ভিডিও

বেপরোয়া গতিতে সড়কে মৃত্যুর মিছিল

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৬, ২০২৪, ১০:৪৯ রাত
আপডেট: এপ্রিল ১৬, ২০২৪, ১০:৪৯ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

ফাঁকা সড়কে বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে ঈদ ও এর আগের দিন মারা গেছে ৩১ জন। এর মধ্যে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় নিহত হয়েছে আরও ২৫ জন।

এ ছাড়া ঈদযাত্রায় সড়ক-মহাসড়কে নিয়ন্ত্রণহীন গতির বাস-মিনিবাস, মাইক্রো, প্রাইভেটকার ও থ্রি হুইলার সহ বিভিন্ন যানবাহনের মুখোমুখি সংঘর্ষে কেড়ে নিয়েছে শতাধিক প্রাণ। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন দুই শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু। পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন দেড় শতাধিক মানুষ।


গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ঘুরতে বের হয়ে বাস চাপায় নিহত হয়েছেন মোটরসাইকেল আরোহী এক দম্পতি। গত রোববার রাত সাড়ে ১১টায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর বাইপাস বাসস্ট্যান্ডে এ দুর্ঘটনা ঘটে। হৃদয় ও তানজিম নামের এই নব-দম্পতি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার কুটিপাড়ায় এক আত্মীয় বাড়িতে বিয়ের দাওয়াত খেতে যান।

বাসায় ফেরার পথে কালিয়াকৈর বাইপাস এলাকায় পৌঁছালে টাঙ্গাইলগামী এক বাসের চাপায় ঘটনাস্থলেই তারা মারা যান। ছয় মাস আগে তাদের বিয়ে হয়েছিল। পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে ঈদের দিন ঘুরতে বের হয়ে দুটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে মারা গেছে ৪ কিশোর। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ঈদের ছুটিতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত ও ৫ জন আহত হয়েছে।

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু সহ ৩ জন তিনজন নিহত হয়েছে। দুজন আরোহী মোটরসাইকেল নিয়ে সিলেট থেকে ঢাকার দিকে যাচ্ছিলেন। পথে সিলেটমুখী একটি বাস মোটরসাইকেলকে সামনে থেকে চাপা দেয়। এতে মোটরসাইকেল দুমড়ে মুচড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই দুই আরোহী মারা যান।

রাজধানীর সদর ঘাটে এমভি ফরহানের সারেং লঞ্চটি ঘাটে ভিড়ানোর সময় নৌ ট্রাফিক আইন না মানায় ঈদের দিন সদর ঘাটে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজন সহ পাঁচজনের মৃত্যু ঘটেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যানবাহনের বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণে এবারও ঈদযাত্রায় মহাসড়কে গতিসীমার সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে এবং স্পিডগানের মতো মান্ধাতার আমলের পদ্ধতি ব্যবহার করে দায় সেরেছে প্রশাসন।

ফলে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা কোনোটাই কমেনি। উন্নত দেশে মহাসড়কের সঙ্গেই প্রযুক্তি সমন্বয় করা হয়। অনেক দেশে রাস্তার সঙ্গে ম্যাগনেটিক সেন্সর থাকে। এটা গাড়ির সংখ্যা, ধরন ও এদের গতি নির্ণয় করতে পারে। এর মাধ্যমে যানবাহনের রিয়েলটাইম মনিটরিং করা সম্ভব হয়। বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণে রাস্তায় রাম্বল স্ট্রিপ দেওয়া হয়।

এ ছাড়া বিভিন্ন উৎসবে সড়ক-মহাসড়কে গাড়ির চাপ বাড়লে চালকরা যাতে বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালাতে না পারে এ জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। অথচ প্রতি বছর ঈদে সড়ক-মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হলেও এবারও যানবাহনের বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণে কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। সড়ক ও পরিবহণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালনার কারণেই দেশে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

বিশেষ করে ঈদসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবের ছুটিতে এ সংখ্যা উচ্চ লাফে বাড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদযাত্রা শুরুর পর থেকে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে। অথচ বেপরোয়া গতি তদারকিতে লোকবল ও কারিগরি সক্ষমতার ঘাটতি প্রতি বছরও একই জায়গায় আটকে থাকে। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার উদ্যোগ বরাবরের মতো এবারও ব্যর্থ হয়েছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় চলতি বছর সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। এর পেছনে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে উদ্যোগ বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত এক হাজার ৪৬৪ সড়ক দুর্ঘটনায় এক হাজার ৩৬৭ জন নিহত ও এক হাজার ৭৭৮ জন আহত হয়েছেন। ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসে দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল এক হাজার ১৭টি এবং এতে এক হাজার ৫১ জন নিহত ও এক হাজার ৪৪০ জন আহত হন।

ঈদ শেষে মানুষ রাজধানীতে যাতে নির্বিঘ্নে ফিরতে পারে তার সুব্যবস্থা করার দিকে নজর দেয়ার বিকল্প নেই। মোটর বাইক চালক ও পথচারীদেরও দায়িত্ব রয়েছে। তাদেরও ট্রাফিক রুলস সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। ঈদ শেষে মানুষ ঢাকায় যাতে নির্বিঘ্নে ফিরতে পারে, তার সুব্যবস্থা করার দিকে নজর দেয়ার বিকল্প নেই।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS