ভিডিও

অরক্ষিত রেলক্রসিং

প্রকাশিত: মার্চ ৩১, ২০২৪, ০৫:০০ বিকাল
আপডেট: মার্চ ৩১, ২০২৪, ০৫:০০ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনা প্রতিদিনের। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো যোগ হলো রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা। প্রায়ই সারা দেশের কোথাও না কোথাও রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু যেমন হচ্ছে। তেমনিভাবে হতাহতের সংখ্যাও কম নয়।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, রেলপথে যাতায়াত অনেকটা নিরাপদ ও আরামদায়ক। কিন্তু যখন নানা কারণে যাতায়াতের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়, একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটে- তখন তা স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগজনক বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে। বিশেষ করে, অসচেতনতা, অরক্ষিত রেলক্রসিং সহ নানা কারণে দুর্ঘটনা ঘটে এবং যেসব তথ্য সামনে আসে তা অত্যন্ত ভীতিকর।

সম্প্রতি প্রকাশিত খবরে জানা গেল, ভুসি বোঝাই একটি ট্রাক রেল গেটে ঢুকে পড়ে, যখন রেলক্রসিংয়ের গেট খোলা ছিল। আর সে কারণে খুলনাগামী রকেট মেইল ট্রেনের সামনে পড়ে। পড়ে যাওয়ার আগেই ধাক্কা খেয়ে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে উল্টে যায় ট্রাক। এ সময় ট্রাকের ভেতরে থাকা চালক ও হেলপার ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

তথ্য মতে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে যশোর সদরের চুড়ামন কাটি রেলক্রসিংয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। অপরদিকে টাঙ্গাইলের ভুঞাপুর উপজেলায় অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় শিশুসহ অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত হয়েছেন।

এতে গুরুতর আহত হয়েছেন দুইশিশু সহ ৫ জন। সারা দেশে রেলওয়ের রেলক্রসিংয়ের সংখ্যা ২ হাজার ৫৪১টি। এর মধ্যে অনুমোদিত মাত্র ৭৮০টি। বাকি এক হাজার ৭৬১টিই অনুমোদনহীন। সব মিলিয়ে দুই হাজারের বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ক্রসিং এখন মৃত্যুর ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।  এই তথ্য নি:সন্দেহে উদ্বেগজনক। আর্থিক সংকটের কারণে অনেক রেলক্রসিংয়ে এখনো পাহারাদার নিযুক্ত করতে পারেনি।

ফলে রেলক্রসিংগুলোতে নেই কোনো গেটম্যান, এমনকি এসব গেটে কোনো গেট বেরিয়ারও নেই। নেই ডিভাইস পদ্ধতির সিগন্যাল সিস্টেমও। ফলে ঝুঁকি নিয়ে যেমন রেলপথে চলছে রেল, তেমনিভাবে রেলক্রসিং পার হচ্ছে শত শত মানুষ ও যানবাহন। আর এই ঝুঁকির মুখে রেলক্রসিংগুলো পরিণত হয়েছে এক একটি মৃত্যু ফাঁদে।

আবার সারাদেশে রেলওয়ের অনুমোদিত রেলক্রসিং ছাড়াও স্থানীয় মানুষ তাদের চলাচলের সুবিধার্থে তৈরি করে নিয়েছে অনেক রেলক্রসিং। এসব ক্রসিংয়ে শুধু সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড থাকে। ফলে এসব ক্রসিংয়েও দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। অনুমোদিত এবং অবৈধ রেলক্রসিংয়ে যানবাহন পারাপারের দায়িত্ব রেল কর্তৃপক্ষের নয়। এসব দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে রেলওয়ের কোনো ধরনের দায়ভারও থাকে না।

ফলে অবৈধ ক্রসিংয়ে মানুষ এবং যানবাহনকে নিজ দায়িত্বে পার হতে হয়। সারা দেশের অধিকাংশ রেলক্রসিংই অরক্ষিত। খোদ রাজধানীর রেলক্রসিংগুলোতেও প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। অরক্ষিত রেলক্রসিং যেমন সুরক্ষিত রেলক্রসিংয়েও যানবাহন চালকদের অসতর্কতা, সিগন্যাল না মানা, তেমনি ক্রসিংয়ের গেট লাগানোর পরও যানবাহন নিয়ে পেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টার কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে।

দুর্ঘটনা রোধে অবিলম্বে অবৈধ রেলক্রসিং বন্ধ করা দরকার। জননিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সামগ্রিকভাবে ক্রসিং ব্যবস্থা নিয়ে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। আইন অনুযায়ী রেললাইনের দুই পাশে ২০ ফুট জায়গায় সব সময় ১৪৪ ধারা বলবত থাকে।

তাই রেললাইনের উপর বাজার হাট মার্কেট কীভাবে বসে তা বোধগম্য হয় না। অবশ্য এসব ব্যাপারে দেশের মানুষও খুব একটা সচেতন নয়। নিয়ম-কানুন ও আইন সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিয়ে রেল ক্রসিংগুলো সুরক্ষিত করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS