ভিডিও

রাজধানীর বায়ু দূষণ

প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২৪, ০৯:০৮ রাত
আপডেট: মার্চ ১৩, ২০২৪, ০৯:০৮ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

বাংলাদেশে হাঁপানি, সিওপিডিসহ বিভিন্ন শ্বাসকষ্টজনিত রোগ আশংকাজনক হারে বাড়ছে। বাংলাদেশ অ্যাজমা অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে দেশে এখন ৮৫ লাখেরও বেশি মানুষ হাঁপানিতে আক্রান্ত। তবে বিশেষজ্ঞরা তার চেয়েও বেশি উদ্বিগ্ন সিওপিডি নিয়ে। কারণ সিওপিডি দীর্ঘ মেয়াদি রোগ এবং একবার হয়ে গেলে তা পুরোপুরি সারে না।

বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর অন্যতম কারণ ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ-সিওপিডি। ১৯৯০ সালে এর অবস্থান ছিল ষষ্ঠ। তবে পরিস্থিতির এত দ্রুত অবনতি হচ্ছে যে এটা আরও নামতে পারে। আমাদের জন্য আরো দু:সংবাদ হচ্ছে, ঘাতক এই ব্যাধির অনুকূল পরিবেশ হচ্ছে দেড় কোটিরও অধিক মানুষের নগরী ঢাকা। দেশের পত্র-পত্রিকায় রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণের যে চিত্র এসেছে, তা উদ্বেগজনক। আর এই অবনতির অন্যতম কারণ বিভিন্ন সংস্থার নজরদারিহীনতা।

জানা যায়, দূষণের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি শহর সামনের সারিতে রয়েছে। দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ু দূষণ ঠেকাতে চীনের অগ্রগতি বহু মানুষের জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণামূলক শিক্ষা হতে পারে। আর চীনের উদ্যোগ কেবল অনুপ্রেরণাই নয়, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য একটি অনন্য মডেলও।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা দরকার, ২০০৮ সালে অলিম্পিক আয়োজনের আগে বেইজিং বিষাক্ত ধোঁয়ায় এতটাই আচ্ছন্ন  ছিল যে, ক্রীড়াবিদদের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য কারখানা বন্ধ করতে ও রাস্তাগুলো খালি করতে বাধ্য হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে বেইজিং তিয়ানজিনসহ ২৬টি সংলগ্ন বিস্তৃত এলাকায় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে।

এই উদ্যোগ দেশটিতে বায়ু দূষণ ঠেকাতে অনেক টেকসই অগ্রগতি নিয়ে আসে-যা আবারও আলোচনায় আসছে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, ২০২১ সালে বেইজিংয়ে ‘বিপজ্জনক’ অতি ক্ষুদ্র কণার ২ দশমিক ৫ গড় ঘনত্ব ২০১৫ সালের তুলনায় অর্ধেকে চলে আসে। ফলে যখন এটা সামনে আসছে যে, বায়ু দূষণ ঠেকাতে চীনের অগ্রগতি অনুপ্রেরণামূলক শিক্ষা হতে পারে তখন তা আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। 
রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশে বায়ু দূষণে সবচেয়ে ক্ষতিকর ভূমিকা রাখছে ইটভাটা, কলকারখানা, নির্মাণ কাজের ধূলোবালি, যানবাহনের ধোঁয়া প্রভৃতি। এসব ধোঁয়া ভয়াবহভাবে বায়ু দূষণের কারণ ঘটায়। সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করলে, দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত হলে ঢাকার বাতাসও হবে বিশুদ্ধ, নির্মল। আর তা না হলে বড় বিপদ যে অবশ্যম্ভাবী, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় বৃহস্পতিবার ঢাকা শীর্ষে উঠে এসেছে। বেলা সোয়া ১১টায় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ২৫১ নিয়ে রাজধানীর বাতাসের মান ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় ছিল’। ১০১ থেকে ২০০ এর মধ্যে একিউআই স্কোরকে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলে মনে করা হয়। ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকা একিউআই স্কোরকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়।

আর ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকা একিউআইকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়, যা বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করে। ভারতের দিল্লি ও পোল্যান্ডের রোবলাও যথাক্রমে ২৪০ ও ২৪০ একিউআই স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে। একই সময়ে নির্মল বাতাসের তালিকায় সবচেয়ে ওপরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সল্টলেক সিটি। এ শহরের স্কোর ৬। এরপরে ৭ ও ৯ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো ও ইসরায়েলের জেরুজালেম।

আমরা বলতে চাই, বায়ু দূষণে প্রাণহানি শুধু নয়, নানা ধরনের অসুখ বিসুখসহ জনসাধারণের জীবনে বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। দক্ষিণ এশীয় সরকারগুলো ক্রমবর্ধমান দূষণের কারণে বিশাল অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে না। ২০০ কোটি জনগণের আকাঙ্খা পূরণের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের টেকসই এবং দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন। ফলে দূষণের ভয়াবহতার বিষয়টি আমলে নেওয়ার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS