ভিডিও

বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী আনন্দ আশ্রম যেভাবে হয়ে গেল ইস্‌কন আনন্দ আশ্রম

প্রকাশিত: জুলাই ০৮, ২০২৪, ১০:৩৯ রাত
আপডেট: জুলাই ১০, ২০২৪, ১২:১৯ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়া শহরের সেউজগাড়িস্থ শত বছরেরও বেশি পুরাতন আনন্দ আশ্রম এখন ইস্‌কন আনন্দ আশ্রমে পরিণত হয়েছে। এক সময়ের আশ্রম এখন আর সেই আশ্রম নেই। এখানে আর আশ্রয় পান না ইস্‌কনের অনুসারী ছাড়া সনাতন ধর্মালম্বী শিক্ষার্থী কিংবা সাধারণ সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

একশ’ বছরের বেশি সময় আগে আনন্দ গোসাই নামের সাঁই ভক্ত এক সাধু ওই স্থানে আশ্রয় নেন। তার সাথে ছিলেন, আরও কয়েকজন সাধু। আনন্দ গোঁসাই ওই স্থানে আশ্রয় নেওয়ায় স্থানীয় ভক্তরা তার থাকার জন্য জমি দান করেন। সব মিলিয়ে প্রায় এক একর জমি হয়ে যায় এই আশ্রমের।

আনন্দ গোঁসাই তার জীবদ্দশায় এখানে বহু সনাতন ধর্মালম্বী শিক্ষার্থী কিংবা সাধারণ সনাতন ধম্বালম্বীদের আশ্রয় দিয়েছেন, খাইয়েছেন। এক সময় বগুড়ার এই আশ্রমের নাম ছড়িয়ে পড়ে। দূর দূরান্ত থেকে বগুড়ায় লোকজন এসে থাকতেন ও খেতেন।

আনন্দ গোঁসাইয়ের মৃত্যুর পর আশ্রমে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। তার সমাধিস্থলে গড়ে তোলা হয় সমাধি মন্দির। আর আশ্রমটি হয়ে ওঠে আনন্দ আশ্রম নামে। এ পর্যায়ে ১৯৬৮ সালে আশ্রমটি পরিচালনার জন্য তৈরি হয় একটি কমিটি। মাঝে কয়েকজন সভাপতি পদে পরিবর্তন হলেও সেই থেকে বর্তমান পর্যন্ত আনন্দ আশ্রমরে সাধারণ সম্পাদকের পদে রয়েছেন বিশিষ্ট দধি ব্যবসায়ী প্রদীপ কুমার পাল।

তিনিই আশ্রমটির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন জৌলুষে ভরা আনন্দ আশ্রম নিজের স্বকীয়তা ধরে রাখে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত। এ সময় পাক হানাদার বাহিনী ওই আশ্রমের সন্যাসীদের মেরে ফেলে। এরপর কমিটি কিছু কার্যক্রম চালানের চেষ্টা করলেও এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি, স্বার্থান্বেষী মহল আশ্রমের ওই বিশাল সম্পত্তি গ্রাস করার অপচেষ্টা চালায়।

এ ছাড়াও অপরাধী চক্র ওই এলাকায় ডেরা গড়ে নানা অপকর্ম অব্যাহত রাখে। এ অবস্থায় ওই এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি মুসলমানদের একটি প্রগতিশীল অংশ আশ্রমটি রক্ষায় উদ্যোগী হন। এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চিন্তা করা হয়, সেখানে বিশ্বব্যাপি পরিচালিত হওয়া কোন একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের শাখা হিসেবে এটিকে ব্যবহার করতে দেওয়া। যোগাযোগ করা হয় রামকৃষ্ণ আশ্রমের সাথে। কিন্তু বিপত্তি হয় এ আশ্রম চত্ত্বরে কোর আমিষ ভক্ষণ করা যাবেনা বলে একাংশের মতামতের কারণে।

তারপরই যোগাযোগ করা হয় ইস্‌কনের সাথে তাদের কার্যক্রমে কারও আপত্তি না থাকায় ২০০৩ সালে ইস্‌কন আনন্দ আশ্রমের আংশিক দায়িত্বে আসার পর থেকে বগুড়ায় ইস্‌কন তাদের কার্যক্রম শুরু করে। ইস্‌কন তাদের কার্যক্রম শুরু করার পর আনন্দ আশ্রমের স্বাতন্ত্র্যতা হারিয়ে যেতে থাকে। আশ্রমে অতিথি আসা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। আশ্রম বলতে যা বুঝায় তা আর নাই। বর্তমানে ইস্‌কনের সেবক ছাড়া আশ্রমে কেউ নাই।

বর্তমানে আনন্দ আশ্রমটি ইস্‌কন কতৃক পরিচালিত হচ্ছে। একই আশ্রমে দুটি কমিটি রয়েছে। আনন্দ আশ্রমের কমিটি টি প্রায় অকার্যকর হয়ে গেছে। বর্তমানে কাজ করছে ইস্‌কনের কমিটি। আশ্রমের মধ্যে যে মন্দির নির্মিত হচ্ছে তারও কমিটিতে রয়েছেন ইস্‌কন নেতৃবৃন্দ। এই মন্দির নির্মাণের জন্য যে ব্যাংক একাউন্ট করা হয়েছে সেই একাউন্ট পরিচালনা করছেন ইস্‌কন নেতৃবৃন্দ।

ইস্‌কনের নেতৃবৃন্দ নির্মাণ করেছেন আরও কিছু স্থাপনা। ইস্‌কন এর হয়ে যারা কাজ করছেন তাদের মধ্যে কেউ স্থানীয় নেই। বিভিন্ন জেলা থেকে এসে আনন্দ আশ্রমটি ইস্‌কন আনন্দ আশ্রম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সাধারণ সনাতন ধর্মালম্বীদের অনেকেই বগুড়ায় ইস্‌কনের কার্যক্রম নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। বিশেষ করে  রোববারের রথযাত্রাকালে ৫ জনের মৃত্যু এবং প্রায় ৪০ জন আহত হওয়ার পরও তারা নির্বিকার রয়েছেন। আহত নিহতদের তেমন কোন খোঁজ খবর নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

আনন্দ আশ্রম পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ পাল জানান, তিনি অনেক দিন হলো আশ্রমে যান না। ইস্‌কনের লোকজন তাকে আর নিমন্ত্রণ করেন না। আনন্দ আশ্রমের জায়গায় ইস্‌কনকে যে কারণে স্থান দেওয়া হয়েছে তা তারা পূরণ করতে পারছে না। বরং বিরোধ সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি রোববারের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ীদের গ্রেপ্তারের দাবিও জানান।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS