ভিডিও

বগুড়ার জোড়া খুন, ভুল টার্গেটে মেরে ফেলা হয় শরিফ ও রুমনকে?

প্রকাশিত: জুন ২২, ২০২৪, ১০:৫১ রাত
আপডেট: জুন ২৩, ২০২৪, ১২:৫৭ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

স্টাফ রিপোর্টার : ঈদের দিন রাতে বগুড়ার নিশিন্দারা চকরপাড়ায় নৃশংসভাবে খুন করা হয় ১৮ বছরের যুবক শরিফ শেখ আর ১৭ বছর বয়সী রুমনকে। সন্তান হারিয়ে তাদের দু’পরিবারে  এখনও চলছে শোকের মাতুম। তাদের পরিবার আক্ষেপ বলে কোন দোষই করেনি তাদের সন্তানরা। খুনিদের ভুল টার্গেটে পরিনত হয়েছে শরিফ আর রুমন।

দোষ করেছিল কিশোর আদিত্য ও তার বন্ধুরা। শহরের হাকির মোড়ে আদিত্যের মোটর সাইকেলের সাথে আওয়ামী লীগ নেতা সার্জিল আহমেদ টিপুর প্রাইভেট কারে ধাক্কা লেগেছিল। এনিয়ে প্রাইভেট কারে বসা টিপু ও তার বড় ভাই মিঠুর মেয়ে ও ছেলের সাথে ঝামেলা হয়েছিল আদিত্য ও তার বন্ধুদের সাথে। কিন্তু মধ্যরাতে নিশিন্দারা চকরপাড়ায় হামলা চালিয়ে গুলি করে আতংক সৃষ্টি করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলা হলো নিরীহ শরিফ ও রুমনকে।

নিহত শরীফের মা হেনা বেগম বলেন, তার ৪ ছেলে ও ৩ মেয়ের মধ্যে শরিফ ছিল সবার ছোট। এ জন্য সবার আদরের ছিল সে। এক সময় মাদ্রাসায় লেখাপড়া করা শরিফ ছিল পরপোকারি। মানুষের বিপদে ছুটে যেত। বড় ভাই রিপন শেখের থাই এর দোকানে সে কাজ করতো। তার স্বপ্ন ছিল আলাদা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে প্রতিষ্ঠিত হওয়া।

এ জন্য সে তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নেয়। এলাকায় চাল ও গ্যাস  সিলিন্ডার বিক্রির দোকান দেওয়ার ইচ্ছে ছিল তার। একটি দোকান ভাড়া নিয়ে ডেকোরেশনও করেছিল। ঈদের দু’দিন পর ওই দোকান চালু করার কথা ছিল। তিনি এনজিও থেকে এই টাকা তুলে দিয়েছিলেন শরিফকে।

যেন সে ব্যবসা করে সংসারে সহযোগিতা করতে পারে। কিন্তু ঈদের দিনই তাকে এবং তার বন্ধু রুমনকে দুনিয়া থেকে সরে দিল টিপু ও কাউন্সিলর হিমুসহ তাদের সহযোগীরা। শরিফের মা হেনা বেগম কান্নারত অবস্থায় বলেন, আসামিদের এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক যা দেখে  আর অন্য কেউ আর খুন করতে সাহস না পায়। তিনি তার ছেলে হত্যাকান্ডে জড়িতদের ফাঁসি চান।

নিহত শরিফের বড় ভাই রিপন বলেন, তার ছেলে শরিফের ওপর আগে থেকেই হিমু কাউন্সিলরের রাগ ছিল। কিছুদিন আগে হিমুর অফিস ভাঙ্চুর করা হয়েছিল। প্রতিশোধ নিতে সুযোগের অপেক্ষায় ছিল হিমু। টিপুর সাথে হাত মিলিয়ে হিমু শরিফ ও তার বন্ধু রুমনকে মেরে ফেললো। তিনি তার ছোট ভাই শরিফ হত্যাকান্ডে জড়িতদের ফাঁসি দাবি করেন।

এদিকে নিহত রুমনের নানী রুবি বেগম বিলাপ করতে করতে বলেন, কী দোষ করেছিল তার আদরের নাতি রুমন। দোষ করলো অন্যজন। আর ভুল টার্গেট করে মেরে ফেলা হলো রুমন ও তার বন্ধু শরিফকে। তিনি আহাজারি করে বলেন, যদি দোষই করে থাকতো তাহলে শাসন করলেই চলতো। হাত ও পা ভেঙে ফেলতে পারতো। তবুও রুমন বেঁচে থাকতো। কিন্তু টিপু ও তার সহযোগীরা দুটো জীবনই কেড়ে নিলো।

রুবি বেগম বলেন, আমরা বগুড়ার স্থায়ী বাসিন্দা নই। কিন্তু গত ৩০ বছর যাবত তিনি পরিবার নিয়ে বগুড়ার নিশিন্দারা চকরপাড়ায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে রয়েছি। রুমনের মা-বাবা ঢাকায় গার্মেন্টেস-এ চাকরি করেন। মাত্র ৭ বছর যখন রুমনের, তখন থেকেই সে তার কাছে লালিত-পালিত হচ্ছিল। রুমন সংসারের হাল ধরতে শহরের সাতমাথায় বাটা শো রুমের সামনে ভ্যানে করে কাপড় বিক্রি করতো।

সারাদিন কাপড় বিক্রি করার টাকা তার হাতে তুলে দিতো। রুমন আদুরে কন্ঠে তাকে ‘আপু’ বলে ডাকতো। কিন্তু প্রভাবশালী খুনিরা তার বুকের ধন কেড়ে নিল। তিনি কান্নারত অবস্থায় দু’হাত তুলে অভিশাপ দিয়ে বলেন, রুমনকে যারা মেরেছে তাদেরও যেন বুক খালি হয়। তিনি জড়িত ঘাতকদের ফাঁসি দাবি করেন।

অপরদিকে এই জোড়া হত্যাকান্ডের মামলার তদন্তে আর কোন অগ্রগতি হয়নি। এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন বগুড়া জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ সার্জিল আহমেদ টিপু ও বগুড়া পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিএনপি নেতা শাহ মো.মেহেদী হাসান হিমুসহ আরও ২৪ জন আসামি।

মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো,শাহিনুজ্জামান জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নতুন করে আর কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS