ভিডিও

বজ্রপাতের অপঘাত

প্রকাশিত: মে ০৪, ২০২৪, ০৭:০৮ বিকাল
আপডেট: মে ০৪, ২০২৪, ০৭:০৮ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

বজ্রপাতে বিশ্বে প্রতি বছর যত মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে, তার প্রায় অর্ধেক ঘটছে বাংলাদেশে গণমাধ্যমে এমন তথ্য আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। খবরে প্রকাশ, গত বৃহস্পতিবার তীব্র ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে তুমুল বজ্রপাতে পাঁচ জেলায় অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে কক্সবাজার রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, কুমিল্লা ও সিলেটে।

স্বীকার করতে হবে, বৈশাখ -জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রাকৃতিক চক্রের কারণেই বজ্রসহ ঝড়-বৃষ্টিপাত এবং বজ্রপাতে অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু আমাদের দেশে বিরল নয়। উষ্ণ বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে আসা ‘নতুন মেঘ’ যখন বঙ্গীয় ব-দ্বীপে এসে হিমালয়ের হিমেল বাতাসের সঙ্গে ঘর্ষণের শিকার হয়, তখন প্রাকৃতিক কারণেই বজ্রপাত হতে পারে।

আষাঢ়-শ্রাবণের ঘনঘোর বর্ষায় ক্রমেই প্রশমিত হয় বাতাস ও  মেঘের বাগড়া। কিন্তু এখন শোনা যাচ্ছে, প্রচন্ড দাবদাহের পর স্বস্তির বৃষ্টিতে সঙ্গে করে আনছে অস্বস্তিকর বজ্রপাত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বজ্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে দেখছি আমরা। পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ, গত এগার বছরে বজ্রপাতে মোট ২ হাজার ৮০০মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

এটা সত্য, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বজ্রপাত বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। একই সঙ্গে মৃত্যুর হারও বেড়েছে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণেই এমন অস্বাভাবিক বজ্রপাত হচ্ছে মর্মে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। বাতাসের মাধ্যমে ঘন কালো মেঘ এবং মাটিতে থাকা নেগেটিভ ও পজেটিভ চার্জে পরিবাহী হওয়া, বনাঞ্চল উজাড় করা, জলবায়ুর পরিবর্তন, জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি, গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন বৃদ্ধিকে বজ্রপাতের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা।

বজ্রপাত থেকে বাঁচার সবচেয়ে বড় উপায় হলো সচেতনতা। যখনই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে মেঘের গর্জন হবে, তখন নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে হবে। আমাদের দেশের মানুষ বজ্রপাতের সময় মাঠের কাজে যায়, নদীতে মাছ ধরতে যায়, গরু আনতে মাঠে যায় আবার বাচ্চারা খেলতেও যায়। এটা মোটেও করা যাবে না। বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায়  ২০১৬ সালে সরকার বজ্রপাতকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর থেকে বজ্রপাত রোধে নেওয়া হয় বিশেষ পরিকল্পনা ও সতর্কীকরণ কর্মসূচি। কিন্তু মৃত্যুর মিছিল তাতে থামানো যায়নি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বজ্রপাতে মৃত্যুর মিছিল লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।

খবরে প্রকাশ, দেশে প্রতি বছর গড়ে ২ হাজার ৪০০ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। আগে তালগাছ বজ্রপাত ঠেকাত। এখন তালগাছও উঁচু গাছ নেই বললেই চলে। বিশ্বের বছরে বজ্রপাতে যত মানুষ মারা যাচ্ছে, তার অর্ধেকই বাংলাদেশে- এই তথ্য অত্যন্ত আশংকাজনক। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে বাংলাদেশে দশমিক ৭৪ শতাংশ তাপমাত্রা বেড়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্যই বাড়ছে বজ্রপাত।

বজ্রপাতে প্রাণহানি কমাতে তালগাছ লাগানো একটা ভালো সমাধান। তবে এটা বেশ সময় সাপেক্ষ ও দীর্ঘমেয়াদী ব্যাপার। প্রযুক্তিগত সহায়তার কথা এ ক্ষেত্রে ভাবা যেতে পারে। যেহেতু তালগাছ  বড় হতে সময় লাগে, সেহেতু দ্রুত লম্বা হয় এমন বড় গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিতে হবে। পৃথিবীর উন্নত দেশসমূহে বজ্রপাতের আগাম সতর্কবার্তা পেতে যেসব সেনসরিং ডিভাইস পাওয়া যায় সেগুলি আমাদের দেশে ব্যবহার করা যেতে পারে।

মনে রাখতে হবে, দুর্যোগকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই- কিন্তু যথাযথ উদ্যোগ নিলে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। প্রযুক্তিগত সহায়তা আরও বাড়ানোর কথা আমরা ভাবতে পারি। ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড সহ পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো বজ্রপাত সম্পর্কে জানতে প্রযুক্তি নির্ভর লাইটেনিং ডিটেকটিভ সেন্সর কাজে লাগাচ্ছে।

বজ্রপাত যেহেতু প্রাকৃতিক এটা হবেই। তবে কম অথবা বেশি। তবে আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে আমরা যেন উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে পারি।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS