ভিডিও

অবৈধ পথে বিদেশ গমন

প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২৪, ০৪:৫৭ দুপুর
আপডেট: মার্চ ২২, ২০২৪, ০৪:৫৭ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

মানবপাচারের উর্বরভূমি হিসেবে যেসব দেশকে ভাবা হয়, বাংলাদেশের স্থান তার ওপরের দিকে। সম্প্রতি তিউনিসিয়ার কাছে ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবে নিহত হয়েছেন ৯ জন। এর মধ্যে ৮জনই বাংলাদেশি। এর আগে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ ৪৯০ জন অবৈধ অভিবাসীকে আটক করেছে দেশটির অভিবাসন বিভাগ। আটকদের মধ্যে বাংলাদেশি ছাড়াও নেপাল, আফগানিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক রয়েছেন। এই ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নানা ধরনের উদ্যোগ ও তৎপরতা সত্ত্বেও মানব পাচার কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। এ অঞ্চলের কিছু মানুষ ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় সহায় সম্বল বিক্রি করে অথবা চড়া সুদের দাদনের টাকা একশ্রেণির দালাল-প্রতারকের হাতে তুলে দিয়ে অবৈধভাবে বিদেশ যাওয়ার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পথে পাড়ি জমাচ্ছে। দালালদের মিষ্টি কথার ফাঁদে পড়ে যুবকরা জনপ্রতি ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা দিয়ে থাকে। এর বিনিময়ে দালাল চক্র ইউরোপ-মালয়েশিয়া-মধ্যপ্রাচ্যে তাদের চাকরির নিশ্চয়তা দেয়। যারা সমুদ্র পথে মালয়েশিয়া যায় তাদের পথে পথে বিপদে পড়তে হয়, এমনকি অকাল মৃত্যু পর্যন্ত তাদের ভাগ্যে জোটে। টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ট্রলার যোগে যুবকদের মালয়েশিয়া পাঠানোর কিছুদিন পর তাদের নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ জানতে পারে পরিবার।

মালয়েশিয়ায় বিপদ সংকুল যাত্রায় সলিল সমাধির পাশাপাশি থাইল্যান্ড ও ভিন্ন রাষ্ট্রের কোস্ট গার্ডের হাতে আটক হয়ে জেলের ঘানি টানার মতো ঘটনাও ঘটে থাকে। তারপরও দালালদের প্ররোচনায় উন্নত জীবনের হাতছানিতে উত্তাল সাগরে অনিশ্চিত গন্তব্যের পথে ভেসে চলেছে মানুষ। বস্তুত পুরো প্রক্রিয়াটির সঙ্গে কয়েকটি শক্তিশালী পাচারকারী চক্র জড়িত বলে অভিযোগ আছে। ফলে বিজিবি কোষ্ট গার্ড পুলিশের অব্যাহত অভিযান সত্ত্বেও সাগর পথে মানুষের অনিশ্চিত যাত্রা রোধ করা যাচ্ছে না।


এদিকে ইউরোপ-আমেরিকার পথে নিয়ে যাচ্ছে দালাল চক্র। লিবিয়া-তিউনিসিয়া মরক্কো হয়ে ইউরোপে প্রবেশ এবং মেক্সিকো সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে আমেরিকা যাওয়ার স্বপ্ন দেখায় এই দালাল চক্র। কিন্তু প্রায়ই ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবে মৃত্যুর খবর পাওয়া যায় পত্র-পত্রিকায়।

প্রাণের বিনিময়ে অর্থ হাতিয়ে নেয় এই দালালরা। কর্মসংস্থানের সন্ধানে বিদেশগামীদের অনেকেই নানাভাবে প্রতারণা ও হয়রানির শিকার হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে কেবল বিদেশ গমনেচ্ছুরাই সর্বস্বান্ত হচ্ছে না, এর ফলে দেশও অপরিমেয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

প্রতারকদের কারণে ইতিমধ্যে বহির্বিশ্বের অনেক সম্ভাবনাময় শ্রম বাজার হারাতে হয়েছে আমাদের। তারপরও থেমে নেই এ প্রক্রিয়া। প্রতারণা ও হয়রানি রোধ কল্পে এক পর্যায়ে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) রেজিষ্ট্রেশন প্রথা চালু করে। আন্তর্জাতিক সনদ অনুযায়ী অভিবাসী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের অধিকার রক্ষার দায়িত্ব সরকারের।

এ আইনের মাধ্যমে প্রতারণা রোধ করা গেলে তা অভিবাসীদের জন্য যেমন স্বস্তিদায়ক হবে, তেমনি দেশের জন্যও হবে কল্যাণকর। তবে অবৈধভাবে বিদেশ গমন রোধ করা না গেলে এ খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়া বন্ধ হবে না। এ ব্যাপারে সরকারের কঠোর ভূমিকার পাশাপাশি জনসচেতনতারও প্রয়োজন রয়েছে। আমরা বলতে চাই, মানব পাচার চক্রের সব ধরনের অপতৎপরতা রুখতে হবে।

সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাধারণ মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধ পথে বিদেশ গমনে যেন উদ্বুদ্ধ করতে না পারে সেটিও নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নিতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে হবে। আবার শুধু প্রতারণা বন্ধের উদ্যোগ নিলেই হবে না, এর পাশাপাশি সরকারকে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার ব্যাপারেও মনোযোগ দিতে হবে।

আন্তর্জাতিক বাজারে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে আমাদের দেশ থেকে যে জনশক্তি রফতানি হয়, তাদের অধিকাংশই আধাদক্ষ বা অদক্ষ পর্যায়ের। অদক্ষ হওয়ার কারণে এসব শ্রমিকের মজুরির পরিমাণ হয় খুবই কম।

ফলে জমিজমা বিক্রি বা ঋণ করে বিদেশে পাড়ি দেয়ার পর কঠোর পরিশ্রম করেও খরচের টাকা উঠানোই দুরূহ হয়ে পড়ে। সরকার এসব বিষয়ে দৃষ্টি দেবে- এটাই প্রত্যাশা।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS