ভিডিও

উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ জরুরি

আরিফ আনজুম 

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪, ০৬:৫৭ বিকাল
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪, ০৬:৫৭ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

দেশে যেন এখন সবকিছুই উর্ধ্বমুখী। দেশের ১ টাকা মূল্যের পণ্যের দাম বেড়ে হচ্ছে পাঁচ টাকা। পাঁচ টাকার পণ্যের দাম বেড়ে হচ্ছে দশ টাকা। আসলেই কী দেশে এতোটা পণ্যের ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে? মূল বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।

নয়তো দিন দিন সিন্ডিকেটের পাহাড় গড়ে উঠছে পুরো দেশ জমায়েত হয়ে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ভোক্তা। তবে হ্যাঁ একথা সত্য যে, আমাদের অর্থনীতি পরিমন্ডল ক্ষতিকর দিকে ধাবিত হচ্ছে। এক কথায় আমরা অর্থনীতির দিক থেকে অনেক বেশি পিছিয়ে পড়তেছি। যা পরবর্তীতে ফিরিয়ে আনতে স্ব স্ব মন্ত্রণালয় তথা অধিদপ্তরের জন্য খুব কষ্টসাধ্য হবে।

আমি ইন্টারমিডিয়েট পড়াকালীন সময়ে শিক্ষকের মুখে শুনেছিলাম যে, অর্থনীতিতে দুটি বিষয়কে পাপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। এর একটি হচ্ছে বেকারত্ব, অন্যটি মূল্যস্ফীতি। বাংলাদেশে দুটিরই বেশ প্রকটতা বিদ্যমান। তাহলে আজ আমরা কোথায় অবস্থান করছি? কোথায় আমাদের গন্তব্যস্থল হচ্ছে তাহলে? তবে বর্তমানে উচ্চ মূল্যস্ফীতি মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে।

গত বছরের অক্টোবর মাসে দেশে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এই মূল্যস্ফীতি চলতি অর্থবছরে সরকারের প্রাক্কলিত মূল্যস্ফীতির তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। এমন পরিস্থিতিতে উচ্চ দ্রব্য মূল্যের কশাঘাতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। কাজেই নাগরিক জীবনে যেমন অস্বস্তিকর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তেমনি স্বস্তিকর অবস্থা ফিরিয়ে আনতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের তুলনায় খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির পরিমাণ অনেক বেশি।

অথচ সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হচ্ছে, দেশে কোনো ধরনের খাদ্যপণ্যের ঘাটতি নেই। কোনো ঘাটতি না থাকা সত্ত্বেও বাজারে পণ্যের দাম কেন অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বাড়ছে, সে বিষয়টি কারোরই বোধগম্য হচ্ছে না। হরহামেশাই দিন দিন বেড়েই চলছে নিত্যপণ্যের দাম। নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয় রয়েছে অথচ আমরা আমজনতা এই মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সেবা নিতে গিয়ে ধাপে ধাপে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি কিন্তু তারপরও কোনো তৎপরতা নেই কেন?

এর গুরু দায়িত্ব কী আমজনতা ব্যতিত আর কারো নয়? বর্তমানে দেশের অর্থনীতিতে যে নানা ধরনের সংকট বিরাজমান, সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল মহলের কোনো দ্বিমত করার সুযোগ নেই। সরকারের বাজেট বাস্তবায়নেও অর্থের সংকট রয়েছে। অর্থের সংকট মোকাবিলায় গত অর্থবছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিপুল পরিমাণ মুদ্রা ছাপিয়ে সরকারকে দিয়েছিল। বাজারে এই গরমিল তারতম্যের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতিও বৃদ্ধি পেয়েছিল। ফলে এক ধরনের টালমাটাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল।

এমন পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন করে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেয়ার নীতি থেকে সরে এসেছে। যদিও অর্থনীতিবিদরা অনেক আগে থেকেই নতুন টাকা ছাপানোর নীতি থেকে সরে আসতে বলেছিলেন। তবে অর্থনীতিতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে তার ফলাফল পেতে অন্তত ১৮০ দিন সময় লাগে।

কাজেই এখন যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে সেগুলোর ফল পেতে আরও কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে এমন প্রশ্ন এসে যায় যে, ততদিন কি তাহলে মূল্যস্ফীতি বাড়তেই থাকবে? এর সঠিক উত্তর কারও জানা নেই। তবে যে উত্তর সবার জানা আছে তা হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে অনেক বেশি আন্তরিক হতে হবে।

বিশেষ করে বাজার ব্যবস্থায় মনিটরিং জোরদার করতে হবে। যেসব নিত্যপণ্যের দাম সিন্ডিকেট করে বাড়ানো হয়, সেগুলোর দাম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সরকার বিপণন সংস্থা টিসিবির মাধ্যমে বাজারে সরবরাহ বাড়াতে হবে। এতে বাজারে ভারসাম্য ফিরে আসবে।

কেবল সিন্ডিকেটের ওপর দায় চাপিয়ে পার পাওয়া যাবে না। সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে সরকারের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। কাজেই জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে সরকারকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সামগ্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতেই হবে। সিন্ডিকেট হচ্ছে আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় চক্র বর্তমান সময়ে।

যারা ভোক্তাদের দুর্দশাগ্রস্ত করার এবং ভোক্তাদের আহাজারি দেখার জন্য সদা প্রস্তুত থাকে সর্বসময়। এই সিন্ডিকেটকে শায়েস্তা করার জন্য স্ব স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানা অফিসার ইনচার্জসহ সকল প্রশাসনিক দপ্তরকে মোবাইল কোর্ট অভিযানে নামতে হবে এবং জনসম্মুখে সিন্ডিকেটদের শাস্তি দিতে হবে।

যাতে একজনকে শাস্তি দিলে যেনো আরো দশ সিন্ডিকেট সতর্ক হতে সক্ষম হবে। সরকার এ বিষয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। 
লেখক : প্রাবন্ধিক ও শিক্ষক



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS