ভিডিও

আশা জাগাচ্ছে সমলয় পদ্ধতিতে ধান চাষ

রাহমান ওয়াহিদ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২৪, ০৬:৪৩ বিকাল
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২৪, ০৬:৪৩ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

আধুনিকায়নের সাথে সাথে উন্নত জীবনের সন্ধানে মানুষ কয়েক দশক ধরে শহরমুখী। তাই গ্রামীণ কৃষিক্ষেত্র হারাচ্ছে কাঙ্খিত কৃষি শ্রমিক। ফসল কাটার সময় শ্রমিক সংকট এখন তাই প্রতি বছরের ঘটনা। সামনে এই সংকট আরো তীব্র হওয়ার আশংকাই বেশি।

কৃষিকে এখন রূপ দিতে হবে আকর্ষণীয় ও লাভজনক পেশা হিসেবে। প্রধান শস্য ধান চাষকে লাভজনক করার অন্যতম উপায় হলো-ধানের উৎপাদন ব্যয় কমানো। এটি সম্ভব হবে কেবল  কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে।

এজন্য বিশেষ করে প্রয়োজন সুবিন্যস্ত জমি ও মেশিন চলাচলের রাস্তা। কিন্তু সমস্যা হলো-এদেশের কৃষি ক্ষেতগুলো ছোট ছোট। কৃষকরা এগুলো জোড়া লাগাতে আগ্রহী নন। তাছাড়া কৃষকরা একই সময়ে চাষাবাদ করেন না। সবার বীজতলা একসময় গজায় না, চারা লাগানোর সময়ও হয় ভিন্ন, ধানও পাকে বিভিন্ন সময়ে।

একই কাজের জন্য বিভিন্ন জমিতে আলাদাভাবে কৃষি যন্ত্রগুলোর ব্যবহার অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী হয় না। বাংলাদেশের কৃষি যান্ত্রিকীকরণ তাই এখনও প্রায় ৭৫ ভাগই পিছিয়ে।

তবে আশার কথা হলো-জমির আইল বজায় রেখেও যন্ত্র ব্যবহারের একটি কার্যকরী উপায় বের করেছেন কৃষিবিজ্ঞানীরা। সেই পদ্ধতিটির নাম সমলয় পদ্ধতি। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়-সম্মিলিতভাবে কৃষি চাষ ধরনের এই পদ্ধতিতে বীজতলা থেকে ফসল কাটা সবই একসময়ে একযোগে করা সম্ভব। যন্ত্র চালাতে লাগবে অল্প মানুষ। জমির অপচয়রোধে বিশেষ কৃষি যন্ত্রের মাধ্যমে প্লাষ্টিকের ট্রেতে লাগানো হয় ধানের বীজ।

এরপর ট্রেগুলো  জমিতে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়। মাটি যেন শুকিয়ে না যায় সেজন্য পানি ছিঁটানো হয়। শীতে যেন চারার ক্ষতি না হয় সেজন্য পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে দেয়া হয়। ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে চারা গজায়। চারার উচ্চতা ৪ ইঞ্চি হলে তা জমিতে  রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টারের মাধ্যমে রোপণ করা হয়। এতে সময় লাগে কম।  চারা একই গভীরতায় সমানভাবে লাগানো যায়।

একই সময়ে রোপণ করায় নির্দিষ্ট এলাকায় সব ধান পাকেও একই সময়ে। মেশিন দিয়ে একইসঙ্গে সব ধান কাটা ও মাড়াই করা যায়। এটা বড়সড় পরিসরে করা যায় বলে সব প্রক্রিয়াতেই যন্ত্রের ব্যবহারে খরচ পড়ে কম। প্রচলিত রোপণ পদ্ধতিতে এক হেক্টর জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে যেখানে এলাকাভেদে ব্যয় হয় ১২-১৬ হাজার টাকা,সেখানে পূর্ণ মাত্রায় একটি রোপণ যন্ত্র ব্যবহার করলে ব্যয় হয় মাত্র ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা।

পূর্ণ  মাত্রায় একটি কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটায় যেখানে হাতে কর্তন,পরিবহন,মাড়াই এবং ঝাড়াই বাবদ এলাকাভেদে ১৮-২০ হাজার টাকা খরচ হয়,সেখানে এই পদ্ধতিতে হেক্টর প্রতি খরচ হয় মাত্র সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা। এতে রাসায়নিক সার ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। উৎপাদিত ধানের অপচয়,জমিতে পোকামাকড়ের বিস্তার,রোগ বালাই দমন সহজতর হয়।

প্রচলিত পদ্ধতিতে চারা রোপণের পর ফসল ঘরে তুলতে ১৪৫ থেকে ১৬০ দিন সময় লাগলেও সমলয় পদ্ধতিতে এর চেয়ে অনেক কম সময় লাগে। এ পদ্ধতিতে ইতোমধ্যে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার ও ধনবাড়ি উপজেলায় বীজতলা ও ধানের চারা রোপণে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি।

সমলয় পদ্ধতির প্রশংসা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রবীণ কৃষক রহিছ মিয়া একটি বার্তা সংস্থাকে জানান-আমাদের প্রতি বিঘা জমিতে ধান চাষ করতে খরচ হতো প্রায় চার হাজার টাকা।

সমলয় পদ্ধতিতে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। এ পদ্ধতির প্রসার ঘটলে বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ফসলহানি কম হবে। খবরে প্রকাশ-কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে-চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে প্রাথমিকভাবে উপজেলার মধুপুর বামনের হাট এলাকায় প্রায় ৩৫ শতক জমিতে সাড়ে ৪ হাজার প্লাষ্টিকের ট্রেতে ধানের বীজ বপন করা হয়েছে।

এলাকার বর্গাচাষি আবু বকর সিদ্দিক এবার ১২০ শতক জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে ধান চাষের প্রস্তুতি নিয়েছেন। এ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা হামিদুর রহমান বলেন-৯০ জন কৃষক ইতোমধ্যে ৫০ একর জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদের জন্য অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন। গাজীপুরের কাপাসিয়ায় গত বছর ৫০ একর জমিতে প্রায় ৪ হাজার ৮শ ট্রেতে চারা উৎপাদন করা হয়েছে। এ ধরনের চাষাবাদে কৃষকের সময়,শ্রম, আর্থিক খরচ কমিয়ে ফসল উৎপাদন বাড়িয়ে দেবে দুই থেকে তিনগুণ পর্যন্ত,যা এখন সময়ের দাবি।

কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম, দাউদকান্দি মৌলভীবাজার, ঠাকুরগাঁও,গোপালগঞ্জসহ সারা দেশে সীমিত আকারে সমলয় পদ্ধতিতে ধান চাষ শুরু হয়েছে এবং দিনদিন এ পদ্ধতিতে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে বলে বিভিন্ন পত্রপত্রিকার খবরে প্রকাশ। এসব খবরে আরো বলা হয়-সমলয় পদ্ধতিতে বোরো চাষের জন্য সরকার সম্প্রতি কৃষকদের ১৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা প্রণোদনা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এই প্রণোদনার আওতায় সারা দেশে ১২২টি সমলয় ব্লক স্থাপিত হবে। প্রতিটি ব্লকে থাকবে ৫০ একর জমি। এছাড়া কৃষকরা বিনামূল্যে হাইব্রিড বীজ ও অর্ধেক মূল্যে ধান লাগানোর মেশিন পাবেন। এতে দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠবে সমলয় ব্লক পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ। এভাবে কৃষিতে জাগছে এক নতুন আশার দিগন্ত।


লেখকঃ কবি, কথা সাহিত্যিক ও কলামিষ্ট

raahman.wahid1956@gmail.com

01711-055281



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS