ভিডিও

প্রস্তাবিত রংপুর ইপিজেড

প্রফেসর মুহা. সুজন শাহ-ই-ফজলুল

প্রকাশিত: মার্চ ০৫, ২০২৪, ০৫:৪১ বিকাল
আপডেট: মার্চ ০৫, ২০২৪, ০৫:৪১ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

একটি দেশের টেকসই উন্নয়নের প্রধান শর্ত কৃষির পাশাপাশি শিল্পের উন্নয়ন। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শিল্পের অবদান এখনো তুলনামূলকভাবে অনেক কম। এটি সর্বজনস্বীকৃত যে শিল্পের উন্নয়ন ব্যতীত দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্ত করা সম্ভব নয়। ইপিজেডের সংখ্যা বৃদ্ধি করে স্থানীয় এবং বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ বৃদ্ধি এখন একটি সময়ের দাবি।

ইপিজেডের সংখ্যা বৃদ্ধি করে যেমন বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ করে রপ্তানীর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব সেই সঙ্গে ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আকর্ষণ বাড়াতে পারলে লক্ষ লক্ষ তরুণের কর্মসংস্থান দেশেই সৃষ্টি হবে।

শিল্পে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন ও বিকেন্দ্রিকরণের লক্ষ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রায় এককোটি লোকের কর্মসংস্থান একটি বৃহৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১০ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল বা বেপজা।

ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ শেষ হয়েছে যেখানে দেশী বিদেশী অনেক কোম্পানী বিনিয়োগ ও উৎপাদন শুরু করেছে এবং অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন আছে ৯৭টি ইপিজেড। এর মধ্যে কেবল মাত্র ৩/৪টি ইপিজেড বাদে সবগুলো দেশের দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত অথচ দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪ কোটি আয়তনে প্রায় ২০% রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে।

২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বেপজার গভর্নর বোর্ডের ৩৪তম সভায় রংপুর চিনি কলের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের ১৮৪২ একর জমিতে রংপুর রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা (আরইপিজেড) স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সে মোতাবেক শিল্প মন্ত্রণালয় এ জমি বেপজার অনুকূলে হস্তান্তরের নির্দেশনা দেন।

এলাকাবাসীর স্বপ্ন প্রস্তাবিত রংপুর ইপিজেড (যা গোবিন্দগঞ্জ) উপজেলায় অবস্থিত তা বাস্তবায়ন হলে অত্র এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার আমুল পরিবর্তন নিয়ে আসবে, কিন্তু দুঃখের বিষয় ইতিমধ্যে অনেক সময় অতিবাহিত হলেও এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কোন অগ্রগতি নাই। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে প্রকল্প বাস্তবায়নের গুরুত্ব তুলে ধরে সম্প্রতি গোবিন্দগঞ্জ পৌর মেয়রের নেতৃত্বে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।

পরবর্তীতে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ প্রস্তাবিত রংপুর ইপিজেড বাস্তবায়নে নাগরিক মতবিনিময় সভায় ইপিজেড বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করে বক্তব্য রাখেন।

গোবিন্দগঞ্জে অবস্থিত রংপুর রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা (ইপিজেড) বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের বড় একটি সম্ভাবনা প্রতিষ্ঠা পাবে বলে এলাকাবাসী মনে করে। গাইবান্ধা জেলার মোট জনসংখ্যা প্রায় ২৫ লক্ষ, আর গোবিন্দগঞ্জের মোট জনসংখ্যা ৫ লক্ষেরও বেশি।

এই বিশাল মানবসম্পদ কে সঠিকভাবে অর্থনৈতিকক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। একমাত্র গোবিন্দগঞ্জে একটি শিল্প অঞ্চল স্থাপনের মাধ্যমে এই মানবসম্পদকে যথাযোগ্য কাজে লাগানো সম্ভব। গোবিন্দগঞ্জে একটি রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা (ইপিজেড) স্থাপিত হলে সমগ্র গাইবান্ধা জেলার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী বগুড়া ও দিনাজপুর জেলার মানুষ এখানে এসে কাজ করতে পারবে।

ভৌগোলিকভাবে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সুবিধাজনক স্থানে অবস্থিত। উপজেলা সদর থেকে ইপিজেড এলাকা মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে গোবিন্দগঞ্জ ভায়া ঘোড়াঘাট আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশেই বন্যামুক্ত উঁচু জমিতে এই ইপিজেডের অবস্থান। একই ভাবে ইপিজেড থেকে হিলি স্থল বন্দরের দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার। ৭০ কিলোমিটার দূরে সৈয়দপুর এবং ৩৪ কিলোমিটার দূরে প্রস্তাবিত বগুড়া বিমান বন্দরের অবস্থান।

অন্যদিকে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক এবং মহিমাগঞ্জ রেল স্টেশনের দূরত্ব যথাক্রমে ৭ ও ১৭ কিলোমিটার।
বাংলাদেশের কোথাও নতুন করে রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা (ইপিজেড) জরুরি ভিত্তিতে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হলে সেটা গোবিন্দগঞ্জে হওয়া অত্যাবশ্যকীয়।  কারণ দেশে ফসলি জমি নষ্ট করে শিল্পকারখানা স্থাপন করা যায় না। এটা সম্পূর্ণ আইন পরিপন্থী কাজ।

একদিকে দেশে এত পরিমাণে অনাবাদি জমি পাওয়া দুস্কর। অপরদিকে পরিবেশের ক্ষতি করে বন কিংবা জলাশয় ভরাট করে শিল্প অঞ্চল স্থাপন করা কখনো সম্ভব নয়। এখানে ইপিজেড স্থাপিত হলে শিল্পকারখানার বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য পার্শ্ববর্তী শুকনো কাটাখালি নদী রয়েছে। তাতে করে নদীর পানি প্রবাহ কিছুটা হলেও ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

গোবিন্দগঞ্জে বাগদা ফার্মের পরিত্যক্ত জমিতে রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা (ইপিজেড) স্থাপন করলে সরকারের বিশাল অংকের অর্থ সাশ্রয় হবে কারণ ভূমি অধিগ্রহণে কোন অর্থ ব্যয় করতে হবে না। সেই সাথে রংপুর চিনি কল সংশ্লিষ্ট শ্রমিক ও তাদের পরিবারের লোকজন এই ইপিজেডে কাজের মাধ্যমে পুনর্বাসনের সুযোগ পাবে।

ইপিজেডে আদিবাসীদের ভূমি সংক্রান্ত যে জটিলতা আছে এ সমস্যা বিরাট কোন সমস্যা নয়। আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এইজন্য দরকার বিদ্যমান পক্ষকে নিয়ে সকল অংশীজনের অংশগ্রহণের মাধ্যমে আলোচনার উদ্যোগ জরুরি। এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি প্রশাসনসহ সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।


লেখক :  প্রাবন্ধিক-ট্রেজারার
পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি
বগুড়া।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS