ভিডিও

বৈষম্যবিরোধী দখল

হাসান মোঃ শাব্বির 

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪, ০৫:০৯ বিকাল
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪, ০৫:০৯ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

কল্পনাকেও হার মানায়, প্রকৃতিতে অনেক এমন অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটে। এমনই একটি কাণ্ড হয়েছে বাংলাদেশের বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায়। ১০ ফুট লম্বা একটি বার্মিজ অজগর অপর একটি রেটিকুলেটেড পাইথন বা গোলবাহার অজগরকে গিলে ফেলেছে। আর ঘটনাটি ঘটেছে দেশের এক গবেষকের চোখের সামনেই। দেশের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিকে এমন একটি বিরল জীববৈচিত্রের খবর ছাপা হয়েছিল।

রাজনীতির পটভূমিতে এমন অনেক কিছুই ঘটে যা রাজনীতিবিদরা কল্পনাও করতে পারেন না। ১৯৭১ সালের যে পটভূমিতে পূর্ব পাকিস্তান থেকে ‘বাংলাদেশ ’ হয়েছিল, ১৯৯০ এ এরশাদ মুক্ত বাংলাদেশ হয়েছিল অন্য পটভূমিতে। আবার, ২০২৪ এ যেভাবে বাংলাদেশ শেখ হাসিনার মসনদকে কাঁপিয়ে তাকে দেশ থেকে পালাতে বাধ্য করেছে তার বাস্তবতা আমাদের সকলের জানা। 

বাংলাদেশ, বাংলাদেশ হওয়ার আগেও রাজনীতিবিদ ছিলেন, পরেও  ছিলেন, এখনও আছেন। রাজনীতিবিদরাই এদেশের ভাগ্য নির্ধারণ করে আসছিলেন। বাংলাদেশে গেলো ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে যে পালাবদল ঘটে তার মধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি এবং দখলের খবর উঠে আসে গণমাধ্যমগুলোতে। মূলত আওয়ামী লীগের অবর্তমানে বর্তমানে দেশের বড় একটি দল ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আসার পরপরই দলটির পক্ষ থেকে কিছু ব্যবস্থাও নেয়া হয়।

সরকার পতনের রাতেই বরিশাল শহরে পুকুর ভরাট করে দখলের অভিযোগ ওঠে একটি রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরীনের বিরুদ্ধে। গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হলে গত ১১ অগাস্ট বিলকিস জাহান শিরীনের দলীয় পদ স্থগিত করা হয়। যদিও দলীয় প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি। বরিশালের মতোই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে একের পর এক অভিযোগ আসতে থাকলে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে দখল কিংবা আধিপত্য বিস্তারসহ যে কোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ক্ষমতার পালাবদলের মধ্যেই দলের নেতাকর্মীরা এমন কর্মকাণ্ডে কেন জড়িয়ে পড়লেন?

এমন প্রশ্নে দলটি’র পক্ষ থেকে দায়িত্বশীলদের গণমাধ্যমে প্রকাশিত বক্তব্যগুলোর সারমর্ম এমন, যতটা প্রচার হচ্ছে, বাস্তবে ততটা ঘটছে না। কোথাও যদি কোনো আওয়ামী লীগের অফিস দখল করে নেয়া হয়ে থাকে, এটা দখলের প্রবৃত্তি থেকে আসেনি। এটা এসেছে মানুষের প্রতিবাদের প্রবৃত্তি থেকে। তবে আমাদের কাজ হলো সেটাকে নিবৃত্ত করা। এখানে আমরা নিবৃত্ত করার জন্য আমরা সব রকমের চেষ্টা দলে’র কেন্দ্র থেকে করা হচ্ছে এবং অব্যাহত থাকবে। 

দলটি জানাচ্ছে, দলের সব স্তরে তাদের ভাষায় ‘যে কোন অপকর্ম’ থেকে বিরত থাকতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এরপরও এসব ঘটনা থেমে নেই। এমন প্রেক্ষাপটে কয়েকদিন আগে মন্ত্রণালয় পরিবর্তনের আগে সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন চাঁদাবাজ ও দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। দেশের থানাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম শুরুর প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তিনি গণমাধ্যমে আরও জানিয়েছেন, এরকম কোনো ঘটনা ঘটলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।

বাংলাদেশে কোনো একটি সরকার পরিবর্তনের পর ব্যক্তির বদল ঘটলেও দুর্নীতি, আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি কিংবা দখলের যে পুরনো ব্যবস্থা, সেটির পরিবর্তন খুব একটা হয় না। এবার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ‘সিস্টেম বদলে দেওয়া’র কথা। এ বিষয়ে সরকারের ওপর ছাত্র-জনতারও চাপ আছে। কিন্তু বাস্তবে কতটা কী হবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

দখলদারিত্বের এই খেলাকে দেশের সাধারণ মানুষ অনেকটাই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ হিসেবে দেখছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নতুন সূচনা দেখতে বিশ্ববাসী’কে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন অধ্যাপক ড.ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বতীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। 

জামায়েতে ইসলামী বাংলাদেশ ছাড়া বেশিরভাগ বড় দলগুলো সরকারের কাছে নির্বাচনের রোডম্যাপ চাইছে। সরকারকে পর্যাপ্ত সময় দিতে রাজি হলেও দলগুলোর দাবি একটি নির্দিষ্ট সময়কাল, কবে-কখন-কতদিন রাষ্ট্র বাংলাদেশ এভাবে চলবে। দখলদারিত্বে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা কোন বৈষম্য রাখেনি, তাদের অঙ্গ সংগঠনগুলোর কোন দায়িত্বশীলদের বিতর্কিত এমন কর্মকান্ডে বিব্রত হয়েছে দলটি। অভিযোগ, দলীয় শৃংখলা ভঙ্গসহ নানা কারণ দেখিয়ে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কারের মতো গুরু শাস্তিরও নজির তৈরি করেছে দলটি। দলের নেতাকর্মীদের সাবেক হাসিনা সরকারের নানা দুর্নীতিবাজদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ের ঘটনাতে অনেক কেন্দ্রীয় নেতা প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশও করেছেন, গণমাধ্যমে স্বীকার করেছেন এগুলো অসাবধানতাবশত হয়েছে। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার এমন অর্জন বাংলাদেশ আগে দেখেনি। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তৎকালীন আওয়ামী সুবিধাভোগী চাঁদাবাজ, দখলদার ও জুলুমবাজরা তাদের চেহারা বদলে পোষাক বদলে রাতারাতি বিভিন্ন ছাতার নিচে নিজের অবস্থান পোক্ত করছে। অনেকটা রেটিকুলেটেড পাইথন বা গোলবাহার অজগরকে গিলে ফেলার মতো। সে সময়ের চাঁদাবাজদের যেন পেটর ভেতর গিলে নিজেদের পেটে জায়গা করে দিয়ে তাদের পূর্নবাসন করছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অর্জনকে রক্ষা করতে কেবলমাত্র পুলিশ প্রশাসন, সেনাবহিনী কিংবা ড. ইউনূসের সরকারের প্রতি বুক পেতে আশা করে থাকলে চলবে না, নিজেদের হতে হবে সচেতন কোন অবস্থাতেই তাদের রূপ পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া যাবে না। আমাদের বৈষম্যবিহীন বাংলাদেশকে আমাদেরকেই রক্ষা করতে হবে চাঁদাবাজ, দখলদার ও দুর্নীতির গডফাদার  নামক রেটিকুলেটেড পাইথন বা গোলবাহার অজগরের মুখ থেকে। মানুষ যাতে নিরাপদ বোধ করে এবং জনবান্ধব পরিবেশে চলাচল করতে পারে, সেজন্য সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে বলে ১৮ সেপ্টেম্বর বুধবার গণমাধ্যমে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়ে মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ‘দ্য কোড অব ক্রিমিন্যাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮’ এর ১২(১) ধারা অনুযায়ী দুই মাসের জন্য এই ক্ষমতা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা সারা দেশে প্রয়োগ করতে পারবেন বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ‘ফৌজদারী কার্যবিধির, ১৮৯৮’ এর ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৮৬, ৯৫(২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ ও ১৪২ ধারার অপরাধগুলো বিবেচনায় নিতে পারবেন। অন্তবর্তীকালীন সরকারের এই সিদ্ধান্তের পেছনে কারণ হিসাবে বিস্তৃত পর্যায়ে মাঠের বিভিন্ন জায়গায় সেনাবাহিনী কাজের মাধ্যমে ‘পারপাস অব দ্য গভর্নমেন্ট সিকিউরড দ্য সিটিজেন’ সারভিং ফর দ্য স্টেট সফল হবে। দেশের এই মুহূর্তে সরকারের মনে হয়েছে, এটা দরকার বলে সরকার প্রয়োগ করেছেন, মাত্র ৬০ দিন দিনের জন্য। রাজনৈতিক দলের মুখপাত্রদের মতো জনসাধারণের মনেও অন্য একটি শঙ্কা উঁকি দিচ্ছে, তা অনেকটা ওই বার্মিজ অজগর আর রেটিকুলেটেড পাইথন বা গোলবাহার অজগরের ঘটানার দিকে ইঙ্গিত দেয়। সকল শঙ্কা’কে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশ’কে সেনাবাহিনী ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এগিয়ে নিয়ে যাক এমন প্রত্যাশায় দিন কাটাচ্ছে আঠারো কোটির জনমানুষের বাংলাদেশ।


হাসান মোঃ শাব্বির 
সাব-এডিটর, দৈনিক করতোয়া (অনলাইন) । 



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS