ভিডিও

নতুন শ্রমবাজার খুঁজতে হবে

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৯, ২০২৪, ০৬:৩০ বিকাল
আপডেট: এপ্রিল ২৯, ২০২৪, ০৬:৩০ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

বিশ্বের ছোট বড় মিলিয়ে ১৬৮ দেশে বাংলাদেশিদের শ্রমবাজারের কথা বলা হয়। কিন্তু এর মধ্যে বেশির ভাগ দেশেই চাহিদা না থাকা ও অন্যান্য কারণে নিয়মিত কর্মি পাঠানো সম্ভব হয় না। মূলত হাতে গোনা ছয়টি দেশেই কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়। এর মধ্যে আক্ষরিক অর্থে সৌদি আরবই এখন বাংলাদেশের জন্য বড় শ্রমবাজার হয়ে রয়েছে।

এর বাইরে মাঝারি মানের চাহিদা রয়েছে ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, কাতার ও জর্ডানে। অল্প কিছু কর্মজীবী যাচ্ছেন মরিশাস, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি ও লেবাননে। বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয়ের টাকা ধারা বজায় রাখতে মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার ধরে রাখা এবং সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিতে হবে।

তবে উদ্বেগের খবর হচ্ছে ওমানের পর বাংলাদেশি কর্মিদের জন্য বন্ধ হচ্ছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে পত্র-পত্রিকার খবরে জানা গেছে ওমানের পর বাংলাদেশি কর্মিদের জন্য বন্ধ হচ্ছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার।

যে সব কর্মি এর মধ্যে ভিসা পেয়েছেন বা পাবেন, তাদের আগামী ৩১মের মধ্যে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে হবে। এরপর বাংলাদেশ থেকে আর কোনো কর্মি মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে পারবেন না। কর্মিদের জন্য ভিসার আবেদনের সর্বশেষ সময় ৩১ মার্চ।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, মালয়েশিয়ার শ্রম বাজারে কাজ করতে যাওয়া বেশির ভাগ শ্রমিক প্রতারণার শিকার হয়েছেন। মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও কাজ মেলেনি। এ ছাড়া নানা ধরনের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কর্মিরা।

সেখানকার নিয়োগ কর্তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি কর্মিদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। গত ২০ মার্চ এ সংক্রান্ত বাংলাদেশ সরকার বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয় বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

এর আগে গত ৩১ অক্টোবর একই ধরনের অভিযোগের ভিত্তিতে বন্ধ হয়েছে ওমানের শ্রম বাজার। অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের মতে, ওমানের পর মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার বন্ধ হয়ে গেলে বড় ধরনের ক্ষতির মধ্যে পড়বে জনশক্তি খাত। এই ক্ষতি থেকে উদ্ধার পেতে হলে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রাণভোমরা হিসেবে বিবেচিত হয় প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আয়। গত অর্ধ শতাব্দীতে বাংলাদেশ যে নজরকাড়া উচ্চতায় উপনীত হয়েছে তার পিছনেও রয়েছে প্রবাস থেকে আসা শ্রমজীবীদের অবদান। বাংলাদেশের কর্মিদের জন্য নতুন নতুন শ্রম বাজারের কথা বলা হলেও তা আসলে প্রতিশ্রুতিতেই সীমাবদ্ধ।

প্রতিবছর কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য তৈরি হচ্ছে দক্ষ ও অদক্ষ নতুন জনশক্তি। তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাংলাদেশে নেই। স্বাভাবিকভাবেই বিদেশে জনশক্তি রপ্তানির কথা ভাবতে হবে। জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য অনুযায়ী প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ৮-১০ লাখ জনশক্তি বিদেশে পাঠানো সম্ভব।

এই বিপুল জনশক্তি দেশের বাইরে পাঠানো গেলে বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পাশাপাশি দেশে বেকারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমানো যেত। কিন্তু বিদেশে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

তারপরও আন্তর্জাতিক বাজার ধরে রাখতে পারত বাংলাদেশ। সময়োপযোগী ব্যবস্থা না নেওয়াতেই আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বাংলাদেশ দূরে সরে যাচ্ছে বলে অনেকের ধারণা।

বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয়ের ধারা বজায় রাখতে মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার উন্মোচনের উদ্যোগ নিতে হবে। মালয়েশিয়ার দিক থেকে যেসব বিধি নিষেধ আনা হচ্ছে-তা নিরসনে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক পর্যায়ে আরও সক্রিয় হওয়ার দরকার আছে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার হাতছাড়া মানে আমাদের বিশাল ক্ষতি।

পাশাপাশি ইউরোপীয় দেশগুলোতে শ্রমবাজার খোঁজার দিকেও নজর দিতে হবে। ব্রাজিল, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনার মতো দেশগুলোর কথাও মনে রাখতে হবে সচেতনভাবে। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে জমি লিজ নিয়ে কৃষিপণ্য ফলানো যেতে পারে। তাতেও লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।

সঠিক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ যেমন নতুন শ্রমবাজারে প্রবেশের জন্য আবশ্যক, তেমনি পুরনো বাজার ধরে রাখতেও ব্যবস্থা নিতে হবে। যেসব দেশের দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সেসব দেশে নতুন করে কর্মি পাঠানোর উদ্যোগ নিতে হবে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS