ভিডিও

দামি মশলা জিরা চাষে উজ্জ্বল সম্ভাবনা

রাহমান ওয়াহিদ

প্রকাশিত: মার্চ ০৮, ২০২৪, ০৭:৩৬ বিকাল
আপডেট: মার্চ ০৮, ২০২৪, ০৭:৩৬ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

খুব দরকারি মসলা হিসেবে অন্যতম ও বহুল ব্যবহৃত উপাদান হলো জিরা। রান্না করা খাবারে সুস্বাদ ও সুগন্ধ এনে দিতে জিরার জুড়ি নেই। জিরার ব্যবহারে খাবারে ঈষৎ মেটো,ঝাঁঝালো ভাব আসে, যার কারণে স্যূপ, স্টু জাতীয় খাবার ও তরকারির ঘন ঝোল তৈরিতে মরিচ ও কারি মসলার সাথে জিরা এখন অপরিহার্য উপাদান হয়ে উঠেছে।

কৃষি গবেষকরা বলছেন-শতভাগ আমদানি নির্ভর এই জিরা মশলার বছরে চাহিদা রয়েছে ১২ থেকে ১৫ হাজার মেট্রিক টন, যার বর্তমান বাজার মূল্য ৮০ থেকে ১০০ কোটি টাকা। আমদানি করতে গিয়ে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় ও দেশে জিরার চাহিদা মেটাতে ২০০৮ সাল থেকে দেশেই জিরার চাষ করার লক্ষ্যে ভারত, ইরানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে জিরার জাম প্লাজম বা বীজ সংগ্রহ করে গবেষণা শুরু করা হয় বগুড়ার শিবগঞ্জে অবস্থিত মসলা গবেষণা কেন্দ্রে।

জিরা চাষের গল্পটি প্রথম জানা যায় ২০১৫ সালে,নড়াইল থেকে। নড়াইলের ডুমুরতলা গ্রামের জিয়াউর রহমান নামের এক কৃষক তার কৃষিকাজের অভিজ্ঞতার আলোকে  নিছক শখের বশে মিশর থেকে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে জিরার ১০০ গ্রাম বীজ এনে তা ৬ শতক জমিতে বপন করেছিলেন।

মাস চারেকের মধ্যে তাঁর জিরার ফলন দেখে এলাকার অন্যান্য কৃষকও জিরা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু জিরা বীজ সংগ্রহ এবং চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে তখনও বিজ্ঞানভিত্তিক ধারণা উদ্ভাবিত না হওয়ায় সেই আগ্রহটি আর জোরালো হতে পারেনি। মসলা গবেষণা কেন্দ্র থেকেও জিরা চাষ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা চলতে থাকলেও কাক্সিক্ষত ফল আসছিল না।

অবশেষে ২০২১ সালে গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবিত জিরার জাতটি অবমুক্ত করা হয়। তখন পরীক্ষামূলকভাবে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কয়েকটি জেলায় কৃষক পর্যায়ে শুরু হয় জিরা চাষ। তাতে সফলতাও আসতে থাকে। গবেষকদের মতে জিরা চাষের জন্য উপযুক্ত হলো উঁচু ও চরাঞ্চল এলাকার মাটি। চরাঞ্চলের মাটিতে বালুর পরিমাণ বেশি হওয়ায় তাতে পানির ধারণ ক্ষমতা থাকে না, জিরা চাষের জন্য যা সহায়ক।

বগুড়া মশলা গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান সুজা জানান-শীতকালীন ফসল জিরার আবাদি জমিতে পানি জমে থাকা যাবে না। যেটুকু পানি না দিলেই নয়, শুধু সেটুকু পানি জমিতে দেয়া যাবে। এ বিষয়ে অন্য এক তথ্যে জানা যায়-নাতিশীতোষ্ণ, শুষ্ক আবহাওয়া এবং সেই সাথে সুনিষ্কাশিত, উর্বর, গভীর ও বেলে দোঁয়াশ মাটি জিরা চাষের জন্য উত্তম।

জমি তৈরিতে প্রথমে ৫-৮টি চাষ এবং মই দিয়ে জমি ঝুরঝুরে করে নিতে হয়। এরপর পরিমাণমতো জৈব সার ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। সংশ্লিষ্ট গবেষকরা বলছেন- প্রতি বিঘায় এক কেজি জিরার বীজ বপন করা যায়। এতে কৃষকের খরচ হবে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। বীজ বপনের ১০৫ -১১০ দিনের মধ্যে জিরা পাওয়া যায়।

নিয়ম পদ্ধতি মেনে ভালোভাবে চাষ করলে বিঘা প্রতি আড়াই মণ এবং হেক্টর প্রতি ৮০০-১০০০ কেজি জিরার ফলন পাওয়া যায়। বর্তমান বাজারে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে জিরা বিক্রি হয়। সেই অনুযায়ী এক বিঘা থেকে ১ লাখ টাকারও বেশি জিরা বিক্রি করতে পারবেন কৃষকরা।

সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকের (করতোয়া) এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়-কয়েক বছর ধরে বগুড়ার কৃষকরা পরীক্ষামূলকভাবে জিরার চাষ করলেও গত বছর বগুড়াসহ দেশের গাইবান্ধা, নাটোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সাতক্ষীরা, সিরাজগঞ্জ, পাবনা জেলার চাষিদের মশলা গবেষণা কেন্দ্র থেকে বীজ সরবরাহ করা হয়েছে।

এ  ছাড়া ব্যক্তি পর্যায়েও অনেকে বীজ সংগ্রহ করে জিরা চাষ শুরু করেছেন। বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণপুর এলাকার জিরাচাষি মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান-গত বছর প্রথম ৮ শতক জমিতে জিরা চাষ করে ভালো ফলন না পেলেও তিনি দমে যাননি। উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে এ বছর বগুড়া মশলা গবেষণা কেন্দ্র থেকে ৫শ গ্রাম বীজ সংগ্রহ করে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী চাষ করে এখন পর্যন্ত জিরার গাছ এবং ফলন দেখে তিনি যথেষ্ট আশাবাদী।

এখান থেকে তিনি ১৫-১৬ কেজি জিরা পাবেন বলে আশা করছেন। তার উৎপাদিত জিরা বীজ হিসেবে বিক্রি করার জন্য অর্ডার নিয়েছেন। তিনি আরো জানান-জিরার সফল চাষের পর আরো বড় পরিসরে তিনি জিরা চাষ করবেন এবং এ চাষে তিনি অন্য চাষিদেরকেও উৎসাহিত করবেন। নদীমাতৃক এদেশে অনেক নদীতেই শীত মৌসুমে বড় বড় চর পড়ে।

বিভিন্ন অঞ্চলে উঁচু ও বেলে দোঁয়াশ মাটিরও অভাব নেই।  এজন্য এ ধরনের মাটি ও চরাঞ্চলে  কৃষকরা তরমুজ,শসা,মিষ্টি আলুর পাশাপাশি মূল্যবান মশলা জিরার চাষ করেও যথেষ্ট লাভবান হতে পারেন। তাতে জিরার চাহিদা অনেকটাই মেটানো গেলে আমদানি নির্ভরতা যেমন কমবে তেমনি বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয়ও হবে যথেষ্ট। মশলা গবেষণা কেন্দ্র তাদের উদ্ভাবিত জিরার জাতটি সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়ে জিরা চাষে কৃষকদের আরো বেশি আগ্রহী করে তুলতে সচেষ্ট হবে-এটিই এখন প্রত্যাশিত।


লেখকঃ কবি, কথা সাহিত্যিক ও কলামিষ্ট

raahman.wahid1956@gmail.com

01711-055281  



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS