ভিডিও

সড়কে বাড়ছে লাশের সংখ্যা

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২৪, ০৯:৩৬ রাত
আপডেট: এপ্রিল ১৯, ২০২৪, ০৯:৩৬ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

ঈদের মতো সার্বজনীন ছুটির আগে-পরে রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়া কিংবা আসার সময় সড়ক দুর্ঘটনার হার খানিকটা বাড়ে, আমরা জানি। কিন্তু এবারের ঈদুল ফিতরের আগে পরে যেভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় যেভাবে প্রাণহানি ঘটছে তার নজির খুব বেশি নেই। বিপুল বিনিয়োগ সতর্কতা, আলোচনা সত্ত্বেও আমাদের সড়ক পথ এখনও কতটা অনিরাপদ, এটা তার খন্ড চিত্র।

আগের দিনই ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান ১৪ জন। এর রেশ কাটতে না কাটতেই গত বুধবার ঝালকাঠিতে বেপরোয়া ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাঁচটি যানবাহনকে চাপা দেওয়ায় শিশুসহ ১৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ১৪ জন। বুধবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে খুলনা-বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়কের গাবখান ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে চারটি শিশু ও তিনজন নারী রয়েছেন।

পত্র-পত্রিকার খবরে জানা যায় দুপুরে পৌর এলাকার পশ্চিম প্রান্তে পঞ্চম চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী গাবখান সেতুর টোল প্লাজায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বেপরোয়া গতিতে একটি ট্রাক টোল দেওয়ার অপেক্ষায় থাকা তিনটি অটোরিক্সা, একটি মাইক্রোবাস ও পিক আপ ভ্যান এবং টোল আদায়কারী ও পথচারীকে চাপা দিয়ে পাশের খাদে পড়ে যায়।

এতে ওই পাঁচটি গাড়ি দুমড়ে মুচড়ে ঘটনাস্থলে সাতজনের মৃত্যু হয়। আর আহত হন অন্তত ২০ জন। পরে তাদের হাসপাতালে নিলে আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়। ট্রাকটি রাজাপুর থেকে বরিশালের দিকে যাচ্ছিল। ঝালকাঠি পুলিশ সুপার (এসপি) আফরুজুল হক টুটুল ১৪ জন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ১৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ট্রাকের চালক ও তার সহকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এদিকে বুধবার নওগাঁ ও বাগের হাটে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় বিআরটিএর হিসাবে, গত ৪ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ঈদুল ফিতরের আগে ও পরের ১১ দিনে সারা দেশে ১৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৮৯ জন মারা গেছেন। অর্থাৎ এ সময় প্রতিদিন গড়ে ১৭ জনের প্রাণ গেছে সড়কে। ১১ দিনে আহত হয়েছেন ২৭৮ জন।

সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য সংরক্ষণ করা বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে, গত পাঁচ বছরে সারা দেশে সাড়ে ২৮ হাজার সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩১ হাজারের বেশি মানুষ। আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৪৬ হাজার জন। এই পাঁচজনের প্রতি বছর গড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষ সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন।

মাত্রাতিরিক্ত গতি যখন মহাসড়ক মরণফাঁদ তখনও নির্বিকার সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার ব্যর্থতা ঢাকতে দোহাই দিচ্ছেন মানবিকতার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়। অপরাধ করলে শাস্তি অনিবার্য। রাস্তায় চলতে গেলে হর হামেশায় চোখে পড়ে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া যানবাহনের। মূলত অতিরিক্ত গতি আর কে কার আগে যাবে সেই প্রতিযোগিতায় সড়কে দুর্ঘটনা এবং হতাহতের মিছিল থামছেই না।

এর সাথে সড়কের অব্যবস্থাপনা তো আছেই। বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ সেন্টার সারা দেশের প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার মহাসড়কের ২ শতাধিক স্থানকে অতি দুর্ঘটনা প্রবণ ‘ব্ল্যাক স্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই অবকাঠামোতে কারণ ছাড়া, মোটর যান চালকদের যোগ্যতা-দক্ষতার অভাব এবং বেপরোয়া ভাবে যান চালনার প্রবণতাকেও দায়ী করা হয়।

বাস, ট্রাক ইত্যাদি ভারী মোটর যানের চালকদের লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়ায় আরও কঠোরতা আরোপ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রয়োজন চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা। মামলায় দীর্ঘ সূত্রতা ও অভিযুক্ত চালকরা জামিনে বেরিয়ে এসে আবার গাড়ির স্টিয়ারিং ধরার সুযোগ পাচ্ছে বলে তারা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে।

দুর্ঘটনাকে তারা কোনো বিষয়ই মনে করছে না। রাস্তার কোনো নিয়ম-কানুনকেই আর গ্রাহ্য করছে না। যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণেই এদেশের মানুষ আপনজন হারিয়ে চোখের পানি ঝরাচ্ছে আর নি:স্ব হচ্ছে অসংখ্য পরিবার। অথচ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নিলে দুর্ঘটনার হার সীমিত করে আনা সম্ভব। রাস্তার নৈরাজ্য দূর করতে আমরা সরকারের কঠোর পদক্ষেপ কামনা করছি।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS