ভিডিও

মৃত্যুর ফাঁদ রেলক্রসিং

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৪, ০৮:২২ রাত
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৪, ০৮:২২ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

দেশের রেলক্রসিংগুলো নিরাপদ নয়। নিরাপত্তার অভাবে প্রায়ই রেলক্রসিংয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। তাতে করে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। একটি দুর্ঘটনার পর সংশ্লিষ্টদের মাঝে বেশ দৌঁড় ঝাঁপ দেখা যায়। কিন্তু তারপর আবারও পুরনো অবস্থায় ফিরে যায়। বিভিন্ন সময় প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, রেলক্রসিংগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল নেই।

আবার যেখানে নিরাপদ কর্মি রয়েছেন তারাও সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন না। তারা তাদের দায়িত্ব পালন না করে অন্য কাজে ব্যস্ত থাকেন, যার ফলে হরহামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা। বিভিন্ন সময় রেলক্রসিংয়ে নিরাপত্তার দাবি তোলা হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না।

রেলক্রসিংগুলোর ৯৫ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী সেখানে কোন প্রহরী না থাকা-এ কথা যেমন সত্য, তেমনি পথচারী বা বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালকরাও এর দায় এড়াতে পারেন না। সাধারণত দুই কারণে রেলপথে সবচেয়ে দেশি মানুষ মারা যায়-রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় এবং ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে। ট্রেনের নিচে কাটা পড়লে রেল কর্তৃপক্ষ কোন দায় নেয় না; উল্টো মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

অন্যদিকে, রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দায় এড়ানোর চেষ্টা করা হয়। রেলওয়ের হিসাব মতে, সারাদেশে রেলক্রসিংয়ের সংখ্যা ২ হাজার ৫৪১। এসব রেলক্রসিংয়ে গত কয়েক বছরে অন্তত হাজার খানেক দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং এতে আহত-নিহতের সংখ্যাও প্রচুর।

দেশের অসংখ্য অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে নামকাওয়াস্তে একটি নোটিশ টাঙিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে রেল বিভাগ। এটি অগ্রহণযোগ্য। অবৈধ রেলক্রসিংয়ের পাশাপাশি বৈধগুলোতেও প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনা রোধে ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে রেলক্রসিংগুলো অবশ্যই সুরক্ষিত করতে হবে।

বলা দরকার, রেলওয়ের অনুমতি ছাড়াই যেসব রেললাইনের উপর দিয়ে অবৈধভাবে যানবাহন ও পথচারী চলাচল করছে, সেখানেও প্রায় প্রতিনিয়ত ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রসঙ্গত বলতে চাই, এর আগে এমন তথ্যও সামনে এসেছিল যে, সারাদেশে ২ হাজার ৮৭৭ কিলোমিটার রেলপথ বৈধ ক্রসিংয়ের সংখ্যা ১ হাজার ৪১২টি, এর মধ্যে ৯৪৬টিতে অর্থাৎ ৬৭ শতাংশে গেট নেই। এমনকি যান নিয়ন্ত্রণের কোন কর্মিও নেই।

নেই সংকেত বাতি। এছাড়া রেললাইনের উপর দিয়ে স্থানীয় লোকজন অবৈধ রাস্তা নির্মাণ করায় এ হিসেবের বাইরে আরও বিপুল সংখ্যক মরণফাঁদ তৈরি হয়েছে বলেও জানা যায়। আমরা মনে করি, এই পরিস্থিতি কতটা ভয়ানক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে তা আমলে নেওয়ার বিকল্প থাকতে পারে না। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যত দ্রুত সম্ভব উপযোগী হতে হবে। নানা ধরনের অসচেতনতা, অব্যবস্থাসহ বিভিন্ন কারণে মানুষ চলে যাবে না ফেরার দেশে-যা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

সারাদেশে রেলওয়ের অনুমোদিত রেলক্রসিং ছাড়াও স্থানীয় মানুষ তাদের চলাচলের সুবিধার্থে তৈরি করে নিয়েছে অনেক রেলক্রসিং। এসব ক্রসিংয়ে শুধু সতর্কীকরণ সাইন বোর্ড দেয়া যাবে। ফলে এসব ক্রসিংয়েও দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। অনুমোদিত এবং অবৈধ রেলক্রসিংয়ে যানবাহন পারাপারের দায়িত্ব রেল কর্তৃপক্ষের নয়।

এসব দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে রেলওয়ের কোন ধরনের দায়ভারও থাকে না। ফলে অবৈধ ক্রসিংয়ে মানুষ এবং যানবাহনকে নিজ দায়িত্বে পার হতে হয়। এভাবে সারাদেশের অধিকাংশ রেলক্রসিংই অরক্ষিত। অরক্ষিত রেলক্রসিং যেমন সুরক্ষিত রেলক্রসিংয়েও যানবাহন চালকদের অসতকর্তা, সিগন্যাল না মানা, তেমনি ক্রসিংয়ের গেট লাগানোর পরও যানবাহন নিয়ে পেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টার কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে।

আমরা মনে করি, অরক্ষিত রেলক্রসিংগুলোর সুরক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে রেলওয়ের যে আর্থিক অসঙ্গতি রয়েছে তা পূরণে প্রয়োজনীয় বরাদ্দের পাশাপাশি রেলক্রসিংগুলোতে পাহারাদার নিয়োগের ব্যবস্থা করা জরুরি।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS