ভিডিও

ইসলামী শরীয়তে নারী অধিকার ও সম্মান

মোহাম্মদ মোস্তাকিম হোসাইন

প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০২৪, ০৬:১২ বিকাল
আপডেট: মার্চ ১১, ২০২৪, ০৬:১২ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

নারীদের প্রকৃত অধিকার ও মর্যাদা আজ থেকে সাড়ে চৌদ্দশ বছর আগে দয়ার নবী মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই একমাত্র নারীদেরকে পূর্ণমর্যাদার স্বীকৃতি দিয়েছেন। মানব ইতিহাসের সর্বনিকৃষ্ট যুগ তথা আরবের 'আইয়ামে জাহেলিয়া'তে নারীর মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত ছিল না। যেসব কারণে সেই যুগটি ইতিহাসে অন্ধকারের যুগ হিসেবে চিহ্নিত তার অন্যতম ছিল নারীর প্রতি অবমাননা।

সে যুগে নারীদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অধিকারের কোনো বালাই ছিল না। ছিলনা কোন সম্মান; তা ছিল সুদূরপরাহত। কন্যাসন্তানের জন্ম হওয়াকেই মনে করা হতো অপয়া, অলক্ষুণে ও মান-ইজ্জতের পরিপন্থি। নারী সমাজের জন্য এমনই এক বিভীষিকাময় অন্ধকারকে দূরীভূত করে নারীর প্রকৃত অবস্থান, উন্নত মর্যাদা আর সব অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করেছে ইসলাম।

খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ-সপ্তম শতকে নারী জাতির বসবাসের অনুপযোগী সমাজব্যবস্থাকে ইসলামের শান্তি ও মানবতার বার্তা দিয়ে নারীদের জন্য চলমান সব অভিশপ্ততার মূলোৎপাটনপূর্বক এক আশীর্বাদময় সমাজের গোড়াপত্তন করা হয়; যেখানে কন্যা, স্ত্রী ও মা হিসেবে নারীর সর্বোন্নত মর্যাদা ও সব অধিকার সুনিশ্চিতকরণের বিষয়টি প্রাধান্য পায়।

জন্মগ্রহণের অব্যবহিত পরেই যে নবজাতক কন্যাকে হত্যা করে জীবন্ত কবর দেওয়া হতো, সেই কন্যা ফিরে পেল তার মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার সব অধিকার। যার ফলে আজ নারীরা সর্বক্ষেত্রে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারছে বলা বাহুল্য যারা নারী অধিকারের নামে চিল্লাচিল্লি করে বড় বড় বুলিআওরায় তাদের দাঁড়ায় বেশি নারীরা নির্যাতিত নিষ্পেষিত হচ্ছে যৌতুক প্রথা তাদের কারণেই এসেছে অথচ ইসলামী শরীয়ত নারীদেরকে পর্দার ভেতর থেকে যেকোনো বৈধ কাজ করার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু উন্নত বিশ্বের নারীরা বেশি নির্যাতিত, সন্তান পিত্ত পরিচয় পাচ্ছে না অনেক উন্নত রাষ্ট্র।

উদাহরণস্বরূপ আরো বলা যায় গাজায় জেরুজালেমে নির্মম ভাবে নারী ও শিশুদেরকে হত্যার লোমহর্ষক কাহিনী। চীনের উইঘুরে একই অবস্থা। অন্যদিকে ইসলামী শরীয়ত বলেছে দয়ার নবির ঘোষণা ‘‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের জান্নাত’’ তাই মাকে সম্মান করা বাবাকে সম্মান করা একমাত্র ইসলামী বিধানে প্রথম শুরু করেছে।

এক শ্রেণীর বিভ্রান্ত বুদ্ধিজীবীরা বলে ইসলাম নারীদেরকে সম্মান দেয় না ইসলাম নারীদেরকে কুক্ষিগত রেখেছে এটি সঠিক নয়। দয়ার নবি হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ঘোষণা "তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোনো কন্যাসন্তানের জনক হবে, সে সোজা আল্লাহর জান্নাতে চলে যাবে।' তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, যদি পর পর দুটি কন্যা হয়? মমতাময় হৃদয় দিয়ে তিনি বলে দিলেন, যদি কারও দুটি কন্যাসন্তান হয় সেও জান্নাতে যাবে এবং যদি কারও পর পর তিনটি কন্যাসন্তান থাকে, সেও জান্নাতবাসী হবে।

তদানিন্তন আরবে কন্যাসন্তান হলে তার পিতাকে লোকেরা নানা গালি দিত। কন্যার পিতাকে গালি দেওয়ার এই অপসংস্কৃতি আজকের আধুনিক যুগেও অনেক সমাজে দেখা যায়। মহানবি (সা.) অত্যন্ত কঠোরতার সঙ্গে এ ব্যাপারে সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন- 'তোমরা মেয়ে সন্তানের পিতাকে গালি দেবে না, কারণ আমি নিজেই মেয়েদের পিতা।' উল্লেখ্য, প্রিয় নবি (সা.) নিজে চারটি মেয়েরত্নের গর্বিত পিতা ছিলেন।

এই মেয়ে যখন বড় হয়ে ওঠে তখন তার বিয়ে হয়, সে হয় কারও স্ত্রী, বধূ। মহানবি (সা.) স্ত্রীর মর্যাদা ও অধিকার সম্বন্ধে সবাইকে সতর্ক করেছেন, সদুপদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তোমরা যা খাবে তাদেরও তা-ই খেতে দেবে; তোমরা যা পরবে তাদেরও তা-ই পরতে দেবে। বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণেও মহানবি (সা.) সবাইকে স্ত্রীদের ব্যাপারে সাবধান করেছেন।

তাদের সব অধিকারের প্রতি যত্নশীল থাকতে বলেছেন। স্ত্রীদের সব ন্যায্যতা ও প্রাপ্যতা পরিশোধ-সংক্রান্ত নির্দেশনার ব্যাপারেও তিনি ছিলেন অনমনীয়। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ভিত যেন মজবুত হয় সে জন্য তিনি ঘোষণা করেছেন- 'তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।' সুতরাং স্বামীর উৎকৃষ্টতার সনদ দেবে তার স্ত্রী।

তাই কাউকে উত্তম মানুষের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হলে স্ত্রীকেই ভাবতে হবে তার অনিবার্য অনুষঙ্গ হিসেবে। এ ক্ষেত্রে ইসলাম নারীকে স্বতন্ত্র মর্যাদা প্রদান করেছে। বাহ্যিকতার চাকচিক্যে কোনো ব্যক্তি যতই নিজেকে মহৎ দাবি করুক না কেন; সহধর্মিণী যদি তার ব্যাপারে ইতিবাচক ছাড়পত্র না দেয়, তবে তিনি নিশ্চিত ভন্ড। কেননা, বিবাহিত কোনো পুরুষকে তার স্ত্রীর চাইতে ভালো আর কেউ জানে না।

সে জন্যই মহানবি (সা.) ব্যক্তির উত্তম হওয়ার মানদন্ড হিসেবে স্ত্রীর সনদকে প্রাধান্য দিয়েছেন, যা নারীর সম্মানকে বাড়িয়ে দেয়। মহানবি (সা) তাঁর দুধ মা হালিমাকে নিজের পাগড়ি বিছিয়ে দিয়ে বসার জন্য আসন করে দিয়ে নারীর মর্যাদা কে আরো উন্নত করেছেন। রসুলের কথা নারীরা যদি কাজের মেয়ে হয় তাকে গালমন্দ করা যাবে না বরং তাকেও সম্মান দিয়ে কথা বলতে হবে।

নারীর মর্যাদার উপর লক্ষ্য করেই আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন "বিশ্বে যা কিছু সৃষ্টি চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার গড়িয়েছে নারী অর্ধেক তার নর"। ইসলামী শরীয়ত নারীকে তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ সর্বক্ষেত্রে যে অধিকার ও মর্যাদা দিয়েছে; আমাদের উচিত প্রকৃত অর্থেই তা সমুন্নত রাখা এবং সুরক্ষা করা।

নারীর প্রতি কোনো রূপ বৈষম্য এবং নারীকে অসম্মান কোনোমতেই মানবিক ও মূল্যবোধের সংস্কৃতির পরিপূরক নয়; বরং 'অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর'। বিশ্ব সভ্যতার গোড়াপত্তনে নারীর যে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও অবদান, তার প্রতি যথাযথ মূল্যায়ন ও গুরুত্ব প্রদান করে সামগ্রিক সৃষ্টিকে আরও অনুপম মাধুর্যে সৌন্দর্যমন্ডিত করাই আমাদের পরম কর্তব্য।

তাই শুধু দিবস নয় সর্বসময় সর্বক্ষেত্রে সর্ব অবস্থায় নারীদেরকে তার উচ্চ আসনে উচ্চ মর্যাদায় সমাসীন করা সম্মান করা আমাদের সকলের দায়িত্ব বিশ্বের সকল রাষ্ট্রে সকল সমাজে নারীরা তাদের সম্মান নিয়ে অধিকার নিয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত হোক এটি আজকের প্রার্থনা।


লেখক :  ইসলামিক কথা সাহিত্যিক গবেষক
কলামিস্ট ও প্রভাষক পুলিশ লাইন স্কুল এন্ড কলেজ, বগুড়া

mostakim bogra@gmail.com

01712-777058



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS