ভিডিও

আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়ছে

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২৪, ০৬:১৪ বিকাল
আপডেট: মার্চ ০১, ২০২৪, ০২:১২ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

বিদ্যুতের দাম বাড়লে সাধারণ মানুষের ব্যয়ও বাড়ে। আর এর প্রভাব পড়ে নানা ক্ষেত্রে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, আগামী ১ মার্চ থেকে গড়ে ৭ শতাংশ হারে দাম বাড়বে। রোববার এক বেসরকারি গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাতকারে তিনি একথা বলেন। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করবে বলে জানান তিনি।

আগামী তিন বছর ভর্তুকির চাপ সামলাতে বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করা হবে। প্রসঙ্গত, বর্তমান সরকারের ১৫ বছরের মেয়াদে গ্রাহক পর্যায়ে এ পর্যন্ত ১৩ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া পাইকারি পর্যায়ে বাড়ানো হয়েছে ১২ বার। গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম পাঁচ শতাংশ হারে বাড়ানো হয়, যা ওই বছরের মার্চ থেকে কার্যকর হয়।

স্মর্তব্য যে, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিতে দুর্ভোগে পড়ে দেশের মানুষ। কেননা, এর ফলে দ্রব্যমূল্য বাড়ারও আশংকা তৈরি হয়। পরিবহণ ভাড়াসহ নানা ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ে। ফলে বিদ্যুতের দাম বাড়ার বিষয়টিকে সামনে রেখে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া।

আমরা মনে করি, বিদ্যুতের দাম বাড়লে এর নেতিবাচক বিষয়গুলো কী হতে পারে সেটি আমলে নিতে হবে এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মনে রাখা দরকার, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণে যেমন উৎপাদন ব্যয় বাড়ে, তেমনি গ্রাহক পর্যায়ে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া উৎপাদন ব্যয় বাড়ার কারণে উদ্যোক্তারা ক্ষতির সম্মুখীন হবে এমন আশংকাও থেকে যায়। সঙ্গত কারণেই এসব প্রেক্ষাপটের সব দিক পর্যালোচনা করে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি আমলে নেওয়া সমীচীন বলেই প্রতীয়মান হয়। 
যারা বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির বিরোধিতা করেন, তারা এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন, বিভিন্ন খাতে অপচয় বন্ধ করলে ৪০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি পুষিয়েও ৩ হাজার কোটি টাকা লাভে থাকবে বিদ্যুৎ সংস্থা।

ব্যবসায়ীরা এও বলেছেন, ফের দাম বাড়লে শিল্প-কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। তাদের পক্ষে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা হবে কঠিন। আমরা অতীতেও এ কলামে নানা সময়ে বলেছি, বিদ্যুৎ ঘাটতি দূর বা ডলারের সঙ্গে মূল্য সমন্বয় যে নামেই আখ্যায়িত করি না কেন-আসলে দাম না বাড়িয়ে আমরা বিদ্যুৎ অপচয় রোধ করতে পারি। কম খরচে উৎপাদনেরও পথ আছে।

বিদ্যুৎ অপচয় বন্ধ ক রাও দুরূহ নয়, যদি দায়িত্বশীলরা সচেষ্ট হন এবং সংশ্লিষ্ট সবার জবাবদিহি নিশ্চিত করা যায়। উৎপাদনের ক্ষেত্রে সস্তা জ্বালানিভিত্তিক বেইজলোড প্লান্ট স্থাপন করা যেতে পারে তেমনি ভাড়া ভিত্তিক উচ্চ মূল্যের ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে সরকারকে বিদ্যুৎ কেনার ব্যাপারেও সাশ্রয়ী হতে হবে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর তিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদ ধরে বিদ্যুতের যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল, তাতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো তাদের বিনিয়োগ কার্যত উঠিয়ে নিয়েছে। কাজেই তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনায় চুক্তি নবায়ন করার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ভাবা প্রয়োজন।


আমরা মনে করি, সামগ্রিকভাবে ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম সহনীয় রাখতে স্বল্পমূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের বোধগম্য নয়, এসব উদ্যোগ না নিয়ে দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে লোকসান ঠেকানো কিংবা ঘাটতি পূূরণের এই চিন্তা আসে কেন? মনে রাখা প্রয়োজন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রভাব শুধু ভোক্তার ওপরই পড়ে না, পণ্য উৎপাদন খরচও বেড়ে যায়।

বিদ্যুতের ভর্তুকির চাপ যাতে সরকারকে বইতে না হয়, সে জন্য যে কর্মপরিকল্পনা ও নীতি দরকার, এর কার্যকর উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয় না। চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে ফারাক এখন অনেক কমেছে। তবে অনিয়ম-দুর্নীতি কমেনি-এই অভিযোগ রয়েছে। আমরা মনে করি, যথাযথ নীতিমালার ভিত্তিতে বহুমুখী জ্বালানি ব্যবহারের দূরদর্শী কর্মপরিকল্পনার বিকল্প নেই।

আমরা মনে করি বাজার নিয়ন্ত্রণ না করে বিদ্যুতের দাম বাড়ালে তা হবে মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘা। তাই আগে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে বিদ্যুৎ-গ্যাসের ক্ষেত্রে ভাবা যেতে পারে। বিদ্যুৎ খাতে লোকসান যেমন কাম্য নয় তেমনি দাম বৃদ্ধির ফলে নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক -এটাও প্রত্যাশিত হতে পারে না।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS