ভিডিও

মাদকের বিপজ্জনক বিস্তার বাড়ছেই

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২৪, ০৫:৪৭ বিকাল
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২৪, ০৫:৪৭ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

মাদক নিয়ে সমাজ ভীষণ উদ্বিগ্ন। সরকারের উদ্বেগও কম নয়। কিন্তু সরকারের উদ্বেগ যদি যথাযথ হতো, তাহলে এতদিনে এ সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান না হলেও উদ্বেগের অবসান ঘটত। কোথাও কোনো ঘাটতি নিশ্চয়ই রয়েছে। না হলে প্রতিবেশি ভারত থেকে সীমান্ত পেরিয়ে গাজা, ফেনসিডিলসহ নানা ধরনের মাদকের চালান কীভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

এখানেও কোনো ঘাটতি রয়েছে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন, সেমিনার আলোচনা, প্রতিরোধমূলক সাংস্কৃতিক প্রচারণা, সামাজিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের সুপারিশ এবং পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানের পরও মাদকের বিস্তৃতি বাড়ছে। সমাজের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আরো বাড়ছে।

দেশে গত এক বছরে চোরা পথে আসা ৭০০ কেজি ৯২৮ গ্রাম  হেরোইন জব্দ করা হয়েছে। একই সময়ে কোকেন জব্দ করা হয়েছে ১৩ কেজির বেশি। গত বৃহস্পতিবার আট কেজি ৩০০ গ্রাম কোকেনসহ এক বিদেশিকে আটক করা হয়েছে। জব্দ হওয়া এই হেরোইন ও কোকেনের আনুমানিক বাজার দর এক হাজার কোটি টাকার বেশি।

গত এক বছরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি), পুলিশ বিজিবি, র‌্যাব ও কোস্ট গার্ডের জব্দ করা তালিকা বিশ্লেষণ করে এই তথ্য জানা গেছে। তালিকাটি সমন্বয় করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। চোরাপথে আসা বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের মধ্যে হেরোইনের পরিমাণ ব্যাপক হারে বেড়েছে। ২০১৬ সাল থেকে হেরোইন আসার পরিমাণ বাড়তে থাকে। গত ১৫ বছরের মধ্যে ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি হেরোইন জব্দ করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিয়ানমার থেকে চোরাপথে হেরোইন ও ইয়াবা আসে নিয়মিত। আর ভারত থেকে আসে ফেনসিডিল, গাঁজাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য। তারা মনে করেন, হেরোইন, ইয়াবা, কোকেন -যা জব্দ হচ্ছে, তার চেয়ে অনেক বেশি দেশে আসছে।

পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ, জব্দ হওয়া মাদকদ্রব্যের তালিকা ও পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিগত ১৫ বছরে সারা দেশে চার হাজার ২৫ কেজি ৪৭৮ গ্রাম হেরোইন জব্দ করা হয়। এর আগে ২০২২ সালে ৩৩৮ কেজি ২২১ গ্রাম জব্দ করা হয়।

মাদক নিয়ে যে ভয়াবহতার কথা বলছি, তার সূচনা গত শতকের আশির দশকের গোড়ার দিকে। একে একে আমাদের সমাজে অনুপ্রবেশ করল হেরোইন, কোকেন ও ফেনসিডিল। নব্বই দশকের মাঝামাঝি অনুপ্রবেশ করল ইয়াবা। হালের ফ্যাশন সিসা। এসবের সঙ্গে আবার আভিজাত্য ও স্মার্টনেস যুক্ত হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার ব্যক্তি- অধিকাংশই তরুণ-যুবক সিসায় আসক্ত।

শুরুতে উচ্চ বিত্ত ঘরের তরুণ-তরুণীরা এর ভোক্তা ছিল। এখন তা মোটামুটি সর্বব্যাপ্ত। কেন মাদকদ্রব্যের বিস্তৃতি ও বৈচিত্র্য বাড়ছে এবং কোন বাস্তবতায় এসব ‘এবিউজ’ এর তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে, সেসব যদি বিবেচনায় না নেওয়া হয়, তাহলে মাদক সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে না।

সমাজ হাহাকার করবে, রাষ্ট্র বা তার অধীন সংস্থা সক্রিয়তার পরাকাষ্ঠা দেখাবে, কিন্তু কাজের কাজ হবে না, বরং মাদকের বিস্তার ও বৈচিত্র্য আরো বাড়বে। গত প্রায় সাড়ে তিন দশকের অভিজ্ঞতা সে কথাই বলে। ইতিহাস-সমাজ-সংস্কৃতি বিবেচনায় না নিলে, সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাঠামোতে ও আভিযানিক সক্ষমতায় পরিবর্তন না ঘটালে মাদক সমস্যার কার্যকর সমাধান মিলবে না।

হাজার হাজার কোটি টাকার এই কারবার চুনোপুঁটি দিয়ে হয় না। পেছনে থাকে রাঘববোয়াল। তাদের তালিকাভুক্ত করে আইনের আওতায় আনা দরকার। তালিকা করাই সমাধান নয়। মাদক ব্যবসার সঙ্গে দেশের অনেক রাঘব বোয়াল জড়িত। আমরা মনে করি, এই সংখ্যা অনেক।

এদের পাকড়াও করতে হবে। মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মূল হোতাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS