ভিডিও

কেন এত তাপদাহ

রবিউল ইসলাম রবীন

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০২৪, ১০:১৬ রাত
আপডেট: এপ্রিল ২৮, ২০২৪, ১১:২৩ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

প্রকৃতিতে এখন গ্রীষ্মকাল। বৈশাখ মাস চলমান। বৈশাখী ঝড় অথবা মানুষের কাক্সিক্ষত বৃষ্টির দেখা নেই।  চিরচেনা যে গ্রীষ্মকে আমরা চিনি, এবারে তার দেখা মিলেছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বর্ষার চরিত্রেও পরিবর্তন এসেছে। এখনকার বর্ষার বৃষ্টি-বাদলের তেমন জোর নেই। আর এখন নিয়ম মেনেও বর্ষা আসেনা। কিন্তু বৃষ্টি আসবে এমন কথা হলপ করে বলা যাবে না।

ছেলেবেলার দেখা বর্ষা আর দেখা মেলে না। কেন এ পরিবর্তন? দেশের বর্তমার আবহাওয়ার খরতাপ অনান্য বঙ্গের তুলনায় উত্তরবঙ্গে বেশি। কেন তা ? যুগের পর যুগ ধরে এ প্রবণতা চলছে। ভাবার বিষয় নয় ? ভাবছি কি তা?

ঋতুর পালাবদলে বৈশাখ এসে চলছে তীব্র দাবদাহ। জনজীবন অতিষ্ঠ গরমে। প্রকৃতির এই বৈরী আচরণের জন্য মনুষ্যসৃষ্টি অনেক কারণকেই দায়ী করা হচ্ছে। মানুষ প্রকৃতির ওপর নানাভাবে খবরদারি করছে। খালবিল, নদীনালা দখল করা হচ্ছে। পাহাড় কাটা চলছে নির্বিচারে। কৃষিজমির ওপর নির্মিত হচ্ছে ঘরবাড়ি। এভাবে নানাভাবেই চলছে প্রকৃতির ওপর অত্যাচার।

যে কারণে প্রকৃতি বৈরি হয়ে উঠছে। আমরা নিজেরাই নষ্ট করছি নিজেদের সব অর্জনকে। ফলে দেখা দিয়েছে প্রচন্ড তাপদাহ। তাপ, চাপ, বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্র স্রোত প্রভৃতি প্রাকৃতিক নিয়ামকের আবর্তে অহরহ পরিবর্তন ঘটে চলেছে এই বিশ্ব চরাচরে। প্রকট হিম, ধু ধু মরু, অগ্ন্যুৎপাত, ভূমিকম্প, হিমবাহ, উষ্ণ প্রস্রবন থেকে শুরু করে ঝড়, বৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরা সব ধরনের প্রাকৃতিক পরিস্থিতিই সেই পরিবর্তনের ফল।

ভূ-মন্ডলের এই শতধা বিবর্তন মুহূর্তের জন্যও থেমে নেই। গোটা বিশ্ব যে অণু-পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত, তার সংশ্লেষণ, বিশ্লেষণ ও প্রতিস্থাপনে হয় আবহাওয়া, নয় সমুদ্র স্রোত, নয় ভূ-গর্ভে পরিবর্তন চলছেই হরদম। আর সেই সঞ্চিত পরিবর্তন যুগে যুগে কখনো আকস্মিক, কখনো ধীর লয়ে বিশ্বের বুকে ছাপ রেখে চলেছে।

বিশ্ব মানচিত্রে ক্ষুদ্র এক ভূ-খন্ড আমাদের এই বাংলাদেশ। দেশের প্রায় মাঝখান দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা চলে যাওয়ার কারণে এ দেশ ক্রান্তিয় অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু সমুদ্র-সান্নিধ্য ও মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এ দেশের আবহাওয়া শীত, গ্রীষ্ম কোনটিই চরম হতে পারেনি। নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় আমাদের জীবনযাত্রা তুলনামূলক আরামদায়ক। কিন্তু পরিসর যতই ক্ষুদ্র হোক, প্রাকৃতিক পরিবর্তন এ দেশে ঘটছে এবং সঞ্চিত হচ্ছে।

আর এ সঞ্চিত পরিবর্তন এক সময় ছন্দপতন ঘটাতে সক্ষম। আমাদের দেশে সম্প্রতি প্রাকৃতিক পরিবর্তনের একটি আশংকা ক্রমেই স্পষ্টতর হয়ে উঠছে। সে আশংকা প্রচন্ড দাবদাহের। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের আবহাওয়া ক্রমশ মরুময় হয়ে উঠছে। ফলে এ অঞ্চলে দিনে গরমের প্রকোপ দিন দিন বেড়ে চলেছে। আবার সারা বছরের তাপমাত্রার স্কেলে দেখা যায় রাজশাহী বিভাগের উষ্ণতা ও শৈত্য উভয়ের মাত্রা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের অপেক্ষা বেশি।

আবহাওয়ার এ পরিবর্তন পরিবেশগত, যে পরিবেশের সাথে আমাদের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। সর্বত্র জ্বালানী সংকট রয়েছে। জ্বালানী হিসাবে গ্যাসের ব্যবহার গোটা অঞ্চলে পরীক্ষামূলক এবং খুবই নগণ্য মাত্রার। এতবড় অঞ্চলে গ্যাসের সরবরাহ কম থাকায় জ্বালানী হিসাবে একমাত্র গাছই চোখে পড়ছে। উত্তরবঙ্গের জমজমাট শিল্পের অন্যতম একটি হচ্ছে ভাটা শিল্প।

প্রতি মৌসুমে প্রচুর ভাটা পোড়ানো হয় যার জ্বালানী হিসাবে ব্যাপক ব্যবহার করা হয় কাঠ। নির্বিচারে গাছ কাটা হয়,কিন্তু যে হারে গাছ কাটা হয়, সে হারে গাছ লাগানো হয় না। দিন দিন পরিণত বয়সী গাছের ঘাটতি লক্ষণীয় হয়ে পড়ছে।  ইদানিংকালের খরা, বায়ুর রুক্ষ্মতা ও মরুময়তার কারণ হিসাবে এই বৃক্ষশূন্যতাকেও চিহ্নিত করা হয়।

প্রকৃতির শিকল বন্ধন প্রক্রিয়ার কারণে আবহাওয়ার বৈরিতার ক্রমাবনতি ঘটার সম্ভবনা রয়েছে। এক দিকে গাছ কমে যাওয়ার কারণে জলীয়বাষ্পের স্বল্পতা দেখা দিচ্ছে, অন্যদিকে পানির প্রসারতা সংকুচিত হয়ে আসার কারণেও জলীয়বাষ্প কমে আসছে। এতে অনাবৃষ্টি এবং খরার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এভাবে এলাকার লবণাক্ততা বাড়ছে এবং অনাবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট রুক্ষ্মতায় উদ্ভিদ শ্রেণির স্বাভাবিক প্রকাশ ব্যাহত হচ্ছে। লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে ভারসাম্য রক্ষার জন্য পরিবেশকে তা মেনে নিয়ে আচরণ পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এ ভাবে একের আচরণ অন্যে এবং অন্যের আচরণ আর অন্য বহনের মাধ্যমেই প্রকৃতির শিকল-বদ্ধতা বজায় থাকে।

ওজন স্তরের ফাটলের কারণে বিশ্ববাসী আজ তটস্থ। এমনকি ৭৬ বছর পর পর যে হ্যালির ধুমকেতু লক্ষ কোটি মাইল দূরে দেখা দেয়; অকল্যাণ সম্ভাবনাময় মানুষ আড়ষ্ট হয় তাতেও। আরামপ্রিয় মানুষের বহু যুগের জীবন প্রণালী সুখের সন্ধানে ক্ষয়ে গেছে।

আবাসকে সব দিক থেকে সূচারু কামনা করার সহজাত প্রবৃত্তির কারণে এর মধ্যে কোন ক্রটি দেখা দিতে শুরু করলেই শান্তি ভঙ্গের শঙ্কায় মানুষ ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু প্রকৃতি যে অমোঘ সত্যের অনুসারী। মানুষকে দিন দিন তাই মেনে নিতে হয়। কিন্তু সব কিছুই যখন সেবা চায়, সাহায্য চায়, তেমনি প্রকৃতিকেও আমাদের সেবা করতে, সহানুভূতি দেখাতে হবে।

তাই পর্যাপ্ত বৃক্ষ রোপণ করতে হবে। বৃক্ষ চুরি করা যাবে না। প্রকৃতির বন্ধু হতে হবে। প্রার্থনা করতে হবে সমস্ত বৃক্ষের প্রতি,  সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির বস্তুর প্রতি। প্রার্থনা করতে হবে ধরণীর জন্য।


লেখক : সহকারী অধ্যাপক-কলামিষ্ট

 



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS