ভিডিও

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে নদী খননের বালুতে খালের মুখ বন্ধ

প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২৪, ০৭:৪৬ বিকাল
আপডেট: আগস্ট ২৮, ২০২৪, ০৭:৪৬ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বাঙালি নদী খননের বালু ফেলে গত তিন বছর আগে একটি খালের মুখ বন্ধ করা হয়। কয়েক বছর বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে অভিযোগ করে সুরাহা পাননি ভুক্তভোগী কৃষকেরা। ‘দৈনিক করতোয়া’ পত্রিকায় একাধিকবারসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরেও খোলেনি খালের মুখ।

গত বছরের লোক দেখানো অভিযানও ব্যর্থ। কৃষকের কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা। মাছ শিকার থেকে বঞ্চিত জেলেপাড়ার মানুষ। স্থগিত হয়ে আছে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন শোলারতাইড় সেতু। সবকিছু বিবেচনায় খালের মুখ খুলে দেওয়ার দাবিতে গতকাল বুধবার সকালে উপজেলার কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সুজন নিজেই বাদি হয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রশাসক তৌহিদুর রহমানের দপ্তরে।

চেয়ারম্যানের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের কুতুবপুর বাজারের পাশ থেকে বাঁশহাটা বাঙালি নদী পর্যন্ত খালটি ১শ’ বছরের পুরনো। আগে এটি পানি নিষ্কাষণের নালার মতো ছিল। পরবর্তীতে যমুনা নদী ভাঙনের ফলে উক্ত নালা খালে পরিণত হয়।

বর্ষার সময় উপজেলার চারটি বৃহৎ ইউনিয়ন কুতুবপুর, চন্দনবাইশা, ভেলাবাড়ী, কামালপুরের বিভিন্ন গ্রামের বৃষ্টির পানি এই খাল দিয়ে বাঙালি নদীতে পড়ে। খালটি দিয়ে কুতুবপুর বাজার থেকে নৌকাযোগে মানুষ সারিয়াকান্দি, গোলাবাড়ী, পোরাদহসহ বিভিন্ন পথে যাতায়াত করতেন। যেহেতু বাঙালি নদীর সাথে সরাসরি সংযোগ ছিল, সেজন্য প্রতি বছর বর্ষার সময় প্রচুর পরিমাণ দেশিয় মাছ এই খালে ওঠে আসতো এবং খালের ওপর নির্ভর করে কুতুবপুর বাজারের পিছনে গড়ে ওঠে জেলে পল্লী।

প্রায় ৫শ’ একর এলাকাজুড়ে বোরো মৌসুমে বীজতলা হতো। প্রায় ১শ’ একর এলাকাজুড়ে রবি ফসল (মিষ্টি আলু, সরিষা, গম, কালাই, রসুন, পেয়াজ) ইত্যাদি আবাদ হতো। গত তিন বছর আগে নদী খননের বালুতে খালের মুখ বন্ধ হওয়ার ফলে এই সকল ফসল ফলানো ও বীজতলা তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না।

নদীতে কোন মাছও পাওয়া যাচ্ছে না এবং কচুরিপানা হয়ে খালটি ব্যবহারে অনুপযোগী হয়েছে। যার ফলে জেলে পল্লীর মানুষেরা মাছ শিকার করতো না পেরে তারা অতিকষ্টে দিন যাপন করছেন। বাঙালি নদীতে কোনও বর্ষার পানি না থাকলেও বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে এই সাত গ্রামের কৃষকের আমন ধানের ফসল তলিয়ে গেছে এবং তারা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

কৃষকরা ইরি মৌসুমে বীজতলা তৈরি ও রবি ফসলের আবাদ করতে পারছেন না। যদি খালের মুখ খোলা থাকতো তাহলে খালের পানি ও কচুরিপানা নদীতে বের হয়ে যেত এবং মানুষের ফসল রক্ষা হতোভ অল্প কিছু বালু দস্যুদের সুবিধার জন্য বিশাল জনগোষ্ঠীর বড় অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই খাল। এছাড়া খালের মুখ বন্ধ থাকার কারণে প্রায় ৬ কোটি টাকার ব্যয়ে কালারতাইড় ব্রিজ নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে আছে।

জানা গেছে, গত প্রায় তিন বছর আগে বাঙালি নদী খননের সময় ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের বাঁশহাটা গ্রামে বালু ফেলে খালের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সে সময় কৃষকেরা এ কাজে খননকারী কোম্পানিকে বাধা দেন। কিন্তু তারা পাইপ দিয়ে পানি বের করে দেওয়ার কথা বললেও পরবর্তী সময়ে তা আর করেননি। ফলে খালের পানি বাঙালি নদীতে না পড়ে খালেই আটকে যায়।

পরে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিলেও এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও এখনো কোনও সুরাহা পাননি কৃষকরা। এদিকে গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সাথে নিয়ে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা কর্মকর্তা সবুজ কুমার বসাক সেখানে অভিযান পরিচলনা করলেও তা ব্যর্থ হয়।

উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের শোলারতাইড় গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, ‘গত কয়েক বছর অভিযোগ নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে হামরা ঘুরছি, অভিযোগ দিছি কিন্তু আজও খালের মুখ খুলেনি। প্রশাসনের কাছে হামরা অতিতাড়াতাড়ি খালের পানি বাইর করে চাই। না হলে এ এলাকার প্রায় ৩শ’ বিগে আমন ধান নষ্ট হচ্ছে। আর ২০ হাজার বিগে জমিত বোরো ধান হামরা নাগাবের পামু না।’

কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘এ বিষয়ে কৃষকরা আমাকে মৌখিকভাবে বেশ কয়েকবার অভিযোগ দিয়েছেন। এ সমস্যার কথা আমি এর আগে ঊর্ধ্বতন মহলের সবাইকে জানিয়েছি। কিন্তু এখনো কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। খালের মুখ বন্ধ থাকায় বিশাল এলাকার আমনধান পানিতে তলিয়ে গেছে। বিশাল এলাকার মানুষ দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। তাই নিরুপায় হয়ে আমি নিজেই ইউএনও বরাবর অভিযোগ দিয়েছি।’

সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রশাসক তৌহিদুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ আমার দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি যোগদান করার পর এ ধরনের কোনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগের ভিত্তিতে সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে কৃষকদের সুবিধার্থে দ্রুত খালের মুখ খুলে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS