ভিডিও

সেপটিক ট্যাংকে মৃত্যু ঝুঁকি

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০২৪, ০৬:১৯ বিকাল
আপডেট: এপ্রিল ২৭, ২০২৪, ১০:৫৭ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নির্মাণাধীন ভবনের সেপটিক ট্যাংক থেকে তিন শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। লক্ষ্মীপুরে সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে গিয়ে আটকা পড়া পরিচ্ছন্ন কর্মিকে বাঁচাতে গিয়ে বাড়ির মালিকও মারা গেছেন। গত রোববার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার গুনিয়াউক ইউনিয়নের গুটমা গ্রাম থেকে ফায়ার সার্ভিস কর্মিরা তাদের মরদেহ উদ্ধার করেন।

এদিকে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে গিয়ে আটকা পড়েন সুইপার। তাকে বাঁচাতে গিয়ে বাড়ির মালিক রিয়াদ হোসেনও মারা গেছেন। রোববার সন্ধ্যায় উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম রাখালিয়া গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, বিকেলে একজন সুইপার পশ্চিম রাখালিয়া এলাকার পাটোয়ারী ভিলার সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে নামে।

এ সময় সুইপার সেখানে আটকা পড়েন। এতে বাড়ির মালিক রিয়াদ তাকে উদ্ধার করতে সেপটিক ট্যাংকে নামেন। পরে ট্যাংকের ভেতরেই দুজন মারা যান। ধারণা করা হচ্ছে, ট্যাংকের ভেতরে অক্সিজেনের অভাবে তাদের মৃত্যু হয়েছে।

দেশে সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে কোনো বিজ্ঞান-ভিত্তিক পদ্ধতি ব্যবহার হচ্ছে না। যার কারণে সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে গিয়ে জমে থাকা বিষাক্ত গ্যাসে মৃত্যুর ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। যে সব শ্রমিক মারা যাচ্ছেন।  তাদের বেশির ভাগই অপ্রশিক্ষিত, নানা ধরনের গ্যাস জমে তা যে প্রাণঘাতী হতে পারে, তা  তাদের জানা নেই।

অন্যদিকে দীর্ঘদিন সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার না করায় বিস্ফোরণের ঘটনারও খবর পাওয়া যাচ্ছে। শ্রমিক মৃত্যু ঠেকাতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা থাকলেও সেটির বাস্তবায়ন নেই, নেই তদারকিও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপ্রশিক্ষিত শ্রমিক দিয়ে ট্যাংক পরিষ্কার করা বন্ধ করতে হবে। বাড়াতে হবে সচেতনতা। নীতিমালার প্রয়োগ করতে হবে।

রাজধানীর পানি সরবরাহ ও সুয়োরেজ লাইনের বিল গ্রহণ করে ঢাকা ওয়াসা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৭ সালে দেওয়া একটি নির্দেশনায় বলা হয়, সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কারে দুর্ঘটনারোধে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে সিটি করপোরেশন ওয়াসা ব্যবস্থা নেবে। অপ্রশিক্ষিত শ্রমিক নিয়ে ট্যাংক পরিষ্কার করা যাবে না।

নির্দেশনাগুলো হচ্ছে সিটি কর্পোরেশন পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ এবং ওয়াসাসমূহ সেপটিক ট্যাংকের পয়:পরিষ্কার ও ব্যবস্থাপনার জন্য উপযুক্ত শ্রমিক বাছাই পূর্বক তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদান করবে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রত্যেক শ্রমিককে একটি রেজিষ্ট্রেশন নম্বর প্রদান এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শ্রমিকদের একটি তালিকা স্ব স্ব দপ্তর- আঞ্চলিক দপ্তরে জনসাধারণের জন্য সহজলভ্য করে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করবে।

সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ এবং ওয়াসাভুক্ত এলাকার কোনো ভবন মালিক/প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। ওয়াসায় বর্ণিতভাবে তালিকাভুক্ত শ্রমিক ছাড়া অন্য কোনো শ্রমিককে সেপটিক ট্যাংকের পয়:পরিষ্কার বা ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত করতে পারবে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ট্যাংকে ভয়াবহ বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আফতাব আলী শেখ বলেন, যদি ট্যাংকের পানিতে পরিত্যাজ্য ময়লা বা জৈব পদার্থ  যায় তাহলে সেখানে ক্ষতিকারক মিথেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোঅক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড গ্যাস তৈরি হতে পারে।

এসব গ্যাস তৈরির ফলে সে জায়গায় অনেক বেশি প্রেসার তৈরি হয় এবং ওই জায়গায় অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। অক্সিজেন না থাকায় ট্যাংকের ভিতরের গ্যাস গ্রহণ করলে তা মানুষের সহ্যসীমার বাইরে চলে যায়। যার কারণে সে মারাও যেতে পারে। এছাড়া গ্যাসগুলো যদি ট্যাংকে বেশিদিন ধরে থাকে তাহলে বিস্ফোরণ ঘটার সম্ভাবনা থাকে। ট্যাংকের ভিতরের ক্ষতিকারক গ্যাস নির্ণয়ের জন্য সেন্সর পাওয়া যায়।

সেই সেন্সর ব্যবহার করে গ্যাস শনাক্ত করা যায়। এ জন্য ট্যাংক পরিষ্কারের জন্য শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতি ও প্রশিক্ষিত লোক ছাড়া এমন ট্যাংক পরিষ্কার করা উচিত নয়। প্রয়োজনে ম্যানুয়ালি এই ধরনের ট্যাংক পরিষ্কার বন্ধ করার কথাও ভাবা যেতে পারে।

আর এ বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে। মৃত্যু ঝুঁকি কমাতে সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করার আগে প্রয়োজনীয় কর্মপদ্ধতি মেনে চলা উচিত।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS