ভিডিও

টনক নড়বে কবে?

প্রফেসর ড. মোহাঃ হাছানাত আলী

প্রকাশিত: মার্চ ০৫, ২০২৪, ০৫:৫০ বিকাল
আপডেট: মার্চ ০৫, ২০২৪, ০৬:৫২ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

দেশে প্রতিনিয়ত অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে। কখনও কারখানায় কখনও বস্তিতে কখনও বা বন্ধ গোডাউনে আবার কখনও হোটেল রেস্তোরাঁয়। পাল্লা দিয়ে নিয়ম ভাঙা হচ্ছে। নিয়ম ভাঙাটায় যেন দেশে নিয়মে পরিণত হয়েছে। দেশে বিল্ডিং কোড আছে, কারখানা আইন আছে। আছে শ্রম আইন। কিন্তু এসব আইনের তোয়াক্কা না করায় প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধবনের দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রাণহানির মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডের যে ভবনটিতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে সেটি মূলত তৈরি করা হয়েছিল অফিসের জন্য অথচ ভবনটি ব্যবহার করা হয়েছে রেস্তোঁরা হিসেবে। ভবনের স্থপতি মোস্তফা খালেদ পলাশ'র উদ্ধৃতি থেকে জানা যায় যে ভবনটি নির্দিষ্ট ব্যবহারের ব্যত্যয় হওয়ায় স্থপতি হিসেবে তিনি রিপোর্ট ও এর ড্রইং থেকে বিরত থেকে জমির মালিক/ডেভলপারকে লিখিতভাবে সতর্ক করেছিলেন।

কিন্তু তারা কেউ কথা শুনেননি। নিয়ম হলো অকুপেন্সি সার্টিফিকেট নেওয়ার পর ভবন ব্যবহার করা যাবে কিন্তু মালিকপক্ষ সার্টিফিকেট পর্যন্ত নেননি। তিনি আরো বলেন এ ধরনের ঘটনা নতুন নয় দেখা যায় অনেক মালিকপক্ষই অকুপেন্সি সার্টিফিকেট ছাড়া ভবন ব্যবহার করে। কারন রেস্তোরাঁয় ভাড়া বেশি পাওয়া যায়, তাড়াতাড়ি ভাড়া হয় যা অর্থ লাভ ছাড়া কিছু নয়। মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে স্বার্থ হাসিল করা কোনো সচেতন নাগরিকের কাজ হতে পারে না।

জানা যায় ভবনটিতে আটটি রেস্তোরাঁ একটি জুস বার ও একটি চা-কফি বিক্রির দোকান ছিল। আমাদের দেশে মূলত ভবনে আগুন লাগে দুটি উৎস থেকে একটি হল শর্ট-সার্কিট অন্যটা কিচেন বা চুলা থেকে। এখানে যতগুলো রেষ্টুরেন্ট ছিলো তাদের যে শুধুমাত্র একটা চুলা থাকে তা কিন্তু নয় বরং প্রতিটি রেস্তোরাঁয় আট থেকে দশটি চুলা থাকে। যেখানে চুলার সংখ্যা যত বেশি সেখানে আগুন লাগার আশঙ্কা তত বেশি।

গবেষণালব্ধ তথ্য থেকে জানা যায় অগ্নিকান্ডের বহুমাত্রিক কারণের মধ্যে রয়েছে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট ও বৈদ্যুতিক লাইনের ত্রুটি, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ও পুরানো গ্যাস লাইন, পাইপ ও সংযোগ স্থানগুলোতে ত্রুটি, বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত অবশিষ্টাংশ ও মশার কয়েল এর মধ্যে কেবল শর্ট-সার্কিট ও বৈদ্যুতিক সংযোগ ত্রুটিজনিত আগুনের সূত্রপাত ৩৯ শতাংশ, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ও গ্যাস লাইনের লিকেজ সহ অন্যান্য ত্রুটিজনিত অগ্নিকান্ড ১৪ শতাংশ, বিড়ি সিগারেট থেকে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ১৬ শতাংশ।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী জানা যে, শুধুমাত্র ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসেই দেশব্যাপী  অগ্নিকান্ডের সংখ্যা ছিল এক হাজার সাতশো'র বেশি। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে এই সংখ্যা ৬০৩ টি, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে সংঘটিত অগ্নিকান্ডের সংখ্যা ১৫৫ টি। এই পরিসংখ্যান থেকে সহজেই অনুমেয়, বিগত বছরগুলোর তুলনায় অগ্নিকান্ডের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

যে ভবনটিতে গত ২৯ তারিখে এক মর্মান্তিক অগ্নিদুর্ঘটনায় ৪৬ জন মানুষ অকালে প্রাণ হারিয়েছেন সেই ভবনটিতে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থাও ছিলনা। এসব দেখভাল করার জন্য দেশে আইন আছে, আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করণে বহু কর্তৃপক্ষ রয়েছে। সিটি কর্পোরেশন আছে, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আছে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রয়েছে, মফস্বল শহরে পৌরসভা রয়েছে, রয়েছে অগ্নিনির্বাপক অথরিটি।

তাদের কাজই হলো মূলত ভবনের নকশা অনুমোদন থেকে শুরু করে ভবনটি যথাযথভাবে তৈরি হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করা। বারবার আগুন লাগার ফলে প্রাণহানি ঘটে, সংবাদমাধ্যম, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সরকার উদ্বিগ্ন হয়, উৎকন্ঠিত হয়, ক্ষোভ প্রকাশ করেন, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই আমরা সবকিছু ভুলে যাই।

ফলে কাজের কাজ কিছুই হয় না। সম্প্রতি সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ও সাংসদ অ্যাডভোকেট স. ম. রেজাউল করিম কর্তৃক সংসদে প্রদত্ত ভাষণ থেকে জানা যায় যে, ২০১৯ সালে বনানী এফ আর টাওয়ারে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২৭ জন মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাবার ঘটনায় একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং তদন্ত কমিটি পরবর্তীতে ৬২ জন কে দায়ী করে প্রতিবেদন জমা দিলেও সবার বিরুদ্ধে মামলা করা সম্ভব হয়নি।

যদিও বা কিছু মানুষের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত তার বিচার শুরু করা যায়নি। এই ঘটনার পরে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে এক হাজার তিনশত ভবন চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিনেও কোন ভবন ভাঙ্গা সম্ভবপর হয়নি।

বেইলি রোডের অগ্নি দুর্ঘটনার পর আমাদের দেশের আগুন নেভানোর ব্যবস্থাপনার নাজুকতা নতুন করে আরেকবার ফুটে উঠেছে। দেশে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ অনেক ক্ষেত্রে অনুপস্থিত। ফলে এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে। সুষ্ঠু  তদারকি থাকলে, আইনের নিরপেক্ষ  প্রয়োগ থাকলে এ ধরনের দুর্ঘটনা সহজেই এড়ানো যেত।

এব্যাপারে ফায়ার ব্রিগেড এর মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন বেইলি রোডে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন ভবনটিতে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে তিনবার চিঠি দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তারপরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউক জানিয়েছে ভবনটিতে রেস্তোরাঁ বা পণ্য বিক্রয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কোনো অনুমোদন ছিল না।

ভবনের অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন হবে তা আইনে পরিষ্কারভাবে বলা থাকলেও অধিকাংশ ভবন মালিকরা জেনে বুঝে তা মানছেন না। তাদেরকে মানতে বাধ্য করাও যাচ্ছে না। যত্রতত্র রাখা হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার, যাচাই-বাছাই করা হচ্ছেনা ফিটনেস।

আবাসিক ভবনে কেমিক্যাল মজুদ বন্ধ হয়নি। ওদিকে দেখভালের দায়িত্বে থাকা সরকারি সংস্থাগুলোর কারো কারো বিরুদ্ধে আগের ভূমিকায় অবৈধ লেনদেনের বিনিময়ে এসব অনিয়ম দেখেও না দেখার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

আইনের কিছু দুর্বলতা যে দেশে নেই তা কিন্তু নয়। তবে এসব নিয়ে দায়িত্বশীলদের মাথাব্যথা খুব একটা বেশি আছে তা বলা যাবে না। বরং কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেই কিছুদিন হইচই হয়। তারপর সবকিছু আগের মত স্বাভাবিক হয়ে যায়। এসব কারণে নিম্নমানের এক প্রতিযোগিতা চলছে সর্বত্র। ফলে রাজধানী নগরী ঢাকা এখন রীতিমত অগ্নিকুন্ডের উপর বসে আছে।

তথ্য বলছে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত ১৪ বছরে দেশে আগুনের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ২৫৩৬ জন। এই মিছিলে বৃহস্পতিবার ২৯ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় নতুন করে যোগ হয়েছে আরো ৪৬ জনের নাম।

বড় বড় দুর্ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসকে আধুনিকায়ন যেমন করা হয়েছে অগ্নিঝুঁকির শঙ্কা রয়েছে এমন অনেক ভবন চিহ্নিত করার কাজও সংস্থাটি করেছে, কিন্তু যখনই বড় কোন আগুনের ঘটনা ঘটে তখনই জানা যায় সেই ভবনের অগ্নি ঝুঁকি নিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল, ভবন ত্রুটিপূর্ণ সে বিষয়ে ভবন মালিককে অবহিত করা হয়েছিলো, তারপরও আগুনের ঘটনা ঘটছে, মানুষ মারা যাচ্ছে। এসবের জন্য দায়ী কে সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

আইন অনুসারে অফিসের অনুমতি নিয়ে ভবন তৈরি করে সেই ভবনে রেস্তোরাঁ খুলে ফেলার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু বাস্তবে সেটাই হয়েছে। সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায় রাজধানীর বেইলি রোডের ভবনটিতে যে আগুনের ঝুঁকি ছিল তা জানতো সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা কিন্তু  কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। ভবনের মালিকও তা গায়ে মাখেনি। ৪৬ জন মানুষের মৃত্যুর পর বেরিয়ে এসেছে গাফিলতির চিত্র।

স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে কে? ফায়ার সার্ভিস, রাজউক নাকি সিটি কর্পোরেশন। বেইলি রোডের অগ্নিকান্ডের ঘটনা আমাদের সবাইকে নতুন করে কিছু দুর্ঘটনা বা অগ্নিকান্ডের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আজ থেকে প্রায় একযুগ আগে ঢাকা মহানগরীর উপকণ্ঠ আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় অবস্থিত তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেড কারখানায় ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর  সংঘটিত একটি মারাত্মক অগ্নিকান্ডে  মোট ১১৭ জন পোশাকশ্রমিক নিহত হয় ও ২০০ জনের অধিক আহত হয়।

এদিকে ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ দুপুর ১টায় ঢাকার বনানীর বহুতল বাণিজ্যিক ভবন এফআর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডে ২৭ জনের মৃত্যু হয় এবং ৭০ জন আহত হন। পরে জানা যায় ভবনটি বিল্ডিং কোড ভঙ্গ করে নির্মাণ করা হয়েছিলো এবং ভবনে যথেষ্ঠ পরিমাণে অগ্নিনির্বাপক সুবিধা ছিলো না। অথচ বনানীর মত অভিজাত এলাকায় ভবন নির্মাণে রাজউকের অনুমোদন ও তদারকি বাধ্যতামূলক ছিলো। দেশে আইন ভঙ্গ করার এক ভয়াবহ সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে।

ফলে নিত্যনতুন দুর্ঘটনা ঘটছে। এরও আগে ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নবাব কাটরার নিমতলি মহল্লায় একটি বড়সড় অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয় যা নিমতলি অগ্নিকান্ড বা নিমতলি ট্র্যাজেডি নামে পরিচিত। এই অগ্নিকান্ডে ১১৯ জন আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যান। বহুমানুষ আহত হন। তখনো সরু গলিপথের কারণে সময়মত অগ্নিনির্বাপন করা যায় নি।

সরকারি আইনানুযায়ী আবাসিক এলাকায় দাহ্য পদার্থ মজুত করার কোন সুযোগ না থাকা সত্ত্বেও কি করে দিনের পর দিন নিমতলিতে অবৈধ ব্যবসা চললো তা কিন্তু আমাদের মত সাধারণ মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব না হলেও বিস্ফোরক দ্রব্য অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের না জানার কথা নয়। এতকিছুর পরও নিমতলীতে কেমিকেল ব্যবসা বন্ধ হয়েছে তা কিন্তু নয়।

দেশে এসব দেখভাল করার জন্য আইনানুগ কর্তৃপক্ষ রয়েছে। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে তাহলে কি তারা তাদের দায়িত্ব পালনে গাফলতি করেছিলেন? নাকি সব জেনেও না জানার ভান করে বসে ছিলেন। ২০২১ সালে নারায়ণগঞ্জের জুস কারখানায় সংঘটিত অগ্নিকান্ড যেন আরেক নিমতলী বা তাজরিন গার্মেন্টস ট্র্যাজেডির সমতুল্য।

রূপগঞ্জের সেজান জুস কারখানা মানুষের পোড়া লাশের সারি আর স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছিলো নারায়ণগঞ্জ সহ দেশের আকাশ। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কারখানার ভেতর থেকে ৫২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিলো। ভবন থেকে ছাদে ওঠা এবং বের হওয়ার দরজা ছিল তালাবদ্ধ। কেন কর্মরত শ্রমিককে কারখানা থেকে বের হতে দেয়া হয়নি।

কেন ফ্লোরে তালা বদ্ধ করে রাখা হলো তা জানাটা জরুরি ছিলো। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও এ প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়া গেছে বলে আমার জানা নেই। কিন্তু প্রায় সকল অগ্নিকান্ডের ক্ষেত্রেই কারখানার গেট কেন তালাবদ্ধ করে রাখা হয় তা বোধগম্য নয়। এছাড়া বিভিন্ন সময় বস্তিতে আগুন যেন দেশে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। দেশে কারখানা আইন আছে। বিল্ডিং কোড আছে, আছে কারখানা পরিদর্শক।

এসব কারখানা দেখভাল করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষও রয়েছে। দেশের প্রতিটি কারখানায় শ্রমিক স্বার্থ ও শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিতে দেশে শ্রম আইন বিদ্যমান। দেশে এখনও অনেক কারখানা আবাসিক ভবনে বা বাসা বাড়িতে তাদের উৎপাদন কার্য পরিচালনা করে চলেছে। কারখানা আইনানুসারে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সকল অগ্নিকান্ডের পরম্পরা প্রায় এক ও অভিন্ন।

পর্যাপ্ত বহিঃনির্গমন পথের অভাব, ভবনের মূল গেটে তালা, অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রপাতির অনুপস্থিতি, হেলথ্ ও হাইজিনের অপর্যাপ্ততা বহুলাংশে দায়ী। অথচ দেশের বিদ্যমান আইনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে সহজেই এমন দুর্ঘটনা রোধ করা যায়। আইন রয়েছে, কিন্তু সঠিক প্রয়োগ নেই। তদারকি  করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ ও বিধানাবলী রয়েছে, কিন্তু কার্যকরি বাস্তবায়ন নেই। অগ্নিনির্বাপক অধিদপ্তর রয়েছে, কিন্তু অনেক কারখানায় তার দৃশ্যমান উপস্থিতির দৃষ্টান্ত নেই।

বিল্ডিং কোড রয়েছে। কিন্তু মানার বালাই নেই। তাহলে এতসব কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে দিনের পর দিন কিভাবে অনিয়ম করা সম্ভব সেটাই আজ বড় প্রশ্ন। প্রতিটি বড় ঘটনার পরেই  একাধিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়, মামলা হয়, নিহত ও আহত অসহায় শ্রমিক পরিবারকে নামমাত্র আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। কিন্তু অপকর্মের সাথে জড়িত রাঘববোয়ালরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে যায়।

দেশে কার্যকর কারখানা আইনানুযায়ী এমন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে উৎপাদনমুখী শিল্প ও বাণিজ্যিক কর্মকান্ড  অনুমোদন পাওয়ার কথা নয়। তাহলে কি ভাবে কার মদদে এসব কারখানার মালিকরা আইন কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে দেশে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করছে।

আর কত শ্রমিক/মানুষ আগুনে পুড়ে মারা গেলে দেশে শ্রমিক স্বার্থ সুরক্ষা নিশ্চিত হবে, অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা যুগোপযোগী হবে, জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করা যাবে সেটাই আজ বড় প্রশ্ন। আর তদন্ত কমিটি নয়। কথার ফুলঝুরি নয়। কারখানা আইন, বিল্ডিং কোড ও শ্রম আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগই পারে এমনতর ভয়াবহ দুর্ঘটনা রোধ করতে।


আইবিএ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

drhasnat77@gmail.com



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS