষিপণ্য শুকাতে না দেয়।

তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এস. এম. আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, সড়কে ধান ও খড় শুকানোর কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটছে। বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। সরকারের পাশাপাশি বড় বড় কৃষক বা সামর্থ্যবান কৃষকরাও এলাকাভিত্তিক খলান বা চাতাল তৈরি করতে পারেন। তাহলে আর ঝুঁকি নিয়ে সড়কে কৃষিপণ্য শুকাতে হবে না।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS