ভিডিও

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস

সাজ্জাদ পল্লব

প্রকাশিত: এপ্রিল ০২, ২০২৪, ০৭:০০ বিকাল
আপডেট: এপ্রিল ০২, ২০২৪, ০৭:০০ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

আজ ২রা এপ্রিল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। এই ধরনের রোগ সমূহকে আমরা এতোদিন অবহেলার চোখে দেখেছি, অভিশপ্ত, পাপের ফসল, জ্বীন-ভূত এর আছর ইত্যাদি বলে আখ্যায়িত করেছি। এইসব বিষয়ে সারা বিশ্ব ব্যাপী প্রচুর গবেষণা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে, গবেষণা বলছে এগুলো এক ধরনের অসুখ।

আর এই অসুখ সমূহ যদি সময় মত লক্ষ্য করে চিকিৎসা নেওয়া যায় তাহলে ঐ অসুস্থ মানুষকে কিছুটা হলেও স্বাভাবিক করা যায়। অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিরা অনেক সময় অনন্য প্রতিভার অধিকারী হতে পারে যার বহু নজির পৃথিবীতে আছে, আমাদের সকলেরই উচিত অবহেলার চোখে না দেখে ওদের পাশে দাঁড়িয়ে ওদের সুপ্ত প্রতিভার সন্ধান করা।

অটিজম বা অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিসঅর্ডার! এটি আসলে কী! এটি এক ধরনের মানসিক বিকাশগত সমস্যা। যা সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে সামাজিক কার্যকলাপ, আচরণ, যোগাযোগ ও পারস্পারিক মিথিষ্ক্রিয়া বা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে।

অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিসঅর্ডারের সাথে আসলে ৪টি বিষয় জড়িত : এসপার্গার’স সিন্ড্রোম, অটিস্টিক ডিসঅর্ডার, চাইল্ডহুড ডিসইন্টিগ্রেটিভ ডিসঅর্ডার এবং এটিপিকাল অটিজম। এদের মধ্যে অটিস্টিক ডিসঅর্ডার সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয় এবং অটিজম বলতে মূলত এটিকেই বোঝানো হয়।

জন্মের প্রথম ৩ বছরের মধ্যেই সাধারণত এ সমস্যা ধরা পড়ে। আমাদের দেশে প্রতি ১০ হাজার শিশুর মাঝে কমপক্ষে ১৭ জন শিশু অটিজমে আক্রান্ত হচ্ছে এবং প্রতি ১০ হাজার ছেলে শিশুর মাঝে ২৪ জন ছেলে শিশু ও প্রতি ১০ হাজার মেয়ে শিশুর মাঝে প্রায় ১০ জন মেয়ে শিশু অটিজমে আক্রান্ত।

কারণ : অটিজম কেন হয়, তা আসলে এখনো পরিষ্কারভাবে জানা সম্ভব হয়নি। তবে ধারণা করা হয় যে, কিছু জেনেটিক এবং পরিবেশগত কারণে অটিজম দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থায় অ্যালকোহল বা কিছু মৃগী রোগের ওষুধ সেবন করলে, গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত স্থূলতা বা ডায়াবেটিস রোগে বা রুবেলায় আক্রান্ত হলে শিশুর অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।

মেয়ে শিশুর চেয়ে ছেলে শিশুর অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার হার প্রায় ৪ গুণ বেশি। বেশি বয়সে সন্তান নিলে শিশুর অটিজমের সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়। শহুরে, শিক্ষিত, ধনী পরিবারে অটিজমে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি।

প্রাথমিক লক্ষণসমূহ : শিশু যদি অযথা হাসে, কোনো ভয় বা বিপদ না বোঝে, ব্যথা পেলে যদি না কাঁদে, একা থাকতে পছন্দ করে, কোনো খেলনা বা বস্তু অস্বাভাবিক পছন্দ করে, আদর পছন্দ না করলে বা না বুঝলে, অসংলগ্নভাবে একই খেলা বারবার খেলে, চোখের দিকে না তাকায়, একই কাজ বারবার করে, প্রশ্ন করলে উত্তর না দিয়ে একই প্রশ্ন করে, অন্যদের সাথে খেলতে বা মিশতে না চায়, নিজের চাওয়া বোঝাতে সমস্যা হয় বা অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার করে, কোনো শব্দ হলে সেদিকে সাড়া না দেয়া বা জোরে শব্দ হলে সহ্য করতে না পারে, একা একা ঘুরতে থাকে বা খেলনা ঘুরাতে থাকে, রুটিন পরিবর্তনের সাথে সহজে খাপ খাইয়ে নিতে না পারে, শিশুকে ধরলে বা কোলে উঠতে অপছন্দ করে, তাহলে প্রাথমিকভাবে অটিজম সন্দেহ করা যেতে পারে।


চিকিৎসা ও প্রতিকার : শিশুর মাঝে অটিজমের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। দ্রুত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা শুরু করলে অটিজমের অনেক জটিলতাই এড়ানো সম্ভব।

যোগাযোগ ও আচরণগত থেরাপি, অ্যাপ্লায়েড বিহেভিয়ারেল এনালাইসিস, অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ থেরাপি, সেনসরি ইন্টিগ্রেশন থেরাপি প্রভৃতির মাধ্যমে অটিজম ও এর জটিলতার চিকিৎসা সম্ভব।

সর্বোপরি সচেতনতা ও শুরুতেই রোগ নির্ণয় সম্ভব হলে অটিজম জটিলতা অনেকাংশে পরিহার করা সম্ভব। সচেতন সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। অসহায় এই শিশুদের পাশে দাঁড়িয়ে মানবাধিকারের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।


লেখক : সাংস্কৃতিক কর্মী ও সংগঠক

01711-884898



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS