ভিডিও

মিয়ানমারে সংঘাতঃ অনুপ্রবেশের চেষ্টা, রোহিঙ্গাবোঝাই নৌকা ফিরিয়ে দিলো বিজিবি

প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০২৪, ০৭:৩৯ বিকাল
আপডেট: জুন ২৭, ২০২৪, ০৯:১৬ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

কক্সবাজার প্রতিনিধি : মিয়ানমারের রাখাইনে আরাকান আর্মি ও দেশটির সেনাবাহিনীর মধ্যেই তুমুল সংঘর্ষ চলছে। ওপারের বিস্ফোরণের বিকট শব্দে আতংকে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা। এ অবস্থায় ওপারে বসবাস করা সাধারণ রোহিঙ্গারা আতংকে এলাকা ছাড়ছে। নৌকায় করে নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে তারা। এমন শতাধিক রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুকে নিজ দেশে ফিরিয়ে দিয়েছেন বিজিবি সদস্যরা। বুধবার রাত ও  বৃহস্পতিবার সকালে নাফ নদী দিয়ে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালান বলে জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় একাধিক সূত্র। তবে এ বিষয়ে টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক বা সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সূত্র জানায়, মিয়ানমারের রাখাইনের মংডু শহর দখলে নিতে আরাকান আর্মি দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে চূড়ান্ত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। শহরটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে সেনাবাহিনীও। এ হামলার বিস্ফোরণের বিকট শব্দে তিনদিন ধরে কাঁপছে টেকনাফ সীমান্ত। অসমর্থিত সূত্রমতে, মিয়ানমারে এখনো সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে। এরমধ্য রাখাইনের বুথেডংয়ে আড়াই লাখ, মংডুতে তিন লাখ এবং বাকিরা আকিয়াবসহ অন্য টাউনে রয়েছে। বর্তমানে মংডুতে হামলা হচ্ছে। সেখানে অধিকাংশ রোহিঙ্গাদের বাস। তাদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশের টেকনাফে পালিয়ে আসার চেষ্টা চালাচ্ছে।

রাখাইন ও সীমান্তের স্থানীয় সূত্র বলছে, দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি রাখাইনের মংডু শহর নিয়ন্ত্রণে নিতে সামরিক বাহিনীর ওপর প্রবল হামলা চালাচ্ছে। শহরটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্থল, আকাশ ও নৌপথ থেকে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। এই গৃহযুদ্ধে রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের সুদাপাড়া, হাদিবিল, নুরুল্লা পাড়া, হাইর পাড়া, মুন্নী পাড়া, সাইরা পাড়া, ফাতনজা, ফেরানপ্রু, সিকদার পাড়া, হাঁড়ি পাড়া, হেতিল্লা পাড়ার বাসিন্দারা গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছে। এদের মধ্যে অনেকে সীমান্ত দিয়ে এপারে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় জড়ো হয়েছে। ফলে মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে টেকনাফে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে বাড়তে পারে মিয়ানমারের বিজিপি সদস্যদের অনুপ্রবেশও। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্যমতে, রাখাইনে দুই পক্ষের যুদ্ধে মংডু ও বুচিডংয়ে অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গা আটকা পড়েছে।

নাফ নদীতে মাছ আহরণ করা একাধিক জেলে ও জেটিঘাটের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নাফ নদীর টেকনাফ জেটিঘাটের শেষের অংশে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ কিছু রোহিঙ্গাকে জড়ো করে রাখেন বিজিবির সদস্যরা। পরে তাদের নৌকাসহ আবার মিয়ানমারের ফেরত পাঠানো হয়। তারা জানান, টেকনাফ জেটিঘাট, নাইট্যংপাড়া, দমদমিয়া, শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং, নাজিরপাড়ায় নাফ নদীর ওপারে মংডু শহরের নিকটবর্তী সীমান্তে হাজার হাজার রোহিঙ্গা জড়ো হয়েছে। সুযোগ পেলেই অনুপ্রবেশের চেষ্টায় রয়েছে তারা। তবে রোহিঙ্গারা যাতে নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য সীমান্ত-নাফ নদীতে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি-কোস্টগার্ড।

উখিয়ার আশ্রয় ক্যাম্পের কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, দুই পক্ষের গোলাগুলিতে অনেক রোহিঙ্গা মারা যাচ্ছে। এখন পাশের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ছাড়া তাদের যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। তাই যেকোনো সময় তারা সীমান্তের দিকে ছুটতে পারে। কিন্তু যারা এপারে আসতে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে, তাদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, মূলত রাখাইনে যেসব রোহিঙ্গা রয়েছে তাদের নিশ্চিহ্ন করতেই যুদ্ধের নামে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নাটক চলছে। আমি আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে অনুরোধ করবো, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস করতে সহযোগিতা করুন।

সীমান্ত পেরিয়ে রোহিঙ্গা আসা কিংবা এপারে আসা নৌকা ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বিজিবির স্থানীয় দায়িত্বশীলদের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে বিস্তারিত লিখে বিজিবি হেডকোয়ার্টারের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলামকে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। তবে তিনি কোনো উত্তর দেননি।

বিজিবির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকালে তিন হাজার ৩৫৪ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। পরে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠায় বিজিবি। তাদের মধ্যে ৮৪৮ জন নারী, ৭৪৯ শিশু ও এক হাজার ৭৫৭ জন পুরুষ রয়েছেন। আর তিন রোহিঙ্গাকে থানায় দেওয়া হয়।

সীমান্ত পরিস্থিতির বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আদনান চৌধুরী বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে শুনেছি রোহিঙ্গাবোঝাই কয়েকটি নৌকা নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশের টেকনাফ সীমান্তে অনুপ্রেবেশের চেষ্টা করে। আর বিজিবির সদস্যরা তাদের মিয়ানমারের ফেরত পাঠান। রাখাইনের ওপারে বিস্ফোরণের শব্দ টেকনাফে এখনো স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS