ভিডিও

অবন্তিকার আত্মহত্যা

প্রকাশিত: মার্চ ১৯, ২০২৪, ১১:১৫ রাত
আপডেট: মার্চ ২০, ২০২৪, ১১:০৮ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

দেশে উন্নয়ন হচ্ছে-এ কথা প্রায় সর্বত্র উচ্চারণ হচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই যে সামাজিক অবক্ষয় রোধ করা যাচ্ছে না, তার কী হবে। সমাজে সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ নারীরা। তাদের নানাভাবে অত্যাচার নির্যাতন করা হচ্ছে। নারী উত্ত্যক্ত হচ্ছে, ধর্ষণ-গণধর্ষণ করার পর তাদের হত্যা করা হচ্ছে। পরিবার মামলা করেও এর প্রতিকার পাচ্ছে না।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, সমাজ কি এভাবেই চলতে থাকবে, কোন রকম প্রতিকারহীনভাবে ? ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় গত শনিবার দিনভর উত্তাল ছিল ক্যাম্পাস। এই ঘটনায় অবন্তিকার সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে গ্রেফতারে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরে রাতে তাদের আটক করে ঢাকা মহানগর পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বাদী হয়ে মামলা করারও দাবি তোলা হয়েছে।

এদিকে অভিযুক্ত সহপাঠী ও শিক্ষককে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আমার ক্যাম্পাসে যেতে ইচ্ছে করে না, দম বন্ধ লাগে-কদিন আগে বন্ধুর সঙ্গে কথোপকথনকালে বলেছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকা। এরপর গত শুক্রবার রাতে নিজ বাড়িতে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা  করেন তিনি। জানা গেছে, এর আগে দু বছর ধরে কয়েকজন সহপাঠী দ্বারা ক্রমাগত যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছিলেন আইনের এই মেধাবী শিক্ষার্থী।

প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেও বিচার পাননি। কেননা প্রক্টরও জড়িত ছিলেন এই যৌন হয়রানিতে। এমনটাই দাবি অবন্তিকার পরিবার ও কাছের সহপাঠীদের। আত্মহত্যার আগে অবন্তিকা তার ফেসবুক পোস্টেও এ নিয়ে আক্ষেপ করে গেছেন। সেই পোস্টে তিনি সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে তার মৃত্যুর জন্য দায়ী করে যান। অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল উত্তাল ছিল জবি ক্যাম্পাস। সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে এ কান্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি তুলেছেন বিক্ষ্দ্ধুরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও গতকাল বিচার দাবি করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।

অবন্তিকার যৌন হয়রানির ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।  এদিকে কুমিল্লায় নিজ বাড়িতে ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম বলেন, তার মেয়ের সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী নানাভাবে তাকে উৎপীড়ন করতে থাকলে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের কাছে নালিশ করেছিলেন। তিনি বলেন, কিন্তু সহকারী প্রক্টর ঘটনার বিচার করেননি, উল্টো মেয়েকে ডেকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। ওই ছেলের পক্ষ নেন তিনি। তখন আম্মান সিদ্দিকী আরও বেপরোয়া হয়ে পড়েন। আপত্তিকর মন্তব্য করতেন, হুমকি দিতেন। এসব ঘটনার বিচার চেয়ে না পেয়ে আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।

অবন্তিকা ছিলেন জবির আইন বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় আত্মহনন করেন অবন্তিকা। এই খবরে তার সহপাঠী ও জবির শিক্ষার্থীদের মধ্যে শোক নেমে আসে। এক পর্যায়ে তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ক্যাম্পাসের অনুষ্ঠানে আত্মহত্যা প্রতিরোধের বার্তা দেওয়া অবন্তিকার আত্মহত্যা মেনে নিতে পারছেন না।

অবাক ব্যাপার যে, যৌন হয়রানি করছে কলেজ শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ডাক্তার, কর্মচারী, পুলিশ, আত্মীয়, চাচা-মামা-খালু, দুলাভাই, আমলা, ধনীর দুলাল, ক্ষমতার আশির্বাদপুষ্ট নেতা কর্মী নামধারী দুর্বৃত্তরা। কেউ বাদ যাচ্ছে না। ধর্ষিত হচ্ছে ছাত্রী, শিশু, যুবতী, আয়া, বুয়া, গৃহবধূ, রাস্তাঘাটে, রেস্তোরাঁ, চলন্ত বাসে, স্কুল কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ও গৃহে ঘটছে এই পৈশাচিক ঘটনা।

কোথাও আজ নারীরা নিরাপদ নয়। আমাদের নারী, শিশুরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে না, এমনকি ধর্ষণের পর খুন হচ্ছে। অপরাধীরা তো এ মানব সভ্যতারই অন্তর্গত, আমাদের চার পাশেরই বাসিন্দা। সবাই কোন না কোনো পরিবারেই বেড়ে উঠেছে। সে পরিবার থেকে তারা কী শিক্ষা পেয়েছিল- এটাই আমাদের প্রশ্ন। নারী নির্যাতন, যৌন নির্যাতন, যৌন হয়রানি শুধু নারী শিশু বিরুদ্ধে নয় মানবতার বিরুদ্ধে চরম অপরাধ। নতুন সমাজ নির্মাণের জন্য এ ধরনের অবক্ষয়কে প্রতিরোধ করতে হবে এবং যে কোনো মূল্যে। এ জন্য ব্যাপকভাবে গড়ে তুলতে হবে যুব সামাজিক আন্দোলন।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS