ভিডিও

খতনায় শিশু মৃত্যুতে শঙ্কা

প্রকাশিত: মার্চ ০১, ২০২৪, ০৬:৪১ বিকাল
আপডেট: মার্চ ০১, ২০২৪, ০৬:৪১ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

খতনার মতো ছোট অস্ত্রোপচার (শর্টকেস) নিয়ে এখন দেশজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে পাঁচ বছরের শিশু আয়ান ও স্কুল শিক্ষার্থী আয়হামের মৃত্যুর পর অভিভাবক ও স্বজনরা সন্তানদের খতনা নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন। যারা খতনার অস্ত্রোপচার নিয়ে আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন, তাদের অনেকে আবার প্রাচীন পদ্ধতিতে (হাজাম দিয়ে) খতনা করানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

একমাত্র সন্তান রাতুলকে নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা জামিলা খাতুন থাকেন ঢাকার রামপুরা মহানগর প্রকল্পে। ছেলের বয়স ১০ পেরিয়ে যাওয়ায় দ্রুত তার খতনা করানো নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। রমজানের ছুটিতে খতনা করানোর বিষয়টি চূড়ান্ত করেছিলেন তারা। কোন হাসপাতালে কবে কোন চিকিৎসককে দিয়ে খতনা করাবেন তাও ঠিকঠাক।

তবে মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে খতনা করাতে গিয়ে ঢাকায় দুই শিশুর মৃত্যু এবং নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে অতিরিক্ত চামড়া কেটে ফেলায় মারাত্মক রক্তক্ষরণের ঘটনায় তারা এখন ভীষণভাবে আতঙ্কিত। খতনা করার কথা মনে করে রাতুল ঘুমের মধ্যে আঁতকে উঠছে বলে জানান তার মা। একই অবস্থা মাতুয়াইলের বাসিন্দা প্রকৌশলী সাইদুর রহমানেরও।

দুই দিন আগে রংপুরের কর্মস্থল থেকে এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে গত রোববার তিনি ঢাকায় এসেছেন ৭ বছরের ছেলে সায়মনের খতনা করানোর উদ্দেশ্যে। কিন্তু ২০ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে মালিবাগের জেএস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে খতনা করাতে গিয়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষার্থী দশ বছর বয়সি আহনাফ তাহমিন আয়হামের মৃত্যুর ঘটনায় তার পুরো পরিবার এখন আতঙ্কিত। খতনা করার কথা ভেবে ভয়ে শিউরে উঠছেন সায়মনের বাবা-মাও।

শুধু রাতুল-সায়মান বা এদের এই দুই পরিবারই নয়, খতনা নিয়ে উদ্বেগ আতঙ্কে রয়েছে সারা দেশের লাখ লাখ অভিভাবক ও শিশু। আগের মতো হাজাম দিয়ে নাকি অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদি দিয়ে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক দিয়ে খতনা করানো উচিত তা নিয়ে নতুন করে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়েছেন অনেকেই। কাকে দিয়ে কখন কীভাবে খতনা করালে সন্তানের জীবন ঝুঁকি বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যায় পড়বে না-তা নানাভাবে খোঁজ খবর নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবছেন সবাই।

এদিকে খতনা করাতে গিয়ে দুই শিশুর মৃত্যুর পর দুটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানেরই লাইসেন্স এবং চিকিৎসকদের অ্যানেসথেসিয়া করানোর নিবন্ধন না থাকায় বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিভাবকরা অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, হাসপাতাল-ক্লিনিকে কোথায় কীভাবে কারা খতনা করছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তা সঠিকভাবে নজরদারি করছে না। এ সুযোগে আনাড়ি চিকিৎসকরা যেনতেন ভাবে শিশুদের খতনা করছে। এতে মৃত্যু ঝুঁকি ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা বাড়ছে। অথচ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এ ব্যাপারে নির্বিকার রয়েছে।

যদিও চিকিৎসকরা বলছেন, শিশু আয়ান ও আয়হামের মৃত্যু একেবারেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা। খতনা করাতে গিয়ে মৃত্যু কিংবা শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি নেই। তবে খতনা করানোর আগে বেশ কিছু বিষয় জানা জরুরি। খতনা করার আগে ও পরে কিছু বিষয়ে সতর্কতা মেনে চললে এই প্রক্রিয়া শতভাগ নিরাপদ বলেই মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

তারা জানান, বর্তমানে কিছু ডিভাইস, এমনকি লেজারের মাধ্যমেও খতনার সার্জারি হচ্ছে। তবে ডিভাইস ব্যবহার করা হলেও ব্যবহারকারী চিকিৎসক প্রশিক্ষিত কি-না, সেটা জেনে নেওয়া জরুরি। দেশে পর্যাপ্ত অবেদন বিদ ও এনআইসিইউ সুবিধা না থাকায় অনেক সময় শিশু মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে।

তাই সন্তানের অস্ত্রোপচারের আগে কোন ধরনের অ্যানেসথেসিয়া ব্যবহার করা হবে, জেনে রাখা জরুরি। নিবন্ধিত বা লাইসেন্স প্রাপ্ত হাসপাতাল, ক্লিনিকে অপারেশন থিয়েটারে অবশ্যই অপারেশন থিয়েটার শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS