ভিডিও

কারিগরি বোর্ডে জালিয়াতি

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৬, ২০২৪, ১০:৫৩ রাত
আপডেট: এপ্রিল ২৭, ২০২৪, ০১:১০ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

 সনদ বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো: আলী আকবর খানের স্ত্রী সেহেলা পারভীনকে দুর্নীতির অভিযোগে সম্প্রতি কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গত মঙ্গলবার বিকালে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহর আদালত এ আদেশ দেন।

এর আগে গত ২১ এপ্রিল সেহেলা পারভীনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট। ওই দিন আদালতে পুলিশের দেওয়া রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, এ মামলা গ্রেফতার আসামি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম এনালিস্ট একেএম শামসুজ্জামানকে পরিদর্শন শাখা থেকে কম্পিউটার সেলের সিস্টেম অ্যানালিস্ট হিসেবে পোস্টিংয়ের জন্য সাড়ে ৫ লাখ টাকা পরবর্তীতে জাল সার্টিফিকেট তৈরি করলে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না মর্মে তিন লাখ টাকা সেহেলা পারভীনকে দিয়েছেন।

গ্রেফতারের সময় কাছাকাছি দুটি বাসায় তাদের হেফাজতে থেকে একাধিক কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে চুরি করে নেওয়া হাজার হাজার অরিজিনাল সার্টিফিকেট এবং মার্কশিটের ব্লাঙ্ক কপি, তৈরি করা, শতাধিক সনদ এবং ট্রান্সক্রিপ্ট, বায়োডাটা ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল উদ্ধার করা হয়েছে। এসব কম্পিউটার, প্রিন্টার ও ল্যাপটপ দিয়ে গত কয়েক বছরে পাঁচ হাজারের বেশি আসল সনদ, মার্কশিট বানিয়ে ভুয়া লোকদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে বলে জানান পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এদিকে সনদ বাণিজ্যের অভিযোগে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো: আলী আকবর খানকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হয়েছে। গত ১ এপ্রিল কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সনদ জালিয়াতির অভিযোগে প্রথম গ্রেফতার হন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট একেএম শামসুজ্জামান। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে একে একে উঠে আসে সনদ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত বোর্ড সংশ্লিষ্ট অনেক ছোট-বড় কর্মকর্তার নাম।

দেশের কয়েকটি কারিগরি স্কুল ও কলেজের প্রধানরা এতে জড়িত বলে জানা যায়। শামসুজ্জামানকে জিজ্ঞাসাবাদের পরে গত শনিবার গ্রেফতার করা হয় বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী সেহেলা পারভীনকে। এরপর চেয়ারম্যানকে ওএসডি করে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে অনেক দিন ধরেই। ধীরে ধীরে এটা পচনের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। শুধু বর্তমান চেয়ারম্যানের সময়েই নয়, গত ১৫ বছর ধরে সনদ জালিয়াতি চক্র এখানে গেড়ে বসেছে।

পত্র-পত্রিকার খবরে বলা হয়, সাবেক একজন চেয়ারম্যানও আছেন এই দুর্নীতির সঙ্গে। এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন কর্মকর্তা বিপুল অংকের টাকা নিয়ে সিস্টেম এনালিস্ট একেএম শামসুজ্জামানকে ‘সৎ অফিসার’ হিসেবে সার্টিফিকেট দিয়েছেন। এই দীর্ঘ সময়ে ৩৫টি ইনস্টিটিউট সাড়ে ৫ হাজারের বেশি সার্টিফিকেট বিক্রি করেছে। ডিবি বলছে, এদের প্রত্যেককে খুঁজে বের করা হবে।

আনা হবে আইনের আওতায় ডিবির উপ-কমিশনার মশিউর রহমান একটি জাতীয় দৈনিককে বলেন, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করতে ষড়যন্ত্র করেছে। এর সঙ্গে যাদের সম্পৃক্ততা আছে, তারা যে পেশারই হোক, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা বিভিন্ন পেশার ৩০ জনকে নজরদারির মধ্যে রাখছি, তাদেরও যে কোনো সময় আইনের আওতায় আনা হবে।

এ পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের অনেকেই ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সার্টিফিকেট বাণিজ্য ও জালিয়াতির সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক না কেন, চূড়ান্ত তদন্ত শেষে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আমরা আরও মনে করি, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তোলার মূল হাতিয়ার শিক্ষা বোর্ডগুলোকে আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন।

পাশাপাশি সার্টিফিকেটের মতো মূল্যায়ন কেন্দ্রিক কর্মকান্ডকে আরও বেশি সতর্কতা ও নজরদারির আওতায় আনা দরকার। সার্টিফিকেট মাকশিট, মার্কশিট, রেজিষ্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশ পত্র তৈরিতে বিশেষ কাগজ, কালিসহ সংবেদনশীল যেসব উপাদান ব্যবহৃত হয়, সেগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতেও সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে-এটাই প্রত্যাশা।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS