ভিডিও

দেশপ্রেমিকরাই সিন্ডিকেট বিরোধী

মোঃ গোলাম মোস্তফা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২৪, ০৭:১৫ বিকাল
আপডেট: মার্চ ০১, ২০২৪, ০১:০৮ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

দেশে তেলের দাম বৃদ্ধি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং করোনা পরিস্থিতির অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি করার প্রবণতা জেগে উঠে এক শ্রেণির অধিক মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের মধ্যে। কোন কারণ ছাড়াই সেই থেকে আজ পর্যন্ত দ্রব্যমূল্য বৃ্িদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। কোন জিনিসের দাম বাজারে সরবরাহ কম থাকার কারণে একবার বৃদ্ধি পেলেও বৃদ্ধি পাওয়া দাম আর কমে না।

কিছুদিন পর ঐ বৃদ্ধি পাওয়া দামের উপর আবারো দাম বৃদ্ধি করে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। যেন বিবেকহীন এক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কবলে পড়েছে পুরো দেশ। এসব দেশপ্রেমহীন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে নিষ্পেশিত হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষ। দ্রব্যমূল্য উর্ধ্বগতির কারণে তাদের আয়ের সাথে ব্যয় মিলাতে না পেরে হিমশিম খাচ্ছে সর্বদা।

আমদানি করা পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে দেশে দাম বেঁধে দেওয়া হয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো সয়াবিন তেল। সরকার যখন এই তেলের দাম ৫ টাকা বৃদ্ধি করে তখন ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামত দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে।

আবার যখন লিটারে ৫ টাকা কমিয়ে দেয় তখন ব্যবসায়ীরা আর কমাতে চায় না, ফলে দাম কমানোর সুফল থেকে বঞ্চিত হয় সাধারণ মানুষ। আবার দেশেই উৎপাদন হচ্ছে আলু, ডিমসহ অসংখ্য নিত্যপণ্য। কোন কারণ ছাড়াই পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও ২০ টাকা কেজির আলু এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজিতে। অন্যান্য সবজির হিসাবেও মিলে না পণ্যমূল্য। ভরা মৌসুমেও শিম, ফুলকপি,পাতাকপি, বেগুন, ঢেড়সসহ শীতকালীন শাকসবজি সবই যেন আকাশচুম্বী মূল্য। ইতিমধ্যেই বেগুনসহ বেশ কিছু সবজির মূল্য সেঞ্চুরী হাঁকিয়েছে। ৫০ টাকা কেজির নিচে কোন সবজি পাওয়া যায় না বাজারে।

মাছের দাম শুনে ফিরে যায় বহু ভোক্তা, ২ কেজি ওজনের সিলভার কার্প মাছ ৩ শ ২০ টাকা কেজি। ছোট ও দেশি মাছতো কেনাই যায় না। টেংরা মাছ ও পাবদা মাছ ৪ শ থেকে ৫ শ টাকা কেজি। গরুর মাংস কিছুদিন একটু কম দামে বিক্রি হলেও আবারো ৭ শ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন মাংস বিক্রেতারা। আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালী বাজারের ব্যবসায়ীরা ৫ শ ৫০ টাকা কেজিতে মাংস বিক্রি করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন। মাত্র ৪/৫ কিলোমিটার দূরত্বে আদমদীঘি উপজেলা সদর ও সান্তাহারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭ শ টাকা কেজি দরে।

রায়কালী বাজারের মাংস ব্যবসায়ীরা হয়ত একটু কম মুনাফা নিচ্ছেন কিন্তু যে সব ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট তৈরি করে ৭ শ টাকা কেজিতে গরুর মাংস বিক্রি করছেন তারা অধিক মুনাফার লোভে হারিয়েছেন দেশ প্রেম। তাদের বিরুদ্ধে সরকারিভাবে কঠোর পদক্ষেপ নিলে কোন অন্যায় হবে না। চালের এই ভরা মৌসুমে অতি মুনাফা লোভী এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা নতুন চাল শুরু করেছেন। তারা তাদের গুদাম ঘরে চাল মজুত রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দফায় দফায় চালের দাম বৃদ্ধি করে চলেছেন।

মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে কোন কারণ ছাড়াই চালের কেজি প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এখন মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪/৫৫ টাকা কেজি, বিআর ২৮ চাল ৬০ টাকা কেজি, মিনিকেট  চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজিতে। সয়াবিন তেল ১৬৮ টাকা লিটার ,ছোলা ১০০ টাকা কেজিতে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। পিঁয়াজের দাম ২০/২৫ টাকা বাড়িয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০/৯০ টাকা কেজিতে। ডিমের দাম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়।

সবকিছূতেই দাম বাড়তি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। দাম বৃদ্ধির এই অশুভ প্রবণতার এখনই লাগাম টেনে ধরতে না পারলে ভবিষ্যতে দেশে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে। বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছিল। তাই সরকার গঠনের পর প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কঠোর নির্দেশনা জারি করেন। সেই থেকে সারা দেশে প্রশাসন যন্ত্র ব্যবহার করে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কবল থেকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। নতুন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীগণ কড়া হূঁশিয়ারী দিয়ে হাঁকডাক শুরু করেন।

বড় বড় কিছু মজুতদারদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করেন। হাট বাজারগুলোতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি)গণ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অভিযান পরিচালনা করে চলেছেন। কিন্তু এত কিছুর পরেও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না কিছুতেই। শুধু সিন্ডিকেট নয় সকল বিক্রেতাদের মন মানসিকতাই গড়ে উঠেছে অধিক মুনাফার লোভ। গ্রামের সাধারণ বিক্রেতারাও এখন বেশি দামে জিনিস বিক্রিতে ইচ্ছূক। দেশ ও জনগণের ভালমন্দ চিন্তা যেন কারও মধ্যেই নেই।

দেশ প্রেম জাগ্রত করতে না পারলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ যে অসম্ভবই থেকে যাবে। তাদের দেশ প্রেমহীনতার কারণে কষ্ট পাচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন বিত্ত কোটি কোটি মানুষ। দুর্বিষহ হয়ে উঠছে তাদের নিত্যদিনের জীবন প্রবাহ। এমন বিবেক কবে জাগ্রত হবে ব্যবসায়ীদের মাঝে। পবিত্র রমজান মাস আসার পূর্বেই দাম বাড়ানোর এসব অশুভ তৎপরতা বন্ধ করা না গেলে মুসলমানদের রোজার মাসে কি পরিস্থিতি দাঁড়াবে তা সহজেই অনুমেয়।


লেখক: অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক
সাংবাদিক ও কলামিস্ট

01718-017885



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS