ভিডিও

দখল ও দূষণের শিকার নদী

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৪, ০৫:৪৮ বিকাল
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৪, ০৫:৪৮ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

বাংলাদেশকে বলা হয় নদীর দেশ। দুনিয়ার কোনো দেশে বাংলাদেশের মতো এত নদ-নদী, হাওড়-বাওড়, হ্রদ-খাল জলাশয়ের অস্তিত্ব নেই। তারপরও নদ-নদীর অস্তিত্ব নিয়ে গভীর সংকটে ভুগছে বাংলাদেশ। দেশের অভিন্ন  ৫৪টি নদ-নদীর ৫৩টির উৎস ভারত হওয়ায় বাংলাদেশকে পানির ন্যায্য হিস্যার জন্য প্রতিবেশী দেশের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে।

আমাদের নদ-নদীগুলো এ মুহূর্তে নানা ধরনের সংকটের সম্মুখীন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে উজানে পানি প্রত্যাহার, দেশের অভ্যন্তরে দখল, দূষণ, ভাঙন ও বালু উত্তোলন। আশার কথা নদ-নদী বাঁচাতে সরকারের শীর্ষ মহল দায়িত্বশীল ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনায় নগর সংশ্লিষ্ট নদীগুলোতে চলছে দখল উচ্ছেদ অভিযান।

নদীর আপন গতিতে চলা বাধাগ্রস্ত করছে মানুষ। নদীর চলাকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে সে নদীকে কেন্দ্র করেই কিন্তু মানব সভ্যতা বিকশিত হয়েছে। নদীকে থামানো মানে প্রকৃতিকে থামানো। প্রকৃতিকে থমকে দিয়ে মানব সভ্যতা গতি পাবে এ ধারনা মানুষ এখন উপলব্ধি করতে পারছে। সে জন্য সারা পৃথিবীতে চলছে নদী বাঁচাও আন্দোলন। কিন্তু আমাদের দেশে নদী যেন কারো কারো পৈতৃক সম্পত্তি। যার ক্ষমতা আছে সে-ই নদীর ওপর অত্যাচার চালানোর অধিকার ফলাচ্ছে।

দেশের সব নদী, বিল ও খালগুলোর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ এবং দূষণ বিরোধী অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি উচ্ছেদ অভিযানের পর আবারও যাতে দখলের প্রক্রিয়া শুরু না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ ইতিপূর্বে দেশের বিভিন্ন নদীর তীরভূমি থেকে এ পর্যন্ত ২১ হাজার ৪৪৩টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এতে ৭২৩ দশমিক ৬২ একর তীর ভূমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।

একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে তৎকালীন নৌ পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী এ তথ্য জানান। পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ, দখলের পাশাপাশি ভয়াবহ দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে দেশের নদ-নদী। ৫৬ নদ-নদীর পানি পরীক্ষায় সবকটিতেই মিলেছে অতি মাত্রার দূষণ। এর মধ্যে জলজপ্রাণী বেঁচে থাকার মতো পর্যাপ্ত অক্সিজেন নেই ২৬টিতে।

নদী দূষণের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে জীববৈচিত্র্য ও জনজীবনে। হারিয়ে যাচ্ছে অনেক মাছ ও জলজপ্রাণী। দূষণের বিষ খাদ্য চক্রের মাধ্যমে প্রবেশ করছে মানব শরীরে। যা জন্ম দিচ্ছে কিডনি বিকল, ক্যান্সার সহ নানা জটিল রোগের। যাচ্ছে প্রাণ। বাড়ছে চিকিৎসা ব্যয়। বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে নদ-নদী দূষণের আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা।

রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি) ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের ৫৬টি নদ-নদীর পানি গাজীপুরের গ্রিনবার্ড ল্যাবে পরীক্ষা করে এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন দিয়েছে। তাতে দেখা যায়, ৫৬টির মধ্যে ২৬টির পানিতে জলজ প্রাণীর সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় দ্রবীভূত অক্সিজেন (ডিও) নেই।

৫৬ নদ নদীতেই বিপজ্জনক মাত্রায় প্লাস্টিক ও রাসায়নিক দূষণ রয়েছে। আমেরিকান পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুযায়ী, প্রতি লিটার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন ৫ মিলিগ্রামের নিচে নামলেই মাছসহ জলজপ্রাণীর শ্বাস নিতে সমস্যা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদী দূষণের প্রভাব বহুমাত্রিক। দূষিত পানি দিয়ে সেচ দেওয়ায় বিষ শাকসব্জি ও ফসলের মাধ্যমে মানুষ ও গবাদি পশুর দেহে ঢুকছে। মাছের মাধ্যমে ঢুকছে মানবদেহে। এতে ক্যান্সার, কিডনি বিকল সহ নানা প্রাণঘাতী রোগ বাড়ছে। এরই মধ্যে শতাধিক প্রজাতির মাছ প্রায় বিলুপ্ত।

এ ছাড়া দূষিত পানির শেষ গন্তব্য হচ্ছে বঙ্গোপসাগর। গবেষণায় বঙ্গোপসাগরে আহরিত মাছের দেহে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি মিলেছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, সমতলভূমির শতকরা পাঁচভাগ নদী ভাঙনের মুখে পড়ে।

নদী ভাঙনে প্রতি বছর দশ হাজার হেক্টর আবাদি জমি হারিয়ে যাচ্ছে। কেউ যেন নদী দখল-দূষণ করতে না পারে সে জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, নদ-নদী না বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে না। দূষণ এবং অবৈধ দখলের হাত থেকে নদীকে বাঁচাতেই হবে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS