ভিডিও

বগুড়ার সারিয়াকান্দির একই এলাকা থেকে নিখোঁজ তিনজন

প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২৪, ০৮:১৪ রাত
আপডেট: আগস্ট ১৬, ২০২৪, ০৮:১৪ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি : সারিয়াকান্দির একই এলাকা থেকে নিখোঁজ রয়েছেন ৩ জন। একজন নিঁখোজ হয়ে জবাই করার সময় দৌড়ে পালিয়ে রক্ষা পেয়েছেন। চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। ফিরে পাওয়ার আশায়, স্বজনের খোঁজে এখনো নির্ঘুম রাত কাটে পরিবারগুলোর।

সারিয়াকান্দি থানার দায়ের করা মামলা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের তালতলা এলাকার মহিদুল সাকিদারের ছেলে ৭ম শ্রেণির ছাত্র কাওছারকে জবাই করার সময় প্রাণভয়ে দৌড়ে পালিয়ে রক্ষা পায়। দৌড়ে সে একটি জানাযার নামাজ চলাকালে তার ভেতরে গিয়ে পরে অজ্ঞান হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে। এতে সে প্রাণে বেঁচে যায়।

জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৭ ডিসেম্বর দুপুরে জুম্মার নামাজ পরার উদ্দেশ্যে কাওসার বাড়ি থেকে বের হয়। রাস্তায় তার দূর সম্পর্কের এক চাচা টাকা খুচরা করে নিয়ে আসার জন্য তাকে রাস্তায় দাঁড়ানো একটি মাইক্রোবাসের কাছে পাঠায়। মাইক্রোবাসের কাছে যাওয়া মাত্রই কাওসারকে কৌশলে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়া হয়। তারপর তার মুখ গামছা দিয়ে বন্ধ করা হয় এবং হাত পা বেঁধে ফেলা হয়।

এরপর সারাদিন তাকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানো হয়। মাইক্রোবাসের ভেতরে মানুষরা ছিল বোরখা পরিহিত, মুখোশ পরা। ঘুরে বেড়ানোর পর সন্ধ্যার দিকে বগুড়া গাবতলী উপজেলার একটি ফাঁকা মাঠে নিয়ে যাওয়া হয় কাউছারকে। এরপর সেখানে তাকে আমগাছের সাথে বেঁধে ফেলা হয়। এরপর মুখোশ পরিহিত অজ্ঞাতনামা আসামিরা সেখানে নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করায় তাকে। পরে গাছ থেকে কাউছারকে খুলে জবাই করার সময় কৌশলে কাউছার প্রাণপণে দৌড় দেয়।

আসামিরাও কাউসারের পিছু দৌড় দেয়। পরে কাউছার দৌড়ে একটি জানাযার ভেতর পরে গিয়ে অজ্ঞান হয়। সেখান থেকে সে স্থানীয়দের সহায়তায় তার নিজ বাড়ি ফিরে আসতে সক্ষম হয়। এ বিষয়ে মহিদুল সাকিদার বাদি হয়ে সারিয়াকান্দি থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। এ মামলার প্রধান আসামিও গ্রেফতার হয়েছিল। সে এখন জামিনে মুক্ত আছে।

২০২১ সালের মার্চ মাসে এই তালতলা এলাকা থেকেই নিখোঁজ হয় কলেজ ছাত্র আশিকুর রহমান শুভ (২১)। শুভ এ গ্রামের সুমন আকন্দের ছেলে। সুমন আকন্দ ঢাকায় একটি গার্মেন্টস এ চাকরি করতেন। সেই সুবাদে শুভ ঢাকাতেই পড়াশোনা করেছে।

এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার জন্য শুভ তাদের গ্রামের বাড়ি ওই তালতলায় আসে। এসএসসি পাশ করে সে চন্দনবাইশা ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়। ১ম বর্ষে পড়ার সময় মার্চ মাসের একদিন বিকালে সে এই তালতলা এলাকায় বেড়াতে যায়। সেদিন থেকেই সে নিখোঁজ হয়। এ বিষয়ে সারিয়াকান্দি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছে। এতদিন নিখোঁজ থাকার পরও এখনো তার খোঁজ মেলেনি।

থানার  ডায়েরি সূত্রে জানা গেছে, তালতলার পার্শ্ববর্তী কামালপুর ইউনিয়নের সাজু মন্ডল (২৫) নিখোঁজ হন ঢাকা থেকে। সাজু মন্ডল কামালপুর রৌহাদহ গ্রামের ফজলু মন্ডলের ছেলে। তিনি অটো রিক্সা চালানোর সুবাদে ঢাকার আশুলিয়া থানার ভাদাইল হাশেম কলোনী এলাকায়  জনৈক রাশেদের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। গত ২৯ মার্চ বিকালে তিনি তার নিজ ভাড়া বাসা থেকে অটো রিকশা নিয়ে বের হন।

এরপর থেকে তিনি আর ফিরে আসেন নি। এ বিষয়ে ঢাকা আশুলিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন সাজু মন্ডলের পিতা ফজলু মন্ডল। ডায়েরির তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, সাজু মন্ডলের নিখোঁজের এখনো নির্ভরযোগ্য কোনও তথ্য জানা যায়নি।

সাজু মন্ডলের গ্রামের বাড়িতে প্রতিদিন চলে শোকের মাতম। কথা বলতেই তার ছোট বোন হু হু করে কেঁদে উঠেন। থানার ডায়েরি এবং এজাহার সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ এই তালতলা এলাকা থেকেই নিখোঁজ হন ব্যবসায়ী মহিদুল (৪১)। গত ১১ জুন সারাদিন বেকারির মালপত্র বিভিন্ন দোকানে সাপ্লাই দিয়ে রাত ৮ টার দিকে মহিদুল তার বাড়িতে ফিরে আসেন।

রাত ৯ টার দিকে রাতের খাবারের সময় তার কাছে সবুর নামে অপর একজন ব্যবসায়ির ফোনকল আসে এবং মহিদুলকে তালতলা এলাকায় যেতে বলা হয়। ফোনকল পেয়ে তালতলার উদেশ্যে তড়িঘরি করে মহিদুল বাড়ি থেকে বের হন। তারপর থেকে তিনি আর বাড়িতে ফিরে আসেননি।

গত কয়েকদিন আগে এ বিষয়ে মহিদুলকে ফিরে পাওয়ার দাবিতে হাজারো এলাকাবাসী কুতুবপুর বাজারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন। মহিদুলের ছেলে সোহান কবির সারিয়াকান্দি থানায় জিডির পর একটি মামলাও দায়ের করেছেন। মহিদুল নিখোঁজের ২ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো খোঁজ পাচ্ছেন না তার পরিবার।

মহিদুলের ছেলে সোহান কবির বলেন, বাবাকে হারিয়ে আমরা দুই ভাইবোন একেবারেই এতিম হয়েছি। বাবাকে খুঁজতে খুঁজতে আমরা একেবারেই হয়রান হয়েছি। আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও কেউ কি আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন?

বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার জাকির হাসান পিপিএম বলেন, ব্যবসায়ী মহিদুল নিখোঁজের ঘটনায় প্রধান আসামি সবুরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। কিন্তু তার কাছ থেকে নির্ভরযোগ্য কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে আমাদের তদন্ত এখনো চলমান রয়েছে। নিখোঁজ মহিদুলকে খুঁজতে আমাদের পুলিশের একাধিক টিম কাজ করেছে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS