ভিডিও

বিদেশি বিনিয়োগে স্থবিরতা

প্রকাশিত: মার্চ ০৩, ২০২৪, ০৫:৩৬ বিকাল
আপডেট: মার্চ ০৪, ২০২৪, ০১:০১ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জনের প্রশ্নে বিদেশি বিনিয়োগের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে বিনিয়োগ বাড়ানোসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখা জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। সম্প্রতি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, দেশে প্রত্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কমেছে। গত ২০২১-২২ অর্থ বছরে বাংলাদেশ যেখানে ৪৬৩ কোটি ৬০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল।

গেল অর্থ বছরে তা কমে ৪৫০ কোটি ডলারে নেমেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকে নিট এফডিআই বলা হয়। আলোচিত অর্থ বছর নিট বিদেশি বিনিয়োগও কমেছে। এ সূচকটি আগের বছরের চেয়ে ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ কমে ১৬১ কোটি ডলার হয়েছে। আগের অর্থ বছরে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১৮২ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

আমরা পত্র পত্রিকার খবরেই জেনেছি এখানে বিদেশি বিনিয়োগে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। বছরের পর বছর দেশের মানুষকে বিদেশি বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা নিয়ে কত না কথা শোনানো হয়েছে সেই অতীত থেকে যা আজও চলমান। রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ খরচ করে কত না আয়োজন করা হয়েছে। এর জন্য কত লোকের বিদেশ সফর হচ্ছে কিন্তু কাজের কাজ প্রায় কিছুই হচ্ছে না।

বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে না বললেই চলে। উপরন্তু আগ্রহী বিদেশিরা বিনিয়োগের লক্ষ্যে বাংলাদেশে এসেও নানা জটিলতা ও অসহযোগিতার কারণে বিনিয়োগ না করেই ফিরে গেছেন-এমন খবরও উঠে এসেছে আলোচনায়।

বিদেশি বিনিয়োগ পর্যবেক্ষকরা বলছেন বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ সবচেয়ে বড় বাধা কয়েকটি। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে দুর্নীতি। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দিতে আইনের দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও মাত্রাতিরিক্ত সময়ক্ষেপণ, দুর্বল অবকাঠামো ও গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট, জমির অভাব ও ক্রয়ে জটিলতা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বড় অংকের ঋণ জোনালে সক্ষমতার অভাব এবং অংকের ঋণ জোগানে সক্ষমতার অভাব এবং স্থানীয়দের সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের যোগসূত্র ও সমন্বয়ের অভাব। এর বাইরেও বিনিয়োগকারীরা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সুশাসনের অভাবকে দায়ী করে থাকেন।

বাংলাদেশের প্রচার, আমন্ত্রণ কিংবা অন্য কোনো কারণে নয়, মূলত এখানকার সস্তা শ্রম ও স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে প্রাপ্ত নানা সুবিধার কারণে আকৃষ্ট হয়ে অনেক বিদেশি এখানে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু এমন কথা মুখে মুখে প্রচলিত যে এখানে এসে পাঁচটা মন্ত্রণালয়, ১০টা দপ্তর ঘুরেও যখন শিল্প শুরুর প্রাথমিক কাজই সম্পন্ন করতে পারেন না, তখন তাদের সেই আগ্রহে ভাটা পড়ে।

আবার দেশি বিনিয়োগকারীরা দেশে টাকা লগ্নি করে কল-কারখানা গড়ে তোলার চেয়ে বিদেশে অর্থ পাচার করতেই পছন্দ করেন বেশি। দেশের অর্থ বিদেশে পাচার শুধু অর্থেরই স্থানান্তর নয় এই অর্থ পাচারের মধ্যে দেশপ্রেমহীনতা তথা দেশের প্রতি অনাস্থা প্রতিফলিত হয়।

প্রমাণিত হয় তারা দেশ এবং দেশের মানুষের প্রতি মমত্বহীন। যারা দেশের মূল্যবান পুঁজি দেশে বিনিয়োগ না করে বিদেশে পাচার করেন তারা কার্যত দেশের স্বার্থকেই বিকিয়ে দেন। এভাবে তারা শুধু দেশকেই ছোট করেন না ছোট হন নিজেরাও। পৃথিবীর কোনো ভূ-খন্ডেই তারা সম্মানজনক জীবনের অধিকারী হতে পারেন না।

আমরা মনে করি দেশে বিনিয়োগ বন্ধ্যাত্ব চলছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রাজনৈতিক অস্বস্তি রয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা স্থায়ী হবে কি -না তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সবচেয়ে বড় নিয়ামক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। তাই দেশে রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা ও ঐক্যমত বিনিয়োগের বড় নিয়ামক হিসেবে গণ্য করা হয়।

উন্নয়ন অগ্রযাত্রা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে বিনিয়োগ যেমন প্রয়োজন। তেমনি জরুরি বিনিয়োগের জন্য সম্ভাব্য সব পথ খোলা রাখা।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS