ভিডিও

পঞ্চগড়ে চা বাগানে মিশ্র ফলের আবাদ করে লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চা চাষিদের

প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০২৪, ০৬:৪১ বিকাল
আপডেট: জুলাই ২৬, ২০২৪, ০৬:৪১ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

সামসউদ্দীন চৌধুরী কালাম, পঞ্চগড় : সমতলের চায়ের রাজ্য পঞ্চগড়ে ভালো নেই চা চাষিরা। কাঁচা চা পাতার ন্যায্যমূল্য না পেয়ে লোকসান গুনতে গুনতে দেয়ালে পিঠ ঠেকেছে তাদের। চা কারখানাগুলোর সিন্ডিকেটে বন্দি এখানকার চা চাষিরা। তাদের ইচ্ছাকৃত দামে কাঁচা চা পাতা দিতে বাধ্য চাষিরা। কারণ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পাতা তুলতে হয়।

পাতা না তুললে তা বড় হয়ে কারখানায় দেয়ার উপযোগী থাকে না। ফলে পাতা ফেলে দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। অনেকেই এরই মধ্যে চা বাগানের গাছ উপড়ে ফেলেছে। আর যাদের বাগান এখনও আছে তারা চা ছাড়াও বিকল্প আবাদ করে লোকসান পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। চা বাগানের মাঝে মাঝে দীর্ঘমেয়াদী আম, লটকন, সুপারী, মাল্টাসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপণ করেছেন।

এরই মধ্যে অনেক গাছে ফলনও এসেছে ভাল। এখন চা পাতার দাম কম হলেও অন্যান্য গাছের ফল বিক্রয় করে তারা আবারও লোকসান পুষিয়ে নেয়ার স্বপ্ন দেখছেন। যদিও চা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন চা বাগানে অন্য ফলের গাছ লাগালে বাগানে পোকামাকড়ের উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। আর কৃষি বিভাগ বলছে কৃষকদের প্রকল্পের আওতায় এনে অর্গানিক পদ্ধতিতে উৎপাদনমুখী করতে চাষিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

সীমান্ত জেলা পঞ্চগড় সমতলের চায়ের রাজ্য হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে অনেক আগেই। সমতলের মাটি চায়ের উপযোগী হওয়ায় দ্রুতই বাড়েছে চা বাগানের সংখ্যা। তবে আপদকালীন সংকট কাটিয়ে উঠতে এ জেলার চাষিরা সমতলের চা বাগানে মিশ্র ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন। চা বাগানগুলোতে এখন শোভা পাচ্ছে দৃষ্টিনন্দন সারি সারি ছোট বড় অসংখ্য আম, লটকন, মাল্টা ও সুপারি বাগান।

বেশিরভাগ বাগানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির আমের গাছ। হাড়িভাঙ্গা, আম্রপালি, ব্যানানা ম্যাংগোসহ নানা জাতের আম উৎপাদিত হচ্ছে অর্গানিক পদ্ধতিতে। এসব গাছে ব্যবহার করা হচ্ছে জৈব বালাইনাশক। এতে করে ভোক্তাদের কাছে অর্গানিক আমের চাহিদা বাড়ায় বাজারে আমের দামও বেশ ভাল। এক জমিতে একাধিক ফসল পেয়ে লাভের মুখ দেখছেন চা চাষিরা। আম পাকা শুরু হলে তা প্যাকেটজাত করে জেলা ও দেশের বিভিন্ন পাইকারি আড়ৎ কিংবা কুরিয়ারের মাধ্যেমে গ্রাহক পর্যায়ে পাঠানো হচ্ছে আম সাথে যাচ্ছে লটকন।

তেঁতুলিয়া উপজেলার বিল্লাভিটা এলাকার আদর্শ চাষি কাজী আনিসুর রহমান বলেন, সর্বপ্রথম বড় আকারে চা বাগানে সাথী ফসল হিসেবে তিনি আম চাষ শুরু করেন। পরের বছরেই আশাতীত ফলন দেখে তেঁতুলিয়ার অনেক চা চাষি এখন তাদের চা বাগানে আম চাষ করছেন। চা বাগানের এই আম কিনতে বিভিন্ন জেলা থেকে আসছে ক্রেতারা।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার কামাত কাজলদিঘী ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের চা চাষি আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, কৃষির মধ্যে যে রোমাঞ্চ রয়েছে তা পৃথিবীতে আর কোথাও নেই। একজন ভাল কৃষক নিজের এবং দেশের জন্যে অনেক কিছু করতে পারে, যদি সে মননশীল হয়। ৬ সন্তানের জনক আবু বক্কর নিজের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষিত করে গড়ে তুলেছেন।

জীবন জগতে তিনি একা থাকলেও কৃষির এই শৈল্পিকতা তাকে ব্যস্ত করে রেখেছে। বর্তমানে তিনি প্রায় ২০ বিঘা জমিতে চা এর সাথে আম, লটকন, সুপারী, লেবুসহ সবজি আবাদ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন। চলতি মৌসুমে ৫০টি গাছের লটকন বিক্রয় করে ২ লাখ টাকা পেয়েছেন বলে তিনি জানান। আর আম বিক্রয় করে পেয়েছেন লক্ষাধিক টাকা। সারাবছর সবজি বিক্রয় করে নিয়মিতভাবেই আয় করছেন তিনি।

পঞ্চগড় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল মতিন জানান, কৃষকদের প্রকল্পের আওতায় এনে বিষমুক্ত অর্গানিক আম উৎপাদনে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে আম-লটকনসহ বিভিন্ন ফল দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে। তবে অর্গানিক আমকে কেন্দ্র করে বাণিজ্য সৃষ্টির পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS