ভিডিও

সংঘাতহীন নির্বাচন হোক

প্রকাশিত: মে ১৪, ২০২৪, ০৭:৩১ বিকাল
আপডেট: মে ১৪, ২০২৪, ০৭:৩১ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

বিচ্ছিন্ন সহিংসতা, গ্রেফতার, প্রার্থীদের ভোট বর্জন, জাল ভোট প্রদান, প্রিসাইডিং অফিসার গ্রেফতার, এজেন্টের কারাদন্ড, দুটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিতের মধ্য দিয়ে দেশের ১৩৯ উপজেলায় প্রথম দফার ভোট গ্রহণ বুধবার সম্পন্ন হয়েছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।

এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হলেও বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ছিল হাতে গোনা। যদিও ভোট গ্রহণ শেষে বিকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘ভোটের হার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে হতে পারে।

বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। বুধবার বিকালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এ দাবি করেন। তিনি বলেন, প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বৃষ্টি ও ধান কাটার মৌসুম হওয়ার কারণে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে।

পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ চলাকালে বুধবার সকালে শরীয়তপুরে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে ৫০টি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে উভয় পক্ষের ১০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

মুন্সীগঞ্জে এক পুলিশকে মারধরের ছবি তোলা ও ভিডিও ধারণ করায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছেন এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় কয়েকজন সাংবাদিককে অবরুদ্ধ করে রাখাসহ মোবাইল ভাঙচুর করা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।

এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছয় রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ। বগুড়ায় বাইরে থেকে ব্যালটে সিল দিয়ে তা ভোট বাক্সে ঢোকানোর সময় প্রিজাইডিং অফিসার আটক ও কয়েকজন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটেছে। এখানে এক প্রার্থীর এজেন্টকে এক বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। রাজশাহীতে জাল ভোটের ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় একজন এবং ঠাকুরগাঁওয়ে জাল ভোট দিতে গিয়ে এক যুবক আটক হয়েছেন।

সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে অর্থসহ ইউপি চেয়ারম্যানকে আটক করে পুলিশ। গাইবান্ধার ফুলছড়ি ও কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের দুই প্রার্থী ভোট বর্জন করেন। সুনামগঞ্জের শাল্লায় দুই প্রার্থীর কর্মীদের সংঘর্ষে আধা ঘন্টা ভোট বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া সংঘর্ষ ও জালভোটের কারণে দুটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করেছে ইসি। এ ছাড়াও নানা কেন্দ্রে অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।

তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জাল ভোট দেওয়া ও ভোটারদের প্ররোচিত করার দায়ে চারজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এভাবে সারা দেশেই বিভিন্ন ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে জালভোট প্রদান, কেন্দ্রের ওপর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষ ঘটেছে।

আমরা জানি, এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো নির্বাচন বর্জন করেছে। ভোটের মাঠে ছিল আওয়ামী লীগেরই একাধিক প্রার্থী। আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে নির্দেশ ছিল দলীয় এমপি মন্ত্রীর আত্মীয় স্বজনরা যেন নির্বাচনে অংশ না নেয়, কিন্তু দলের এ নির্দেশ সামান্যই মান্য হয়েছে।

মন্ত্রী-এমপির আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে এবং যথারীতি নির্বাচিত হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আবারও ভোটার বিহীন নির্বাচন হচ্ছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য বড় হুমকি। নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে মানুষের আস্থা কমে গেছে।

তারা বলছেন, ভোট দিয়ে কী হবে-ফলাফল আগেই নির্ধারিত থাকে। এ জন্য বিরোধী দল আর নির্বাচনে অংশ নেয় না। ফলে নির্বাচনও আর প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয় না। সারা দিন ভোটকেন্দ্র ফাঁকা পড়ে থাকলেও সন্ধ্যার পর ফল ঘোষণার সময় অনেক বাড়িয়ে ভোটার উপস্থিতির হার দেখানো হয়। এটাও জনগণকে আস্থা হারাতে ভূমিকা রেখেছে।

আমাদের দেশে প্রার্থীদের আচরণ বিধি ভঙ্গ করার মতো ঘটনা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। নির্বাচনের আগে এবং নির্বাচনের দিন প্রচার-প্রচারণা নিয়মের লংঘন হয় সুস্পষ্ট ভাবে, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু তেমন কঠোর আইনের প্রয়োগ হয় না বিধায়, এ ধরনের অপরাধ প্রতি নির্বাচনেই ঘটে থাকে।

এখানে দলীয় বা সরকারি প্রভাব দারুণভাবে কাজ করে। তাই নির্বাচন কমিশনও স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে না। নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে দিতে হবে। গণতন্ত্র শক্তিশালী করার জন্য তাদের জবাবদিহিতা আরও শক্তিশালী করতে হবে।

তাহলে নির্বাচন কমিশনের প্রতি ভোটারদের আস্থাই শুধু বাড়বে তা নয়, কমিশন কঠোর হলে নির্বাচনও ভালো হবে-জনগণের আস্থা ফিরে আসবে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS