ভিডিও

শোকে পাথর রথযাত্রায় নিহত রঞ্জিতার পরিবারের সদস্যরা

দাদন ব্যায়সায়ীদের চাপে ৭ মাস যাবত বাড়ি ছাড়া রঞ্জিতা রাণীর স্বামী ও ছেলে

প্রকাশিত: জুলাই ০৮, ২০২৪, ০৯:৫৮ রাত
আপডেট: জুলাই ০৮, ২০২৪, ০৯:৫৮ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

মো: সাজেদুর রহমান সবুজ, শাজহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি : চার সন্তানের মা পঞ্চাশোর্ধ গৃহবধূ রঞ্জিতা রাণী। সন্তানদের বিয়ে হয়েছে। অস্বচ্ছল সংসারে তার দিন কাটছিল খেয়ে না খেয়ে। তার পরও ধর্ম কর্ম ছাড়তেন না। এ কারণেই প্রতিবছরের মত পূণ্যার্থী হিসেবে গতকাল রোববার যোগ দিয়েছিলেন বগুড়া ইস্কন মন্দির আয়োজিত রথযাত্রায়। সেখানে সৃষ্ট বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় মারা যান রঞ্জিতা রাণী। এসময় সাথে থাকা তার বড় মেয়ে চন্দনা রাণীও (৩৫) আহত হন।

রঞ্জিতা’র পরিবারে খোঁজ খবর নিতে আজ সোমবার (৮ জুলাই) দুপুরে গোহাইল ইউনিয়নের চেলো গ্রামের হিন্দুপাড়ায় সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, সামান্য দেড় শতক জমির উপর একটি জীর্ণশীর্ণ টিনের ঘর। ওই ঘরে থাকে রঞ্জিতার একমাত্র ছেলে সুনীল মোহন্ত ও তার স্ত্রী সন্তান। আর ঘরের বারান্দার এক কোণে বেড়া দিয়ে সেখানে স্বামীকে নিয়ে থাকতেন রঞ্জিতা।

তার তিন মেয়ে, এক ছেলে, ছেলের বউ এবং নাতি-নাতনীরা শোকে পাথর হয়ে বসে আছেন। তারা বলেন, এনজিও’র ঋণের কিস্তি আর দাদন ব্যবসায়ীদের চাপে বিগত ৭মাস যাবত বাড়ি ছাড়া রঞ্জিতা’র স্বামী ও ছেলে। তার উপর এই নির্মম দুর্ঘটনা পরিবারটিকে পুরোপুরি বিধ্বস্ত করে ফেলেছে। প্রতিবেশিরা জানায়, রঞ্জিতা রাণীর ৩ মেয়ে চন্দনা, বন্দনা ও অঞ্জনা। তাদের সবার বিয়ে হয়েছে।

আর একমাত্র ছেলে সুশীল মোহন্ত (২৫) তার বাবা সুদেব চন্দ্র মোহন্ত (৬০)’র সাথে কর্মকারের কাজ করে কোন রকমে সংসার চালাতেন। দিন শেষে কোন সঞ্চয় থাকতো না। তাই মেয়েদের বিয়ে দিতে পরিবারটি ঋণগ্রস্ত হয়। এক পর্যায়ে উপার্জনের টাকায় ঋণের কিস্তি দিতে না পেরে দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নেয়।

অবশেষে ঋণের চাপে পরিবার ছেড়ে ৭ মাস যাবত গা ঢাকা দিয়েছে রঞ্জিতা’র স্বামী ও ছেলে। মৃত্যুর সংবাদ শুনে তারা কিছু সময়ের জন্য বাড়িতে এসেছিল। নিজ ধর্মের নিয়মানুসারে রঞ্জিতার মরদেহ আজ সোমবার (৮ জুলাই) দুপুরে নিজ এলাকার শ্মশানে কবর দেওয়া হয়েছে। পরিবারের সামর্থ না থাকায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন দুপুরে দই চিড়া খাবারের ব্যবস্থা করেছিল।

এরপর ১১ দিনের মাথায় ফের আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশিদের খাওয়াতে হবে। এতে যেনতেন আয়োজন করতেও লক্ষাধিক টাকা দরকার। কিন্তু পরিবারের কোন সামর্থ নাই। তাই শেষকৃত্যানুষ্ঠানের ব্যবস্থাসহ ঋণ থেকে মুক্তি পেতে সমাজের সচেতন মহলের সহায়তা কামনা করেছেন অসহায় পরিবারটির সদস্যরা।

গোহাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আতোয়ার তালুকদার ফজু জানিয়েছেন, রথযাত্রায় বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় নিহত রঞ্জিতা রাণীর পরিবার ঋণের ভারে জর্জরিত। সুদের টাকার চাপে রঞ্জিতা’র স্বামী ও ছেলে গা ঢাকা দিয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। তিনি আরও বলেন, তার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি এলাকায় দাদন ব্যবসায়ীরা দাপটের সাথে সুদের কারবার করছে। এতে অনেক পরিবার নি:স্ব হয়ে পড়েছে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS