ভিডিও

ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব

প্রকাশিত: মে ১৭, ২০২৪, ১১:০৫ রাত
আপডেট: মে ১৮, ২০২৪, ০১:১৫ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

নতুন বিপদ হয়ে উঠতে পারে ডেঙ্গু বা এডিস মশার আগ্রাসন। বিশ্বে ডেঙ্গু সংক্রমণের শীর্ষে থাকা ব্রাজিলকেও ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। এ রোগ ক্রমেই বাড়তে থাকায় মানুষ দেশের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ, ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু না হলেও এবার বেশ আগে ভাগেই রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে।

গত বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার দ্বিগুণ। ২০২৩ সালের প্রথম চার মাস অর্থাৎ এপ্রিল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয় ১১ জনের। আর এবার মারা গেছেন ২৪ জন। এ বছর ১৩মে পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ৪৯৬ জন। আর মারা গেছে ২৯ জন। ২০২৩ সালে দেশের ২৪ বছরের ডেঙ্গুর ইতিহাসের সব রেকর্ড ভেঙে যায়।

জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন। আর মারা যান এক হাজার ৭০৫ জন। বিষয়টি উদ্বেগজনক। আগামীতে যেন ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি না হয়, সে জন্য এখন থেকেই এডিস মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির উন্নতির জন্য সবাইকেই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।

দেশে আবহাওয়া, তাপমাত্রা ও আর্দ্রতায় ডেঙ্গুর ধরন ও উপসর্গ বদলেছে। জটিল ডেঙ্গু রোগীদের মাল্টিপল অর্গান ফেইলিউর হচ্ছে। ফলে ৯০ শতাংশ রোগীর প্রাণ যাচ্ছে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। দিন দিন এ পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।

ডেঙ্গুর বৈশিষ্ট্য বদলের কারণে ডায়াগনসিসের তাৎক্ষণিক ফলাফলে বিভ্রান্ত হচ্ছেন রোগী ও তার স্বজন-ডেঙ্গু টেস্টে নেগেটিভ ফল, উপসর্গও ডেঙ্গুর মতো নয়, কিন্তু হঠাৎ রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে। অনেক ক্ষেত্রে রোগী কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ শরীরে রক্তের জলীয় অংশ কমে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এতে রোগী শকে চলে যাচ্ছেন।

কেন এমনটি হচ্ছে, তা বিস্তারিত গবেষণা হওয়া দরকার। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, ডেঙ্গুতে শক সিনড্রোমে চলে যাওয়া রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো দরকার। এ বিষয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। বস্তুত হাসপাতালে যেতে দেরি হওয়ার কারণেই অনেক রোগী বিপদের মধ্যে পড়েন।

এডিস মশা ডেঙ্গুর জীবাণু বহন করে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে অযৌক্তিক ভীতিতে আতঙ্খিত না হয়ে জ্বর যাতে সহনীয় পর্যায়ে থাকে সে চেষ্টা করতে হবে। পরিমিত পানি পানে উদ্যোগী হতে হবে। অসুস্থ বোধ হলে হাসপাতালে ভর্তি বা চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হতে হবে।

এডিস মশা বন জঙ্গলে নয় মানুষের বাসগৃহেই আস্তানা গাড়ে। এ ব্যাপারে সবাই সতর্ক হলে এ মশার আগ্রাসন একেবারে কমিয়ে দেওয়াও সম্ভব। মনে রাখতে হবে ডেঙ্গু এখন শুধু শহর কেন্দ্রিক রোগ নয়, গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে সচেতনতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগ নিতে হবে। এডিস মশার প্রজনন ধ্বংসে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হতে হবে। প্রশ্ন আছে মশা নিধনে ব্যবহৃত ওষুধের কার্যকারিতা নিয়েও।

ডেঙ্গুর কারণ ও প্রতিকারের বিষয়টি এতটাই সুবিদিত যে, এ ব্যাপারে বিশদ বলার অবকাশ নেই বললেই চলে। মূল কাজটি হলো, ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশা নির্মূল করতে হবে এবং কাজটি করতে হবে সম্মিলিত ভাবে। কারণ এডিস মশার অভয়াশ্রম হলো আবাসিক ভবন ও অফিস-আদালতের নানা স্থানে জমে থাকা স্বচ্ছ পানি। অতএব, এ মশা নির্মূলে জনসম্পৃক্ততা ও জনসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।

ইতিপূর্বে ডেঙ্গুর আগ্রাসন যে সফলভাবে রুখে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল, তার মূলেও ছিল সমন্বিত উদ্যোগ। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে অনতিবিলম্বে সর্বস্তরের জনগণ ও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থাকে সম্পৃক্ত করে সমন্বিত অভিযান শুরু করতে হবে।

এই ক্ষেত্রে শৈথিল্য বিপজ্জনক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। ডেঙ্গুর জ্বর থেকে রেহাই পেতে হলে এডিস মশার বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করতে হবে। আঘাত হানতে হবে এডিসের আস্তানায়। এ মশার প্রজনন থামিয়ে দিতে হবে। সেদিকেই সবাই নজর দেবেন এমনটিই কাম্য।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS