ভিডিও

রাজনৈতিক সংলাপ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২৪, ১০:৪০ রাত
আপডেট: সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২৪, ০১:০৫ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

জনসমুদ্রের জোয়ার। লাখো মানুষ নেমে এসেছে পথে। নারী-পুরুষ শিশু বৃদ্ধ কেউ বাদ যায়নি। লাখো জনতা মিলেমিশে একাকার। অভূতপূর্ব এক দৃশ্য। এ যেন এক নতুন বাংলাদেশের রূপ। অনেক বছরের অধিকারহীনতা, কথা বলতে না পারার নীরব যন্ত্রণা যেন উড়ে গেছে হাওয়ায়। সমস্ত অধিকারহারা মানুষের এই সমুদ্রে খড়কুটোর মতো ভেসে গেছে ক্ষমতার দম্ভ। ভেসে গেছে সন্ত্রাসের কালো থাবা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এক দফা দাবির মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। পদত্যাগ করেছে তার সরকার। ছাত্রদের আহবানে সাড়া দিয়ে দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন বিশ্বখ্যাত নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার তিন সপ্তাহ পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

গত শনিবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় শুরু হওয়া মতবিনিময় সভা শেষ হয় রাত ৮টার দিকে। সভায় প্রয়োজনীয় সংস্কার করে ‘যৌক্তিক’ সময়ের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছেন অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। মতবিনিময় সভা শেষে বিভিন্ন দলের নেতারা গণমাধ্যমের কাছে এ কথা জানান। রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা মতবিনিময়কালে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের সংস্কারসহ নির্বাচনের বিষয়ে মতামত প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরেন।

একই সঙ্গে নির্বাচন ব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, প্রশাসন, বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান সংস্কারে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দলগুলো মনে করে, এই সংস্কারগুলো একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, গণতন্ত্র নিশ্চিত করবে এবং ভবিষ্যতে যাতে স্বৈরাচার সৃষ্টি না হয়, এতে ভূমিকা রাখবে। গত শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিকেল ৩টা থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ধারাবাহিক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন দলগুলোর নেতারা। বৈঠকে দলগুলো লিখিত দাবি ও প্রস্তাব দিয়েছে।

গত শনিবার ড. ইউনূসের সঙ্গে মতবিনিময় করে হেফাজতে ইসলাম এবং ছয়টি ইসলামি রাজনৈতিক দল-চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফতে মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, নেজামে ইসলাম ও খেলাফত আন্দোলন।

এছাড়া মতবিনিময়ে অংশ নেয়-এলডিপি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, বাংলাদেশ জাসদ, ১২ দলীয় জোট ও গণফোরাম। মতবিনিময়কালে সবগুলো দলই প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন আয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দিতে নিজেদের সম্মতির কথা জানিয়েছেন।

রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জানান, সরকারে আপাতত প্রধান দায়িত্ব দুটি। প্রথমত, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করা এবং দ্বিতীয়ত প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ শেষ করে একটি ভয়ভীতিহীন পরিবেশ তৈরি করে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। বৈঠক শেষে যমুনার সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের এলডিপি চেয়ারম্যান কর্ণেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, সংসদ নির্বাচন-এগুলোর একটা সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করার কথা বলেছি। ছয়মাস পরও হতে পারে, ৯ মাস পরও হতে পারে, নির্বাচন তো হতে হবে।

যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অন্তর্বর্তী সরকারের জন্যও ভালো, রাজনৈতিক দলের জন্যও ভালো, দেশের জন্যও ভালো।’ তিনি বলেন, তবে সংস্কার করার আগে কোনো নির্বাচন কোনো অবস্থায়ই বাঞ্ছনীয় নয়। সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। দেশের মধ্যে মনুষ্যত্ব ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে।

আমরা মনে করি, জনগণের মনের কথাই প্রতিধ্বনিত হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মুখে। এ বিষয়ে ভিন্ন মতের অবকাশ নেই। দেশে আমূল সংস্কার করা জরুরি। দেশের প্রতিটা খাত দুর্নীতি, লুটপাটে ধ্বংস হয়ে গেছে। এসবকে বিদায় দিয়ে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে রাষ্ট্রীয় সব অবকাঠামো। মানুষ চায় দুর্নীতিমুক্ত সমাজ। মানুষ চায় গণতন্ত্র, কথা বলার অধিকার, ভোট দেওয়ার অধিকার, নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের রয়েছে কর্তব্য ও দায়িত্ব।

দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা এখন অত্যন্ত জরুরি। এ ব্যাপারে সেনাবাহিনী ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করতে হবে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের চুড়ান্ত বিজয় হয়েছে। দেশে শান্তি ফিরিয়ে আসুক, সবধরনের বৈষম্য দূর হোক, নতুন নেতৃত্ব দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবে এটাই প্রত্যাশা করছি।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS