ভিডিও

বরগুনায় সেতু ভেঙে মাইক্রোবাস খালে পড়ে নিহত ১০

বিষাদে পরিণত আনন্দযাত্রা

নিহতদের মধ্যে ৭ জনই মাদারীপুরের হ ভেঙে পড়া 

প্রকাশিত: জুন ২২, ২০২৪, ১০:৫৩ রাত
আপডেট: জুন ২৩, ২০২৪, ১২:৪৩ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

বরগুনার আমতলীতে একটি ঝুঁকিপূর্ণ সংযোগ সেতু ভেঙে বরযাত্রীবাহী দুটি গাড়ি খালে পড়ে যায়। এ ঘটনায় নারী ও শিশুসহ ১০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়ন ও চাওড়া ইউনিয়নের ব্রিজ হলদিয়া হাট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 
জানা গেছে, শুক্রবার দুপুরে ভাগ্নির বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে ১৭ জন যাত্রী নিয়ে শনিবার দুপুরে ছেলের বাড়িতে আসার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সবাই নারী এবং শিশু। বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। নিহতের ১০ জনের মধ্যে ৭ জন শিবচর মাদরীপুরের বাসিন্দা এবং ২ জন স্থানীয় গুরুদল গ্রামের।
আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের গুরুদল গ্রামের মনির হাওলাদারের মেয়ে হুমায়রা বেগমের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল শুক্রবার। ওই অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে দুপুর দেড়টার সময় তারা মাইক্রো যোগে আমতলী আসছিল। পথিমধ্যে মাইক্রোটি হলদিয়া বাজার সংলগ্ন লোহার সেতু পার হওয়ার সময় মাঝ বরাবর ভেঙে কচুরিপানায় ভরা খালে তলিয়ে যায়। মাইক্রোবাস পড়ে যাওয়ার শব্দ পেয়ে স্থানীয়রা উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসে। মুষলধারে বৃষ্টি এবং খালে নেমে উদ্ধারের কোনো সুযোগ না থাকায় উদ্ধার কাজে বিলম্ব ঘটনায় অনেকেই তখন পানিতেই প্রাণ হারান। মাইক্রোবাসটি পানির উপরে তোলার পর একের পর এক বেরিয়ে আসে নারী-শিশুসহ ৯টি লাশ। ৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও এখনো নিখোঁজ রয়েছে ৩ জন।
উদ্ধার হওয়া লাশ হলো শিবচর মাদরীপুরের মুনী বেগম (৪০), তার ছোট মেয়ে তাহিয়া (৭), বড় মেয়ে তাসফিয়া (১১), একই এলাকার ফরিদা বেগম (৫৫), রাইতি (৩০), ফাতেমা আক্তার (৪০), রুবী বেগম (৪০), হলদিয়া গ্রামের জহিরুল ইসলামের মেয়ে হৃদি (৫), তার মা জাকিয়া বেগম (৩০)। জীবিত উদ্ধার হওয়া ৪ জন হলেন মাহবুব খান, সোহেল খান, সুমা আক্তার ও দীশা আক্তার তারা সবাই শরিয়তপুরের বাসিন্দা।
জীবিত উদ্ধার হওয়া মাহবুব খান বলেন, মাইক্রোবাসটি লোহার সেতুর মাঝ বরাবর আসার পর আকস্মিক ধসে কচুরিপানায় ভর্তি খালে ডুবে যায়। এরপর আর কিছুই বলতে পারি না। জ্ঞান ফিরে দেখি হাসপাতালে। আল্লায় মোগো বাঁচাইলেও সব শ্যাষ অইয়া গ্যাছে। 
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছেছি। নিখোঁজদের উদ্ধার করতে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা কাজ করছেন। 
বরগুনায় নিহতদের মধ্যে ৭ জনই মাদারীপুরের : বরগুনার আমতলীতে বিয়ে খেতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার নারী-শিশুসহ ৯ জন। তাদের মধ্যে ৭ জনই সাবেক সেনাসদস্য মাহাবুবুর রহমান সবুজের পরিবারের সদস্য। দুর্ঘটনার খবর শিবচরের ভদ্রাসন গ্রামে পৌঁছানোর পর থেকে শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে এলাকা। স্বজন ও প্রতিবেশীরা ভিড় করছেন সবুজের বাড়িতে। নিহত হয়েছেন মাদারীপুরের শিবচরের সাবেক সেনাসদস্য মাহাবুবুর রহমান সবুজও। 
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার সকালে শিবচর থেকে মাহাবুব এবং তার পরিবারের সদস্যরা খালাতো বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বরগুনার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। গত শুক্রবার বরপক্ষ এসে বিয়ে করে নিয়ে যায়। নিহতদের আত্মীয় শুক্কুর আলী নামের এক যুবক বলেন, ‘বুধবার বিয়ের অনুষ্ঠানে তারা বরগুনা গেছিল। দুপুরে ব্রিজ ভেঙে সেখানে খালে পড়ে যায় তাদের মাইক্রোবাসটি। মাহাবুবের মা, ভাইয়ের স্ত্রী ও মামার পরিবারের মোট ৭ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে।’ 
দুলাল মাতুব্বর নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘পুরো গ্রাম শোকে স্তব্ধ। দুই পরিবারের মোট ৯ জন সদস্য মারা গেছে। আমরা খবর পেয়ে মাহাবুবের বাড়িতে এসেছি। ওদের পরিবারের কেউ বাড়িতে নেই। সবাই ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিল। এখন বাড়িতে কেউ নেই।’ 
ভদ্রাসন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম ব্যাপারী বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েই বাড়িতে এসেছি। আসলে এত বড় দুর্ঘটনায় আমরা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছি। এখন তাদের মরদেহ বাড়িতে আনার প্রস্তুতি চলছে বলে খবর পেয়েছি।’ 
ভেঙে পড়া সেতুটিতে ছিল সতর্কীকরণ নোটিশ : সেতুটিতে আগে থেকেই টাঙানো ছিল সতর্কীকরণ নোটিশ। আর পায়ে হাঁটার এই লোহার সেতুতে নির্দেশনা না মেনে মাইক্রোবাস চলার কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন বরগুনার আমতলী উপজেলার প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন। 
তিনি বলেন, এই লোহার সেতুটি ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বিএনপির জোট সরকারের আমলে নির্মিত হয়েছিল। প্রকল্পটির পরিচালক ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। পায়ে হেঁটে চলাচলের জন্য সেতুটি নির্মাণ করা হয়। প্রায় বিশ বছর আগে নির্মিত সেতুটিতে চলাচলে সতর্কতা নোটিশ টাঙানো ছিল। সেটি উপেক্ষা করার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
বর ও কনের বাড়িতে শোকের মাতম : মৃত্যুর ঘটনায় বর ও কনের বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। আমতলী উপজেলার কাউনিয়া ইব্রাহিম একাডেমি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামের মাসুম বিল্লাহ মনিরের মেয়ে হুমায়রা আক্তারের সঙ্গে একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমতলী পৌর শহরের খোন্তাকাটা এলাকার বাসিন্দা সেলিম মাহমুদের ছেলে ডা. সোহাগের বিয়ে হয়। সন্ধ্যা বাড়ি গিয়ে দেখা গেছে, বাড়িজুড়ে কান্নার রোল। মেহমানদের জন্য পাতিল ভরা খাবার। কিন্তু সেই খাবার খাওয়ার লোক নেই। কনের বাড়িতেও বইছে কান্নার মাতম।
বরের বাবা কাউনিয়া ইব্রাহিম একাডেমি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সেলিম মাহমুদ বলেন, ‘ঘটনা নিয়ে কিছু বলার ভাষা নেই। কনেপক্ষের লোকজনের জন্য সব আয়োজন ছিল। কিন্তু সবকিছু ভেস্তে গেল।’
কনের বাবা মাসুম বিল্লাহ মনির বলেন, ‘আমার কিছুই বলার নেই। আমি শ্বশুরবাড়ির মানুষকে কী জবাব দেব? আল্লায় কেন আমার ওপর এত বড় বিপদ দিলেন?’

 



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS