ভিডিও

পাটে ফিরছে অগ্রগতির ধারা

প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০২৪, ০৫:৩১ বিকাল
আপডেট: মার্চ ১১, ২০২৪, ০৫:৩১ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

বিশ্বব্যাপী পাটের সোনালি সুদিন ফিরে আসছে। পাটপণ্যের জাগরণ শুরু হয়েছে নতুন করে। প্লাস্টিক ও সিনথেটিক পণ্যের পরিবেশ বিধ্বংসী আগ্রাসন ঠেকাতে পাটের প্রতি মনোযোগী হয়ে উঠছে বিশ্বের সচেতন মানুষ। ফলে, দেশের এক সময়ের প্রধান অর্থকরী ফসল পাটের কদর বাড়ছে বিশ্বব্যাপী।

বৃটিশ ও পাকিস্তান আমলে পাটজাত পণ্য বা সামগ্রী উৎপাদন ছিল একক বৃহত্তম শিল্প। তখন পাটকে সোনালি আঁশ বলা হতো। দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য ছিল পাট। পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করত। রপ্তানি আয়ের খাতও ছিল পাট। যুদ্ধ বা দুর্ভিক্ষ বিধ্বস্ত দেশগুলোতে দাতা সংস্থার ত্রাণ সামগ্রী ব্যবহারে পাটের দড়ি ও বস্তার চাহিদা বেড়েছে।

উড়োজাহাজ থেকে পাটের বস্তার মধ্যে খাবার করে সামগ্রী নিচে ফেলা হচ্ছে। পাটের সুতা দিয়ে শাড়ি, পাঞ্জাবির কাপড়, টুপি, জিন্স ও গরম কাপড় তৈরি হচ্ছে। পাট খড়ি থেকে তৈরি হচ্ছে কম্পিউটার ও ফটোকপির মূল্যবান কালি। বিশ্বের ১৩৫টি দেশে ২৮২টি পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়। এ ছাড়াও প্রায় ৫০ ধরনের পাটের কাপড় রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বে।

বিশ্বখ্যাত বিলাসবহুল গাড়িতে ব্যবহার করা হচ্ছে পাট। উড়োজাহাজের ইন্টেরিয়রও তৈরি হচ্ছে পাট দিয়ে। পাট পাতার স্যুপ ও পাটের কফিন ইউরোপের দেশগুলোতে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশ্বে পরিবেশ বান্ধব প্রাকৃতিক এই তন্তুর বহুমুখী ব্যবহার বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাঁধ ও নদী ভাঙন রোধে পাটের বস্তা ব্যবহার হচ্ছে।

রপ্তানি আয় বাড়াতে সরকারি উদ্যোগ, পাট পণ্যের বৈচিত্র্যায়ন, মান সম্পন্ন কাঁচামালের সহজলভ্যতা ও শক্ত ব্যবস্থাপনার কারণে দীর্ঘদিন ধুঁকতে থাকা পাট খাত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে- এমন খবর যখন সামনে আসছে, তখন তা অত্যন্ত ইতিবাচক বলেই প্রতীয়মান হয়। জানা যাচ্ছে, চলতি অর্থ বছরের প্রথম কয়েক মাসে এ খাতের রপ্তানি আয় প্রবৃদ্ধি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ইতিবাচক।

বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই সুখকর। আমরা বলতে চাই, দীর্ঘদিন ধুকতে থাকা পাটখাত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে-এই বিষয়টিকে আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, বিগত ১২ বছরে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে চারবার। এ ছাড়া ২০২১-২২ অর্থ বছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ১১২ কোটি ৭৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার আয় করেছে। এর মধ্যে কাঁচা পাট রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ২১ কোটি ৬১ লাখ ৮০ হাজার ডলার।

২০২২-২৩ অর্থ বছরে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয় হয় ৯১ কোটি ২০ লাখ ডলার। গত অর্থ বছর থেকেই বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে চামড়াকে ছাড়িয়ে দ্বিতীয় স্থান দখল করে নিয়েছে পাটখাত। এ ছাড়া চলতি অর্থ বছরে পাট  ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ১১৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার আয় করার লক্ষ্য ধরেছে সরকার। ৮ মাসে অর্থাৎ জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ৯৫ কোটি ৭২ লাখ ডলার। সেই লক্ষের চেয়ে আয় বেড়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।

সূত্র জানায়, গত কয়েক বছর ধরে পাটের আন্তর্জাতিক বাজার ভালো যাচ্ছে। দিন দিন সেটা বাড়ছে। অনেক দেশ প্লাস্টিক ও সিনথেটিক পণ্য ব্যবহার কমিয়ে পাট পণ্যের দিকে ঝুঁকছে। দেশের পাট পণ্য বিভিন্ন ভাবে রপ্তানি হচ্ছে শপিং ব্যাগ ছাড়াও শোকেজ আইটেম হিসেবে পাটের সামগ্রী বিদেশে সমাদৃত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাটের জীবন নকশা উন্মোচনের ফলে বাংলাদেশ পাটের ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়ার পথে রয়েছে। শিগগিরই লোনা পানিতেও পাট উৎপাদন করা যাবে।

এ ছাড়া পাটের আরও মিহি তন্তু উদ্ভাবনের মাধ্যমে সুতা তৈরির উদ্যোগও শিগগিরই সফল হতে যাচ্ছে। মানুষ যত সচেতন হচ্ছে ততই ব্যবহার বাড়ছে পাটের। বাংলাদেশেও সেই হাওয়া লেগেছে। পাটকে নতুন করে চিনতে শুরু করেছে বিশ্বের মানুষ। নতুন নতুন বাজারের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে।

পরিসংখ্যান বলে, ১৯৯০-এর দশকে দেশে পাট হতো ১২ লাখ হেক্টর জমিতে। পাট শিল্প খাতে বেসরকারি উদ্যোক্তারা ভালো ব্যবসা করলেও লোকসান গুনছে সরকারি পাটকল। লোকসান বৃত্ত থেকে বের হতে সরকারি পাটকল বেসরকারি খাতে লিজ দিচ্ছে সরকার। মহামারি করোনাকাল থেকে সরকারি ২৫টি পাটকল বন্ধ রয়েছে। এ গুলি অবিলম্বে সচল করা প্রয়োজন। সর্বোপরি বলতে চাই, পাট শিল্পের রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে-এই বিষয়টি আমলে নিয়ে অগ্রগতির ধারা বজায় রাখতে হবে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS