ভিডিও

ঈদের বন্ধে ডেঙ্গু প্রতিরোধ

অধ্যাপক ড. মো: গোলাম ছারোয়ার অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান কীটতত্ত্ব বিভাগ জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম) মহাখালী, ঢাকা।

প্রকাশিত: এপ্রিল ১০, ২০২৪, ০১:২৪ দুপুর
আপডেট: এপ্রিল ১০, ২০২৪, ০১:২৪ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

চিকুনগোনিয়া ও ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা ঈদের ছুটি বা কোন উৎসব বুঝেনা । আবার ডেঙ্গু বা চিকুনগোনিয়া ভাইরাসও কোন প্রকার উৎসব বুঝতে পারেনা  ।

তারা শুধু পারে নিজের মনে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে পোষক শরীরের ক্ষতি সাধন করতে । ঈদের ছুটিতে বা যে কোন উৎসবে যদি তার পোষক শরীর অন্য কাজে ব্যস্ত থাকার কারনে এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হয় ।

তবে তাদের জন্য এই ছুটি হবে আনন্দের আর পোষক শরীরের অর্থাৎ আমাদের জন্য হয়ে উঠবে নিরানন্দের । মশকী চায় তার বংশ বিস্তারের সুন্দর পরিবেশ আর ভাইরাস চায় তার রেপ্লিকেশনের মাধ্যমে রোগ সৃষ্টি করতে । দুটোই একসাথে ঘটবে যদি এডিসের পোষক শরীর মানুষের উদাসীনতা ও অসাবধানতা থাকে ।

থাকে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা। জলবায়ু যেমন মশার প্রজননের জন্য ভালো পরিবেশ তৈরি করছে । তেমনি ঈদে যাতায়াতও তাদের সম্প্রসারনে সাহায্য করছে ।

তাদের প্রজনন ক্ষেত্র যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে একই ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় অক্ষমতা । ভাইরাস হয়ে উঠছে শক্তিশালী ও বেপরোয়া । 

ঈদে বাড়ী ফেরা ৫ কোটি মানুষের বাসা যেন দীর্ঘ বদ্ধে এডিস মশার আস্তনায় পরিনত না হয় ।

আসন্ন ঈদুল ফিতরের ছুটিতে ঢাকা সহ বিভিন্ন শহরে কর্মজীবি মানুষ শিকরের টানে আপজনদের সাথে ঈদ করতে গ্রাম মুখী হচ্ছেন। এক পরিসংখানে দেখা গেছে এই ঈদে ঢাকা সহ অন্যান্য শহর হতে প্রায় ৫ কোটি মানুষ ঘরে ফিরছে।

এই সুযোগে তাদের ফেলে যাওয়া বাসা  বাড়িতে যাতে এডিসের লার্ভার কারখানায়  পরিনত না হয় সেই দিকে লক্ষ্য রাখা অতীব জরুরী। এই ঈদে লম্বা ছুটিতে পড়ে যাতে এডিস মশার বংশ বিস্তারে ঘৃতাহুতি না দেয়া হয় সেই দিকটা অতি যত্ন সহকারে মনে রাখতে হবে ।

এডিস মশার জীবন চক্র হতে দেখা যায় ডিম ফুঁটে লার্ভা ও লার্ভা হতে পিউপা হয়ে পুর্নাঙ্গ মশায় পরিনত হতে এক সপ্তাহ সময় লাগে । তাই ফেলে যাওয়া বাসায় জমানো পানির সকল উৎস বন্ধ করে লার্ভা উৎপাদনের সুযোগ ধ্বংসের ব্যবস্থা করা অতীব জরুরী।

একই সাথে এই বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রামে যাওয়া আসায়ও সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে । এই বাড়তি লোকের যাওয়া আসার জন্য যে অতিরিক্ত পরিবহন প্রয়োজন সেগুলোর ধোয়ার স্থান গুলি অবশ্যই লার্ভার অভয়ারন্য হতে রক্ষা করতে হবে ।

তাই অধিক কাজের প্রেসারে পরিবহন কর্মীরা যখন পরিবহন গুলো ধোয়ার কাজ করবেন তখন যেন মনে রাখেন ঈদের ছুটির সময় পানি যেন জমে না থাকে।

শহরে বিপুল সংখ্যক রেষ্টুরেন্টের পিছনে যে জায়গায় প্লেট ধোয়ার কাজ করা হয় সেই স্থান গুলি অবশ্যই পরিষ্কার ও শুস্ক রাখার দায়িত্ব মালিক শ্রমিক উভয়েরই ।

শহরে বড় একটি অংশ জুড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,স্কুল ,কলেজ ,বিশ্ববিদ্যালয় ,গবেষনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ।এই প্রতিষ্ঠান গুলি একটি দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ থাকবে । এই বন্ধের মধ্যে যেন কোন ভাবেই জমানো পানি না থাকে সেই দিকে দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গের সুদৃষ্টি দিতে হবে । আমাদের দেশের এডিস মশার লার্ভার সবচাইতে উর্বরতম জায়গা হল তৈরিকৃত ইমারতের নীচের তলা যেখানে সবক্ষনিক পানি জমে থাকে । ঈদের ছুটিতে যখন এই বাসা তৈরি শ্রমিকেরা ছুটিতে যাবেন তখন ব্যবস্থাপনা এমন হয়।


মশা সমস্যা এখন শুধু সিটি করপোরেশন ,পৌরসভা বা সরকারের কোন একক দায়িত্ব নয় । আবার এই সমস্যা শুধুই আর শহর বা সিটি করপোরেশন  কেন্দ্রিক সীমাবদ্ধ নয় ।এই সমস্যা এখন সারা দেশের সকল মানুষের । আগে ডেঙ্গু চিকুনগোনিয়াকে নেগলেকটেড ট্রপিক্যাল ডিজিজ বলা হলেও এখন তা সকল শ্রেনী পেশার মানুষের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে।

ঈদের ঘরেফেরা মানুষের যাতায়াত আর মিলন মেলায় তা আরও একধাপ এগিয়ে দিবে । তাই যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন একান্ত জরুরী । গ্রাম এলাকায় স্কুল কলেজও রয়েছে সেই জায়গা গুলো স্থানীয় প্রতিনিধি ও দায়ীত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তি বর্গ অবশ্যই নজরে নিয়ে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহন করবেন ।

না হলে মানুষ ভাইরাস-মশার যে দুষ্টু চক্র তা আমাদের চরম ভোগান্তির দিকে নিয়ে যাবে । মনে রাখা প্রয়োজন ২০০০ সাল হতে ২০২২ পর্যন্ত ২২ বছরের সকল রেকর্ড ভেঙ্গেছে ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ।

আবার ২০২৩ সালের এই দিন পর্যন্ত আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় দ্বিগুন রেকর্ড গড়েছে ২০২৪ সালে। তাই সাবধানতা যে কত বেশী প্রয়োজন বুঝতেই পারছেন ।

সাবধানতার বিকল্প নেই । হতাশ হওয়ারও কারন নেই । পবিত্র ঈদুল ফিতর দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর আমাদের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ সমৃদ্ধি ও আত্নীক মুক্তি । সন্তুষ্টি অজির্ত হোক মহান পরাক্রমশালী সৃষ্টিকতার । আত্নশুদ্ধি আর পবিত্রতায় ভরে উঠুক আমাদের জীবন।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS