ভিডিও

কর্মস্থলে ফেরা নির্বিঘ্ন হোক

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৫, ২০২৪, ১১:৩০ রাত
আপডেট: এপ্রিল ১৫, ২০২৪, ১১:৩০ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

শিকড়ের টানে বাড়ি ফেরার তাগিদ সবার ভেতরই কেমন এক আকুলি বিকুলি তৈরি করে। আপনজনের সঙ্গে ঈদ করতে মানুষ যে কোন কষ্ট সহ্য করতে রাজি থাকে। সারাদেশের মানুষের এই তাগিদ অন্তহীন-যুগের পর যুগ ধরে চলছে এ তাগিদ। এক মাস পবিত্র রমজান পালন শেষে শুরু হয় বাড়ি ফেরার উৎসব। ঈদ শেষে আবার চাকরিস্থল ঢাকা।

ঈদ শেষ হলেই পবিত্র ঈদুল ফিতরের টানা ছয়দিন ছুটি শেষে আবার ঢাকায় কর্মস্থলে ফেরার তাড়া। এখন বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকামুখী মানুষর ভিড় বাড়ছে। নীরব, সুনসান ঢাকায় আবার ভিড় উপচে উঠছে। ঈদের আগে প্রায় দেড় কোটি মানুষ ঢাকা ছেড়ে নিজ নিজ বাড়ি অভিমুখে যাত্রা করে। সব চাপ গিয়ে পড়ে বাস, ট্রেন লঞ্চের ওপর। সড়ক-মহাসড়কের ওপর চাপ পড়ে অত্যধিক।

তবে এবারের ঈদযাত্রা ছিল মোটামুটি স্বস্তিদায়ক। কেননা সড়ক-মহাসড়কগুলি ছিল চওড়া, নতুন পাকা করা। মহাসড়কের মোড়ে মোড়ে নতুন করা ওভার ব্রিজগুলি খুলে দেওয়া হয়েছিল। ফলে বিক্ষিপ্ত দু’একটি ছাড়া রাস্তায় দীর্ঘ যানজটে পড়তে হয়নি যাত্রীদের। তবে ছুটির শুরুতে রাত থেকে ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলমুখী সড়কে গাবতলী থেকে আমিন বাজার হয়ে টাঙ্গাইল সড়কে দীর্ঘ ২৫ কিলোমিটার রাস্তায় যানজট লেগেছিল। পরদিন দুপুর পর্যন্ত এখানে গাড়ি এগোতে পারেনি। কারণ ফিটনেসবিহীন লক্কর ছক্কর মার্কা গাড়ি রাস্তায় খারাপ হয়ে গিয়ে রাস্তায় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি করে।

সাভারের আশুলিয়া এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন দিনাজপুরের শাকিল মাহমুদ। আরেকটি কারখানায় চাকরি করেন তার স্ত্রী। ঈদে বাড়ি যেতে সোমবার দিবাগত রাত ৪টায় অন্যদের সঙ্গে মাইক্রোবাসে ওঠেন তারা। শুধু চন্দ্রা এলাকা পার হতেই তাদের লেগে যায় ১২ ঘন্টা। শাকিল মাহমুদ বলেন, উত্তরাঞ্চলের মানুষ যারা জীবিকার তাগিদে এদিকে থাকি, চাইলেও সব সময় বাড়ি যেতে পারি না।

ঈদটা আমাদের কাছে অনেক আবেগের। কিন্তু প্রত্যেকবার বাড়ি যেতে যানজটের কারণে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়। শুধু শাকিলের পরিবারই নয়, হাজার হাজার পরিবারকে সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ২৪ ঘন্টা মহাসড়কে অসহনীয় ভাগান্তি-বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। এই ভোগান্তির পেছনে মূল কারণ ছিল বঙ্গবন্ধু সেতুতে এবং আরও কয়েকটি স্থানে কয়েকটি যানবাহন বিকল হয়ে পড়া।

ফিটনেসবিহীন এসব যান অন্য সবার দুর্ভোগের কারণ হয়। অথচ ঈদের আগে সমন্বয় সভা ডেকে গণমাধ্যমকে পরিবহণ মালিক, শ্রমিক ও পুলিশ দিয়েছিলেন নানা প্রতিশ্রুতি আর আশার বাণী। বলেছিলেন ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বলা হয়েছিল ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামতে দেওয়া হবে না। গত ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত এক সমন্বয় সভায় যানজট বা ব্লক তৈরি হতে পারে এমন এলাকা চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ড্রোনে হাইওয়েতে নজরদারি চালানোর কথা বলেছিলো সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ।

বলেছিলেন ত্রুটিপূর্ণ কোন যানবাহন যাতে সড়কে না নামে সেটি নিশ্চিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশের অ্যাডিশনাল আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন খান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, এবারের ঈদ যাত্রায় কোনভাবেই ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলতে দেওয়া হবে না। কিন্তু ঈদযাত্রায় প্রথম ২-৩ দিন মহাসড়কের অবস্থা স্বাভাবিক থাকলেও ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় পরিস্থিতি। যানবাহনের চাপ ও সংখ্যা যত বাড়তে থাকে, মহাসড়কের জট ততই বাড়ে। বিশেষ করে চন্দ্রা, টাঙ্গাইল ও বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপরে বেশ কয়েকটি যানবাহন বিকল হয়ে পড়ায় ঘন্টার পর ঘন্টা ভুগতে হয় যাত্রীদের।

অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, সড়কের মান ভালো থাকলেও ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি ও দুর্বলতা যাত্রীদের ভোগান্তি বৃদ্ধি করে। আমরা মনে করি সড়ক, রেল ও নৌপথে টহল এবং নজরদারি বাড়িয়ে ভোগান্তির মাত্রা সহনীয় করা যায়। তার জন্য রাস্তায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি নামানো বন্ধ করে দিতে হবে। কিছুদিন পর পর আমরা মুখোমুখি হব আরেকটি ঈদের-ঈদুল আজহা।

সেই ঈদে মানুষ যেন অপেক্ষাকৃত উন্নত পরিবেশে উৎসব করতে পারে। এখন রাস্তায় সমস্যা নেই, সমস্যা হচ্ছে রাস্তায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি। এ গাড়িকে রাস্তায় নিষিদ্ধ করতে হবে।


এখন রাস্তা কোন সমস্যা নয়, সমস্যা হচ্ছে ফিটনেসবিহীন গাড়ি



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS