ভিডিও

উপকূলে সুপেয় পানি নিশ্চিত হোক

রিয়াদ হোসেন

প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২৪, ১০:০১ রাত
আপডেট: এপ্রিল ২২, ২০২৪, ১২:৪০ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

প্রতিবছর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আঘাতহানা ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসে বিধ্বস্ত হয় উপকূলীয় অঞ্চল। বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় শত শত গ্রাম। নড়বড়ে বেড়িবাঁধ, আবার কোথাও বেড়িবাঁধ উপচে লোনা পানি প্রবেশ করে লোকালয়ে।

ফলে দেখা দেয় তীব্র খাবার পানির সংকট। বছরজুড়ে এসব জনপদে খাবার পানির সংকট থাকলেও দূর্যোগ কিংবা বর্ষাকালে ভাঙনের ফলে এই সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করে। প্রলয়কারী ঘূর্ণিঝড় আয়লা, সিডর থেকে শুরু করে সবশেষ ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে লন্ডভন্ড হয়ে যায় আশির দশকে দেওয়া উপকূলীয় বেড়িবাঁধ।

ফলে সর্বত্র লোনা পানি ঢুকে বাড়িঘর, ফসলি জমি, মাছের ঘের ভেসে যায়। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এখানকার পানির উৎস পুকুরগুলো। এতে খাওয়া বা অনন্য কাজের জন্য ব্যবহারিত পানির ব্যাপক সংকট দেখা যায়।

উপকূলীয় জনপদে সুপেয় পানির সংকট দীর্ঘদিনের একটি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। প্রতিবছর সংকটকালীন নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও দীর্ঘমেয়াদী কোন পরিকল্পনা নেওয়া হয় না সুপেয় পানির সংকট নিরসনে।

ফলে এ সমস্যা বছরজুড়ে চলতে থাকে। দূর গ্রাম থেকে এক কলস পানি নিয়ে আসতে নারীদের প্রায় তিন থেকে চার ঘন্টা সময় লেগে যায়।

দেখা যায়, শুধুমাত্র পান করার কাজে ব্যবহার করলেও পরিবারে লোকসংখ্যা বেশি থাকায় দিনে একাধিকবারও পানি আনতে যেতে হয় তাদের। খাওয়া বাদে বেশিরভাগ অন্যান্য কাজে তারা লোনা পানির ব্যবহার করে থাকে। সুপেয় পানির সংকটে একজন মানুষের যে পরিমাণ পানি পান করার কথা রয়েছে; সেটিও তারা পান করতে পারে না।

ফলে পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়ে আক্রান্ত হয়ে তারা রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে। এজন্য উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণসহ সকল উন্নয়নের পাশাপাশি সুপেয় পানির সংকট কাটাতে সুষ্ঠু এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

প্রতিবছরই দেখা যায়, বর্ষাকালে আঘাতহানা ঘূর্ণিঝড়ের সময় সরকারি বা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার পক্ষ থেকে সুপেয় পানি বিতরণ এবং পানির জীবাণু কাটানোর জন্য জীবাণুনাশক ঔষধ দেওয়া হয়। তবে সকল কাজই গ্রহণ করা হয় সাময়িক সংকট মোকাবিলা করতে। পরবর্তীতে তাদের এ সংকট সারাবছর চললেও তেমন কোন উদ্যোগ নেওয়া হয় না।

এজন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব জনপদে সুপেয় পানির ব্যবস্থা না করলে একটি সময় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিবে তা আর দেরি নয়। উপকূলীয় গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী এদেশের মানচিত্র থেকে বিলীন হতে শুরু করবে। কারণ দীর্ঘদিন ধরে এসব অঞ্চলের মানুষ নানা সংকট আর সমস্যার সম্মুখীন হয়ে তারা মানিয়ে নিতে না পেরে স্থান ত্যাগ করছে।

গ্রাম ছেড়ে শহরমুখী হচ্ছে। এতে রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে নতুন করে নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। 
তাই উপকূলীয় এসব জনপদে সুপেয় পানি নিশ্চিত করার জন্য আরো বেশি রিভার্স অসমোসিস প্লান্ট স্থাপন করা প্রয়োজন। যেখান থেকে প্রতিঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২ হাজার লিটার বিশুদ্ধ পানি উৎপাদন করা সম্ভব হয়। পানির সংকট কাটাতে চলমান প্রকল্পগুলোর কাজ অতিদ্রুত সম্পন্ন করা দরকার।

তবে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে ইতোমধ্যে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যে উদ্যোগগুলো গ্রহণ করা হয়েছে সেখানে সমন্বিত পরিকল্পনা ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থাপনা না থাকায় প্রকল্পগুলোর সুফল মিলছে না। বিশেষ করে সরকারের অন্যান্য দপ্তরের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

উপকূলীয় মানুষদের পানির সংকট থেকে মুক্তি দিতে সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে পুকুর খনন, সরকারি জলাধারগুলোকে বাণিজ্যিক মাছ চাষের বাইরে রেখে সেগুলো সুপেয় পানির আধার হিসেবে ব্যবহার করা ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে আধুনিক পরিকল্পনা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।

লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা

hossainriyad7444@gmail.com

01518-427444



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS