ভিডিও

বোরো আবাদেই স্বপ্ন বুনে কৃষক

মিজানুর রহমান রাঙ্গা

প্রকাশিত: মার্চ ১০, ২০২৪, ০৭:৪৫ বিকাল
আপডেট: মার্চ ১০, ২০২৪, ০৭:৪৫ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

এক সময় ইরিবোরো চাষাবাদ ছিলো না। সে সময় শুধু আমন ও আউশ ধানের চাষাবাদ হতো। কৃষকরা প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া সেচ, গোবর সার ও জমির ফসলের অতিরিক্ত অংশ সহ নানা ধরনের ব্যবস্থাপনায় আমন আউস সহ সব ধরনের চাষাবাদ করতো। এ আবাদে উৎপাদন খরচ যেমন কম হতো, তেমনি ফলনও কম হতো। অল্প ফলন দিয়ে পুরো বছর ঘরের খাবারের ব্যবস্থা হতো।

সাথে গম, কাউন, ছোলা বুট সহ নানা দানাদার শস্যেরও চাষাবাদ ছিলো। এসব চাষাবাদ করে নিজের সংসারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে লাভবান হতো কৃষক। চাল, ডাল, সব ধরনের সবজি, সরিষার তেল, হলুদ, মরিচ, আদা, মসলা সহ প্রায় সবই চাষাবাদ করতো কৃষক। তখন এ সকল পণ্য বাজারে কেনার উপর নির্ভর ছিলোনা কৃষক।

কিন্তু কালের বিবর্তনে মৌসুম অনুযায়ী সঠিক ফসল চাষাবাদ না করা, ভাল মানের বীজ সংকট, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিতে অনাগ্রহ, কষ্টার্জিত ফসলের দাম না পাওয়া ও প্রাকৃতিগতভাবে চাষাবাদ না হওয়ার মত নানা কারণে ধান ছাড়া অন্যান্য এসব ফসল চাষাবাদ কমে আসে।

অনেকটা হারিয়েই যেতে বসে এসব চাষাবাদ। বিশেষ করে গম, চিনাবাদাম, হলুদ, মুগ ও মশুর ডাল চাষাবাদ হারিয়েই যেতে বসে উত্তরাঞ্চল সহ বিভিন্ন এলাকায়। কৃষকদের মতে, ব্যাপক চাষ হওয়া শস্যের আবাদ কম হওয়ার জন্য সে সময় কম ফলন ও দাম না পাওয়াই প্রধান কারণ। যে কারণেই কৃষকরা দিন দিন এ আবাদগুলো অনেকটা চাষাবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন।

কালের বিবর্তনে অন্যান্য ফসলের উৎপাদন কম হওয়া ও বাজার দরের নানা ধরনের চড়াই উৎরাইয়ে অন্যান্য ফসল আবাদ চাষাবাদে মনোযোগ হারায় কৃষক। এখন কৃষক আর এসব চাষাবাদে আর তেমন আগ্রহী না। আশির দশকের দিকে দেশে ইরিবোরো আবাদের প্রচলন শুরু হয়। আমন আবাদ তোলার পর বছরের বাকি সময় পড়ে থাকা এসব জমিতে বোরোর চাষাবাদ বেশ আগ্রহী করে তোলে কৃষককে।

নিচু ধরনের একই জমিতে  বছরে ধানেরই দুই ধরনের আবাদ করতে পারায় কৃষকরা লাভবান হন। অপরদিকে কৃষি প্রযুক্তির অভাবনীয় সাফল্যের কারণে হাইব্রিড সহ নানা ধরনের  উন্নত মানের বীজ উৎপাদনের কারণে ইরিবোরোর চাষাবাদকেই প্রধান ফসল হিসেবে বেছে নেয় তারা। যে কারণে ইরিবোরোর চাষাবাদেই কৃষকের বেশি উৎসাহ। কিন্তু দিন দিন এ আবাদে প্রতিবন্ধকতাও বেড়েছে। এখন নানা কারণে সেচ, সার ও শ্রমিক খরচও হয় বেশি। ধান ঘরে তোলার সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয় থাকে।

এতকিছুর পরও এই আবাদের প্রতি ঝোঁক বেশি কৃষকের। ভালো ফলনের আশায় দিনের বেশির ভাগ সময় কৃষক জমিতেই পড়ে থাকেন। সকল পরিচর্যা করেন ক্ষেতে বসে। অন্যান্য সময়ে জমানো ছাড়াও ধার দেনা করে আবাদ তোলা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

প্রতিযোগিতা করেন ভালো ফলনের। এবারও তার যেন কমতি নেই। কৃষকরা বোরো আবাদ লাগিয়ে পরিচর্যা শুরু করেছেন। মাঠে মাঠে এখন সবুজের সমারোহ। ধান লেগে উঠছে। আগাম জাতের ধান গাছ গাঢ় সবুজ বর্ণ ধারণ করেছে।

কয়েকদিন পরেই কৃষকের বোরোর ক্ষেত যেন হাসবে। অপর দিকে স্বল্প জমি চাষাবাদ করে কিভাবে বেশি ফলন পেয়ে লাভবান হওয়া যায় এখন সে চিন্তা ভাবনাই সব সময় থাকে অনেক কৃষকদের মাথায়। সে কারণে বেশি ফলনের চেষ্টায় উন্নত জাতের বীজ সন্ধান ও সময় মত সঠিক পরিচর্যা সহ নানা দিকই চিন্তা করতে হয় কৃষকদের। এ চিন্তা বিশেষ করে বেশি করতে হয় প্রান্তিক চাষীদের। এমন ভাবনা থেকেই এবারও বোরো ধানের নতুন নতুন জাতের ধান চাষে উদ্বুদ্ধ হন কৃষক।

তাই ধানে থোড় আসার সময় বোরোর ক্ষেতের প্রতি কৃষকদের অধিক সচেতনতা ও যত্নশীল হওয়ার সময়। মৌসুমের এ সময়ে ধান ক্ষেত ছত্রাকজনিত ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাব্য সময় মাস খানেক পরেই। এ রোগে আক্রান্ত হলে ধান গাছের শীষ শুকে মরে যাওয়ায় ধানে অধিক চিটা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যার কারণে ফলন কমে যেতে পারে শতভাগ পর্যন্ত। বোরো মৌসুম ধান উৎপাদনে সর্বাধিক গুরুত্ব বহন করে। বোরো ধানের উপর ভিত্তি করেই আমাদের দেশের খাদ্য নিরাপত্তার ভীত রচিত হয়েছে।

দেশের মোট উৎপাদনের ৫৮ ভাগ আসে বোরো থেকে। সে কারণে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বোরো ধানের গড় ফলন হেক্টর প্রতি ১.৫ থেকে ২.০ টন পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। ধান গাছের রোগবালাই দমনে তাই মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে কৃষি বিভাগকে আরও জোরদার ভূমিকা পালন করতে হবে।

অনেক কৃষক আছেন, যারা আগাছা দমন সহ সময় মত সেচ ও সার প্রয়োগ করার বাইরে আবাদ নিয়ে তেমন সচেতন নন। ধান গাছে কোন ধরনের রোগ বালাই কখন হয়, সে ব্যাপারেও সচেতন নন।

তাই সময় মত সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কৃষি বিভাগ কর্তৃক কৃষকদের মাঝে শক্তিশালী ও কার্যকর সচেতনতা মূলক পরামর্শ সহ নানা কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে এখনই। তাহলেই অধিক শ্রম ও অর্থ ব্যয় করা বোরো আবাদে কৃষককে লোকসান গুনতে হবে না। স্বার্থক হবে কৃষকের স্বপ্ন।


লেখক: গণমাধ্যম কর্মী ও কলাম লেখক

mizan.ranga@gmail.com

01719-516652



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS