ভিডিও

সংসদে আইনজীবীর চেয়ে ব্যবসায়ী দশ গুণ বেশি

এড. মোঃ মনতেজার রহমান মন্টু

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৪, ০৬:২৫ বিকাল
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৪, ০১:১৯ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে জাতীয় সংসদে আইনজীবী ছিলেন ৯৩ জন আর ব্যবসায়ী ছিলেন মাত্র ৫৪ জন। অথচ তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০২৪ সালের সংসদে আইনজীবীর সংখ্যা মাত্র ২০ জন আর ব্যবসায়ীর সংখ্যা ১৯৯ জন।

বৃটিশ খেদাও আন্দোলনে এই উপমহাদেশে যারা আন্দোলন করেছিলেন তার সিংহভাগই ছিলেন আইনজীবী। মহাত্মা গান্ধী, জহলাল নেহেরু, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, তাঁর বাবা জাহিদ সোহরাওয়ার্দী, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, খাজা নাজিম উদ্দিন সবাই ছিলেন ব্যারিষ্টার। শের-ই-বাংলা ছিলেন ঢাকা হাইকোর্টের এটর্নী জেনারেল।

বঙ্গবন্ধুর বাবা ছিলেন জজ কোর্টের সেরেস্তাদার। বড্ড আশা ছিল ছেলে মুজিবকে আইনজীবী বানাবেন ব্যারিষ্টার বানাবেন। ভর্তি করেও দিয়েছিলেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে আইন বিভাগে। কিন্তু ছেলে মুজিব নিম্ন শ্রেণীর কর্মচারিদের পক্ষে আন্দোলন করতে গিয়ে ১৯৪৮ সালে বহিষ্কৃত হন বিশ^বিদ্যালয় থেকে। কিন্তু ভালবাসা ছিল আইনজীবীদের ওপর।

সেই জন্য ১৯৭০/১৯৭৩ সালে সংসদে ছিলেন ড. কামাল হোসেন, ব্যারিষ্টার এম আমীর-উল-ইসলাম, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজ উদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম.মনসুর আলী, কামরুজ্জামান, জিল্লুর রহমান, মনোরঞ্জন ধর, আব্দুর রাজ্জাক, প্রমূখ সবাই ছিলেন ঝানু ঝানু আইনজীবী।

এই বগুড়া থেকে এড.হাশেমী খান জাহেদী, এড. হাবিবুর রহমান ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সময়কার এমপি। ৭৫-এ পট পরিবর্তনের পর বৃহত্তর বগুড়া থেকে অনেক আইনজীবী এমপি হয়েছেন মন্ত্রীও হয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান সংসদে এই অঞ্চল থেকে কোন আইনজীবী এমপি নেই।

জাতীয় সংসদের অপর নাম আইন প্রণয়নকারি সংস্থা। যখন সংসদে কোন আইনের বিল আসে তখন সেই বিলটি যাচাই বাছাইয়ের জন্য যায় সংসদীয় কমিটিতে। আবার যদি কোন নীতি নির্ধারণী প্রস্তাব সিদ্ধান্ত আসে, তা হতে পারে বাজার কারসাজি, চাউল পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি, বাজার সিন্ডিকেট, ব্যাংক ঋণ সুদ মওকুফ, কোটি কোটি টাকার ঋণ খেলাপী, ট্যাক্স, ভ্যাট, সংযুক্ত তহবিল থেকে ব্যয় অনুমোদন এগুলো সবই তো ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট।

অবশ্যই ব্যবসায়ী এমপিরা চাইবে না ব্যবসায়ীদের ক্ষতি করতে। তারাই সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ। মন্ত্রীও হয়েছেন ব্যবসায়ীদের মধ্যে বেশি। বৃটিশ বিরোধী এবং আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে যে সকল আইনজীবীরা আইন সভাগুলোতে ছিলেন, তাঁদের আইন পেশা থেকে কারো কারো আয় ঈর্ষণীয় পরিমাণে ছিল। সামাজিক অবস্থানও ছিল গৌরবোজ্জ্বল। সেই রাজকীয় পেশা ছেড়ে তাঁরা রাজনীতিতে এসেছিলেন।

এমনো দেখা গেছে তাঁরা পেশা ছেড়ে মন্ত্রী হয়ে অনেক ঋণগ্রস্ত হয়ে আবার মন্ত্রীত্ব চলে গেলে পেশায় ফিরে গিয়ে সেই ঋণ পরিশোধ করেছেন। ৭৫-এ মন্ত্রী কামরুজ্জামান নিহত হলে তাঁর একাউন্টে ৫০২৫ টাকা ছিল। সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজ উদ্দিন আহমেদ এর পরিবার খুব কষ্টে দিনাতিপাত করেছেন। আমি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নই। ব্যবসায়ীরা অনেক মিল শিল্প কলকারখানা স্থাপন করে লাখ লাখ বেকারদের চাকরি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

আবার আইনজীবীরা আইন শাস্ত্র পাঠ করে আদালতে বিচারকার্যে এর চর্চা করে প্রতিনিয়ত। এটি একটা ব্যবসা হলেও বিশেষায়িত। প্রচলিত ব্যবসায়ীদের সংজ্ঞায় আসে না। জাতীয় সংসদের কার্যক্রমের প্রধান দিকটাই যদি দেখা যায় তাহলে বলা সংগত যে আইন প্রণয়নে নিরঙ্কুশ অধিকার শুধু ব্যবসায়ীদের হাতে থাকার ঝুঁকি রয়েছে। এমপিদের কাজ হলো সংসদে আইন তৈরি করা।

গোডাউনে ধান চাউলের বরাদ্দ নেওয়া নয়, ভিজিডি, ভিজিএফ কার্ড বিতরণ করা হয়, এগুলো চেয়ারম্যানদের কাজ। তা যদি করে এমপিরা তাহলে চাউল পেঁয়াজের দাম কমবে কেমনে। বাজার নিয়ন্ত্রন হবে কিভাবে।

বঙ্গবন্ধু মাত্র কয়েকজন কোটিপতির বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর শাসন আমলে কেউ কোটি কোটি টাকার মালিক আইনজীবী এমপি ছিলেন না। এখনো যে কয়েকজন আইনজীবী এমপি সংসদে আছেন তারাও কোটি কোটি টাকার মালিক নন মর্মে মনোনয়ন দাখিল হিসাব বিবরণীতে দেখা যায়। কিন্তু ব্যবসায়ী এমপিদের হিসাব বিবরণীতে ২৫ জনেও বেশি এমপিরা ১০০ কোটি থেকে ১০০০ কোটি টাকার মালিক।

বলাবাহুল্য স্বাধীনতার পর বেশ কয়েকজন ছাত্রনেতা বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৩ সালের সংসদে এমপির মনোনয়ন চাইতে গেলে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ওই সোভিয়েত রাশিয়া বৃটেন ভারতের পার্লামেন্টে তাকিয়ে দেখ তাদের মাথায় টাক তাদের মাথা সাদা তাদের মুখে দাঁত নেই।

তারা পড়তে পড়তে এ ব্যবস্থা। বঙ্গবন্ধু হয়তো আইনজীবীদের উদ্দেশ্য করেই একথা বলেছিলেন। অথচ বর্তমানে দেশে শত শত ব্যারিষ্টার শত শত আইনে ডক্টরেট থাকা সত্ত্বেও বর্তমান সংসদে তাঁদের অবস্থা করুণ। কিন্তু ব্যবসায়ী মন্ত্রী ডজনে ডজন। বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবদ্দশায় আইনজীবীর সাথে সাথে মোক্তারদের কেউ এমপি করেছিলেন।


লেখক: আইনজীবী ও কলামিষ্ট

01711-425981



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS