ভিডিও

স্মার্ট বাংলাদেশে কিশোর গ্যাং যখন বিষফোঁড়া

মিনহাজুর রহমান মাহিম

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৬, ২০২৪, ০৬:৫৮ বিকাল
আপডেট: এপ্রিল ১৬, ২০২৪, ০৯:৩৩ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে কিশোর অপরাধ চরমভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাধারণত কিশোর অপরাধের সাথে জড়িতদের বয়স ১৫ থেকে ১৭ এর মধ্যে হয়ে থাকে। অপরাধে জড়িতদের নেওয়া হচ্ছে সংশোধনাগারে এবং প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়াতে তাদের বিরুদ্ধে কঠিন আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে না।

সাধারণত তারা মাদকাসক্ত, মাদক চোরা চালান, ইভটিজিং, সন্ত্রাসী গ্যাং তৈরি করে চলাফেরা করা, জমি দখল করার জন্য ভাড়া খাটা, হামলা, খুন, রাজনৈতিক মিটিং-মিছিলে গিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি করা, ছেলে-মেয়ের অবাধ মেলামেশা, টাকার বিনিময়ে সামাজিক অপকর্মে জড়ানো সহ ইত্যাদি সামাজিক অপরাধে জড়িত থাকে।

এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটক ও লাইকিতেও এদের অসহনীয় কন্টেন্ট দেখা যায়, যার মাধ্যমে আরো অনেক কিশোরই কিশোর অপরাধের জন্য উৎসাহিত হয়।

রাজধানী ঢাকাসহ পুরো বাংলাদেশে এদের উৎপাত রয়েছে। তবে ঢাকার মোহাম্মদপুর, মিরপুর, উত্তরা, ডেমরা ইত্যাদি স্থানে এদের উৎপাত অতিরিক্ত। সাধারণত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের প্রতিনিধিত্বেই তারা অপরাধে জড়িত হতে উৎসাহিত হয়ে থাকে।

যার দরুণ অপরাধীরা কারাগারে যাওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই জামিনে বের হয়ে আবারো অপরাধ চালিয়ে যেতে থাকে। তাদের মধ্যে অপরাধে জড়িত হওয়ার পরেও ন্যূনতম কোনো অপরাধবোধ কাজ করে না, তারা দ্বিধা করে না জেলে যাওয়া নিয়ে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সংশ্লিষ্টতা থাকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের হাতে পড়েও তারা খুব সহজেই জামিনে বের হয়ে আসছে। এভাবে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বাড়তে থাকলে কেউই নিরাপদে চলাফেরা করতে পারবে না।

পারিবারিক শিক্ষার অভাব, দুর্বল আইনী ব্যবস্থা, সামাজিক বিপর্যয়, মূল্যবোধের অবক্ষয়, জনপ্রতিনিধিদের অপরাধকে প্রশ্রয় দেওয়া, প্রযুক্তির অপব্যবহার, অর্থনৈতিক দুর্দশা, সঠিক দিক নির্দেশনার অভাব, বাবা মা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া সহ ইত্যাদি কারণে কিশোররা সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে।

কিশোর অপরাধ দমনে রাষ্ট্র, সমাজ এবং ব্যক্তিগতভাবে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রীয় ভাবে আইনী ব্যবস্থা কঠোর করতে হবে। সামাজিকভাবে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, পারিবারিক শিক্ষায় ত্রুটি রাখা যাবে না, সন্তানদের সঠিক খোঁজ খবর নিতে হবে, পাঠ্যপুস্তকে মূল্যবোধ গঠনে নীতি-নৈতিকতা সম্বন্ধে নির্দেশনা দিতে হবে, অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, জনপ্রতিনিধিদের এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের এই বিষয়ে বিশেষ ভাবে নজরদারি করতে হবে এবং যেসব জনপ্রতিনিধিরা এদের প্রশ্রয় দেয় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

টিকটক ও লাইকি সহ যেসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এদের উসকানিমূলক কার্যক্রম দেখা যাবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে দেশের অনলাইন পোর্টাল রক্ষণাবেক্ষণকারী আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। কিশোররা অপরাধে জড়িত হওয়ার পিছনে বাবা-মার সঠিক পরিচালনার অভাব ও অবহেলাও একটি বড় কারণ, তাই আদর্শ বাবা-মা হওয়ার জন্য বাবা-মাদের জন্য সঠিক কাউন্সিলিং করাতে হবে।

ঢাকাসহ দেশের যেসব জায়গায় এদের দৌরাত্ম্য বেশি সেসব জায়গায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে এবং সাদা পোশাক পরিহিত বাহিনীদের মাধ্যমে মনিটরিং করতে হবে। অপরাধে জড়িতদের সংশোধনাগারে নেওয়ার পাশাপাশি কাউন্সিলিং করাতে হবে, যাতে তারা পরবর্তীতে বের হওয়ার পরে আর অপরাধে না জড়ায়।

আজকের শিশু-কিশোররাই আগামীর বাংলাদেশ। তাদের মাধ্যমেই তৈরি হবে ভবিষ্যতের স্বপ্নের অত্যাধুনিক বাংলাদেশ। তারা দেশের অমূল্য সম্পদ। তারা উচ্ছন্নে গেলে দেশের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়বে। তাই কিশোর অপরাধ দমনে রাষ্ট্র, সরকার, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনি, সামাজিক ও পারিবারিক সহ সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

লেখকঃ শিক্ষার্থী, বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS