ভিডিও

জন্মদিনকে আশির্বাদ হিসেবে উপলব্ধির সুযোগ

জাহানারা জুঁই

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৪, ০৮:২১ রাত
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২৪, ১২:৫০ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

দিনপঞ্জিকার হিসেবে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি  ছিলো করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা, মোজাম্মেল হক ওরফে লালু ভাইয়ের জন্মদিন। আমার কাছে জন্মদিনকে উদযাপন করার মতো কিছু বলে কখনোই মনে হয় না। বরং নিজের জীবন থেকে আরও একটা বছর শেষ হয়ে গেল মনে করে কষ্ট হয়।

মোজাম্মেল হক, তাঁর সম্পর্কে আমার অনেক কিছু লেখার আছে, বলার আছে। আমি কবে প্রথম বগুড়া করতোয়া স্কুলে গেছি মনেও নেই। স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে তিনি তাঁর গুরু, জব্বার ভাইকে নিয়ম করে আমন্ত্রণ জানান। আমি তাঁর জব্বার ভাইয়ের পাঠ্যবই ডিজিটাইজ করার স্বপ্ন পূরণ করার (দুঃসাধ্য চেষ্টার) কাজটা করি বলে তিনি আমাকেও মনে রাখেন।

আমি মঞ্চের চেয়ারে বসবার সময়ে খুঁজি কোন চেয়ারে লালু ভাই (এ নামেই তাঁর আপনজনেরা তাঁকে সম্বোধন করেন) বসেন, আমি গিয়ে ঠিক তাঁর পাশের চেয়ারটায় বসতে সচেষ্ট থাকি। এর কারণ, অনেক কিছু জানা, শেখা। এ মানুষটিকে কাছে থেকে দেখলে জানা যায়, কাজকে ভালোবাসা কাকে বলে, কত প্রকার, কী কী? আদ্যোপান্ত তিনি একটি প্রতিষ্ঠান। আমাকে তিনি জুঁই আপা সম্বোধন করেন। কী যে মায়া লাগে তিনি যখন ডাকেন এ সম্বোধনে আমাকে!

চেয়ারে বসে আমাকে তিনি ফিসফিসিয়ে বলেন, জুঁই আপা, আপনার মতো করে আপনি বলবেন, বাকিদের মতো করে বলার দরকার নাই। কতটা ভরসা হলে এমনি করে কথার স্বাধীনতা দেন কেউ! নিজের আসনে বসে থেকেও তাঁর নজর মাঠে একটা ময়লা কাগজকেও এড়ায় না, চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে সে আবর্জনা তুলে নিয়ে তিনি ডাস্টবিনে ফেলেন। উপস্থাপককে দু’চারটে পাতা স্পিপ করতে বলেন ইশারায়, তাঁর জব্বার ভাইয়ের সময়টাকে কাজে লাগাতে চান তিনি।

প্রতিবার অডিটোরিয়ামে বিরাটাকার মনিটরে জাতীয় সঙ্গীত বাজবার সময়ে দাঁড়িয়ে আমি চোখের পানি গড়িয়ে পড়তে দিই। সহকর্মীদের ধমকাতে গিয়েও মুখে হাসি লেগেই থাকে। মোস্তাফা স্যারের মন্ত্রীত্বে বাংলাদেশের এই একজন মানুষ কী যে খুশি হয়েছিলেন, দেখেছি। জব্বার ভাইকে খুশি প্রকাশ করবার প্রয়াসের এক সেন্টিমিটার জায়গাও তিনি ছাড়েননি। অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে মাইক্রোফোনে কথা বলবার সময়ে আমি একবার বলেছিলাম, ঢাকা থেকে বগুড়ায় এসে জাব্বার ভাই জোব্বার ভাই হয়ে যান।

আরেকবার বলেছিলাম, লালু ভাই, আপনার গুরুর কাজ শেষ হলে, তিনি আমাকে ছুটি দিলে, আমার খুব ই”ছা, আপনার স্কুলে আপনার সাথে কাজ করার। আমাকে শুধু স্কুলের ১টা বেঞ্চ দেবেন ঘুমাতে, করতোয়ার পানিতে পা ধুয়ে স্কুলে ঢুকে পড়ব। তিনি এর উত্তরে দু’বার দুটি কথা বলেছিলেন।

১. জেশমিন (বগুড়ার আঞ্চলিক  উচ্চারণে) আপা আমার স্কুলে আসলে, আমার স্কুলের চেহারাটাই বদলে যেতো!
২. জেশমিন আপা আমার স্কুলে আসলে স্কুল বিল্ডিং ওপরের দিকে আরও বাড়াতে হবে। গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক কেমন হয় জানতে চাইলে মোস্তাফা স্যার আর লালু ভাইকে কাছাকাছি শুধু দেখবেন, উপলব্ধি হবে।

লালু ভাই নিজের ভাষায় যা প্রকাশ করেন ‘জোব্বার ভাই’ তাঁর কাছে কী, তাঁর চাইতে অনেক বেশি আমি/আমরা উপলব্ধি করি।

লালু ভাইয়ের উপলব্ধি জ্ঞান শব্দকেও হার মানায়। আমি আপনাকে এক নজর দেখার সুযোগকেও কখনো স্বেচ্ছায় হারাতে চাই না, লালু ভাই! এমনি হাসিখুশি থেকে, সুস্থ থেকে আপনার জন্মদিনকে আশীর্বাদ হিসেবে উপলব্ধির সুযোগ করে দেবেন আমাদের, প্রতিবার, বারবার এবং আরও অনেক বছর ধরে, সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা।


লেখক : আইটি বিশেষজ্ঞ



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS