ভিডিও

পাট খাতে নতুন সম্ভাবনা

প্রকাশিত: এপ্রিল ০৭, ২০২৪, ১১:০১ রাত
আপডেট: এপ্রিল ০৭, ২০২৪, ১১:০১ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

একটি দেশের সার্বিক সমৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে রপ্তানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর রপ্তানি আয় বাড়াতে সরকারি উদ্যোগ, পাট পণ্যের বৈচিত্র্যায়ন, মানসম্পন্ন কাঁচামালের সহজলভ্যতা ও শক্ত ব্যবস্থাপনার কারণে দীর্ঘদিন ঝুঁকতে থাকা পাটখাত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে- এমন খবর যখন সামনে আসছে, তখন তা অত্যন্ত ইতিবাচক বলেই প্রতীয়মান হয়।

লক্ষ্যণীয়, গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বে আবার পাটের রমরমা বাণিজ্য চলছে।  এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, সম্প্রতি পাটের নতুন বাজার খোজার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যা অত্যন্ত সময়োপযোগী বলেই প্রতীয়মান হয়। দেশের সম্পদ খুবই সীমিত উল্লেখ করে, পাটকে কাজে লাগানোর বিষয়ে তাগিদ দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন এক সময় পাট রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হতো। আমাদের দেশে সবচেয়ে উন্নত মানের পাট হয়।

অর্থনীতিতে একে ব্যাপকভাবে কাজে লাগাতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও সম্ভব। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী পাটের সোনালি সুদিন ফিরে আসছে। পাট পণ্যের জাগরণ শুরু হয়েছে নতুন করে। প্লাস্টিক ও সিনথেটিক পণ্যের পরিবেশ বিধ্বংসী আগ্রাসন ঠেকাতে পাটের প্রতি মনোযোগী হয়ে উঠেছে বিশ্বের সচেতন মানুষ। ফলে, দেশের এক সময়ের প্রধান অর্থকরী ফসল পাটের কদর বাড়ছে বিশ্বব্যাপী।

মানুষ যত সচেতন হচ্ছে ততই ব্যবহার বাড়ছে পাটের। বাংলাদেশেও সেই হওয়া লেগেছে। এক সময় বাংলাদেশের পাটের বাজার হিসেবে পরিচিত ছিল, ভারত, চীন ও পাকিস্তান। বর্তমানে সেই বাজার বিস্তৃত হয়েছে প্রায় ৬০টি দেশে। নতুন নতুন বাজারের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন আর শুধু পাটের বস্তা উৎপাদনেই সীমাবদ্ধ নেই।

নিরবচ্ছিন্ন গবেষণার মাধ্যমে এখন পাট থেকে ২৮৫ ধরনের পাট পণ্য দেশে বিদেশে বিক্রি করে বাংলাদেশ। ১৭টি পণ্য মোড়কজাতে ‘ম্যান্ডেটরি প্যাকেজিং অ্যাকট’ বাস্তবায়ন করায় পাটের বস্তার অভ্যন্তরীণ বাজার বেড়েছে কয়েকগুণ। পাট থেকে মিহি কাপড় তৈরির গবেষণায় দেশের বিজ্ঞানীরা অনেকটাই এগিয়ে গেছেন। পাট পাতার তৈরি চা রপ্তানি শুরু হয়েছে জার্মানিতে। সব মিলিয়ে এক সময়ের বিশ্ব খ্যাত বাংলাদেশি পাট আগের গৌরবের জায়গায় ফিরে আসছে ধীরে ধীরে।

পাট সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা বলছেন, পাট পণ্যের ইতিবাচক ধারায় আসার কারণ হলো আন্তর্জাতিক বাজারে পাট সুতার দাম বাড়া ও ডলারের ভ্যালুয়েশন। এই দুটো কারণেই পাটখাতে কিছুটা প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। এ ছাড়া তাদের ভাষ্য, আন্তর্জাতিক বাজারে পাটের দাম বাড়তে থাকলে ক্রেতারা কম কেনেন। ফলে চাপের মুখে পড়েন দেশের রপ্তানিকারকরা। পাট খাতে সামান্য প্রবৃদ্ধি হলেও ভালো নেই রপ্তানিকারকরা। সরকারের সার্বিক ব্যবস্থাপনা এখনো অপ্রতুল বলেও জানা যাচ্ছে।

আর দেশের বাজারে যারা পাটপণ্য সরবরাহ করেন তারাও ভালো নেই। সিনথিটিক, প্লাস্টিক, পলিথিনের সহজলভ্যতার কারণে পাটের দিকে মানুষের আগ্রহ কম এমনটিও সামনে এসেছে। আমরা মনে করি সিনথিটিকের বিষয়টা যেমন ভাবতে হবে, তেমনি অপ্রতুল ব্যবস্থাপনার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।

প্রসঙ্গত পাট খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় পোশাক খাত থেকে হলেও পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির গুরুত্ব অনেক বেশি। কেননা পোশাক খাত থেকে অর্জিত রপ্তানি আয়ের বড় অংশ চলে যায় কাঁচামাল আমদানিসহ কনসালটেন্সি ফি ও অন্যান্য সেবা বাবদ। অন্যদিকে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি আয়ের পুরো অংশই দেশে থেকে যায়।

ফলে এ বিষয়ে সরকার ও পাট খাতের সঙ্গে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে -যা আমলে নিতে হবে। পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদন যেহেতু শ্রম ঘন তাই এ খাত কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও বড় ভূমিকা রাখতে পারে- তাই এই বিষয়গুলো অনুধাবন করা জরুরি।

সর্বোপরি বলতে চাই, পাটের সুদিন ফেরাতে সরকার ইতিমধ্যে নানা উদ্যোগও হাতে নিয়েছে। ফলে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে আবারও পাটের হারানো সুদিন ফিরে পাওয়া সম্ভব বলেই আমরা মনে করি।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS